মাল্টি লেভেল মার্কেটিং হালাল না হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, এতে শরী‘আত নিষিদ্ধ সুদের সাদৃশ্য ও সন্দেহ বিদ্যমান। ইসলামি আইন অনুযায়ী যে সকল কারবারে সুদের সাদৃশ্য ও সন্দেহ রয়েছে তা না জায়িয। ইসলামি আইনবিদগণ এ কারণে বহু কারবারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কারণ রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন,
«الْحَلالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ ، فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ»
‘‘হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম সুস্পষ্ট। এতদুভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহ ও সাদৃশ্য বিষয় যা অধিকাংশ মানুষই জানে না। কাজেই যে সাদৃশ্য ও সন্দেহ থেকে বেঁচে থাকে সে নিজের দ্বীন ও ইজ্জত রক্ষা করল। আর তাতে জড়ালো সে হারামে নিপতিত হলো’’ [সহীহ বুখারী : ৫২]।
অপর এক হাদীসে এসেছে,
«دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَالا يَرِيبُكَ»
‘‘তোমাকে যা সন্দেহে ফেলে তা ছেড়ে তুমি নিশ্চিত জিনিসের দিকে ধাবিত হও।’’ [সুনান তিরমিযী : ২৫১৮, হাদীসটি সহীহ]
ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,
إِنَّ آخِرَ مَا نَزَلَ مِنْ الْقُرْآنِ آيَةُ الرِّبَا وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُبِضَ وَلَمْ يُفَسِّرْهَا فَدَعُوا الرِّبَا وَالرِّيبَةَ
‘‘কুরআনের সর্বশেষ আয়াত হচ্ছে রিবা (সুদ)-এর আয়াত। রাসূলুল্লাহ স.-এর মৃত্যু হয়ে গিয়েছে কিন্তু তিনি সুদের আয়াতের ব্যাখ্যা দেন নি। কাজেই তোমরা সুদ এবং এমন জিনিস যাতে সুদের সন্দেহ রয়েছে তা বর্জন করো’’ [মিশকাত : ২৮৩০, সুনান ইবন মাজাহ : ২৪৭, হাদীসটি সহীহ]।
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘোষণা হলো, যেহেতু রাসূলুল্লাহ স. রিবার আয়াতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে যান নি সেহেতু যাতে সরাসরি রিবা রয়েছে তাতো বর্জন করতেই হবে পাশাপাশি যাতে রিবার সন্দেহ ও সাদৃশ্য রয়েছে তাও বর্জন করতে হবে।
মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এ সুদের সাদৃশ্য-এর বিবরণ এভাবে দেয়া যায় যে, এসব কোম্পানিগুলোতে ডিস্ট্রিবিউটররা পণ্য ক্রয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ হয় কমিশন পাওয়ার আশায়। এতে বুঝা যায়, সে পণ্য ক্রয় বাবদ যে টাকাটি দিয়েছে তা শুধু ঐ পণ্যের মূল্য হিসেবেই দেইনি বরং তা দেয়ার পেছনে তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ডাউনলাইনদের কাছ থেকে কমিশন ভোগ করা। পণ্যের মূল্য প্রদানের পাশাপশি কমিশনের যে সুযোগের আশায় সে এ কারবারটি করছে তাই ইসলামি শরী‘আতের পরিভাষায় সুদের সাদৃশ্য।
কারও নেট চলমান থাকার কারণে সে নির্দিষ্ট টাকার মোকাবেলায় কমিশন পাওয়ার বিষয়টি যেমনি সুদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তেমনি যার নেট একেবারেই অগ্রসর হয় নি তার বিষয়টিও সুদের সাদৃশ্য থেকে মুক্ত নয়। কারণ সে তো টাকা দিয়েছিল পণ্য এবং ডিস্ট্রিবিউটর হয়ে কমিশন ভোগ করার জন্য। অথচ ডিস্ট্রিবিউটরের কোনো সুবিধাই সে পায় নি। তথা কিছু টাকা বিনিময়ের অতিরিক্ত থেকেই যাচ্ছে যা ইসলামি আইনের দৃষ্টিতে সুদের সাদৃশ্য বা সন্দেহমূলক সুদ।
আর তাছাড়া উপরে আমরা পদ্ধতিগত দিকের প্রথম যে কারণ ‘শ্রমবিহীন বিনিময় এবং বিনিময়বিহীন শ্রম’ উল্লেখ করেছি তাও ইসলামী শরী‘আতের দৃষ্টিতে সন্দেহমূলক সুদের আওতাভুক্ত। কারণ সেখানে শ্রম না দিয়ে বিনিময় নেয়াটি যেমন সুদ সাদৃশ্য তেমনি শ্রম নিয়ে বিনিময় না দেয়াটিও সুদ সাদৃশ্য।