সুন্নাত ও বিদআতের অনুসারীর অবস্থান

সুন্নাতের অনুসারীর মর্যাদা

প্রকৃত সুন্নাতের অনুসারী ব্যক্তি সজিব, সতেজ ও আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী হয়। যা আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। এটা ঈমানদারদের একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য। কেননা সজিব ও আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান, বুদ্ধি ও হেদায়াত প্রাপ্ত। তারা তাওহীদে বিশ্বাসী ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তাওফিক লাভ করে থাকে।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করে বলতেন, আল্লাহ্ যেন তাঁর অন্তরে, কানে, চোখে, জিহবায়, উপরে-নিচে, ডানে-বামে, সামনে-পিছনে নূর বা আলো দান করেন। তাঁর ব্যক্তি সত্ত্বাকেও যেন নূরের দ্বারা আলোকিত করেন। তাঁর গোস্ত, হাঁড় ও রক্তের মধ্যেও যেন নূর দান করেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে তাঁর নিজ সত্ত্বা, সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ অনুভূতি এবং ষষ্ঠ দিকের জন্য আল্লাহর নিকট নূর প্রার্থনা করেছেন।

প্রত্যেক মুমিনের ভিতর-বাহির, কথা-কাজ ইত্যাদি সবই সমুজ্জ্বল। আর এ আলো মুমিন ব্যক্তির জন্য কিয়ামতের দিন তার ঈমানী শক্তির দৃঢ়তা ও দুর্বলতার উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হবে। এ আলো তার সামনে পিছনে চলতে থাকবে। সেদিন কারো কারো নূরের জ্যোতি হবে সূর্যের জ্যোতির ন্যায়, আবার কারো চন্দ্রের জ্যোতির ন্যায়, আবার কারো কারো জ্যোতি হবে লম্বা খেজুর গাছের ন্যায়, কারো জ্যোতি হবে দন্ডায়মান মানুষের ন্যায়, এমনকি মুমিনদের কাউকে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের মাথায় নূর দেয়া হবে। তা  একবার জ্বলবে আবার নিভে যাবে। মোট কথা দুনিয়াতে যে যতটুকু ঈমানের শক্তিতে বলিয়ান ছিল কিয়ামতের দিন তাকে ততটুকু ঈমানের জ্যোতি দেয়া হবে।[1]

সুন্নাতের অনুসারীদের বৈশিষ্ট্য

সুন্নাতের অনুসারীদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে

১. কুরআন ও হাদীস এমন ভাবে আঁকড়ে ধরা যেমন ভাবে মাড়ির দাঁত দিয়ে কোন কিছু আঁকড়ে ধরা হয়, যা সহজে ছুটে না।

২. দ্বীনের মৌলিক বিধানাবলী ও তার শাখা-প্রশাখার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীস অনুসরণ করা।

৩. সুন্নাতের অনুসারীদের ভালবাসা ও বিদআতের অনুসারীদের ঘৃণা করা।

৪. সুন্নাতের অনুসারীরা সংখ্যায় কম হলেও নিজেকে একাকী না ভাবা। কেননা সততা মুমিনের হারানো সম্পদ। সে সত্যকে গ্রহণ করে যদিও মানুষ তার বিরোধিতা করে।

৫. কুরআন ও হাদীসের আদর্শ বাস্তবায়নের নিমিত্তে কথা ও কাজে সত্যাশ্রয়ী হওয়া।

৬. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেই একমাত্র আদর্শের মাপকাঠি হিসেবে মেনে নেয়া। কারণ তার চরিত্রই হচ্ছে আল-কুরআনের প্রতিচ্ছবি।[2]

বিদআতের অনুসারীদের অবস্থান

বিদআতের অনুসারীরা মৃত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদয়ের অধিকারী। আল্লাহ্ তা‘আলা অবিশ্বাসীকে মৃত ও অন্ধকারে নিমজ্জিত ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মৃত ও অন্ধকার হৃদয় সম্পন্ন ব্যক্তি আল্লাহ ও দ্বীনের পরিচয় সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞ। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের অবস্থা বর্ণনায় বলেন : এরা জীবিত নয়, বরং মৃত এবং এরা অন্ধকারে এমনভাবে নিমজ্জিত যা থেকে বের হতে পারবে না।

বিদআতের অন্ধকার তাদের গোটা জীবনকে আচ্ছন্ন করে রাখার কারণে তাদের অন্তর হক বা সত্যকে বাতিল হিসেবে আর বাতিলকে হক হিসেবে গণ্য করে। তাদের যাবতীয় কথা, কাজ এমনকি তাদের গোটা জীবনটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন। পরিশেষে তাদের কবরও হবে অন্ধকারময়।

যখন কিয়ামতের দিন পুলসিরাত পার হওয়ার জন্য মানুষের মাঝে নূর বন্টন করা হবে, তখনও তাদের অন্ধকারের মধ্যেই রাখা হবে। এ নূর তারা পাবে না। তাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম।   

আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখান। আর যার কল্যাণ কামনা করেন না। তাকে অন্ধকারের মধ্যেই রেখে দেন।[3]

[1] ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া - ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৮
[2] আকীদাতুস সালফ ও আসহাবুল হাদীস- ইমাম আবু উসমান ইসমাঈল ইবনে আব্দুর রহমান : ২৬৪পৃ:
[3] ইজতিমাউল জুয়ুশিল ইসলামিয়াহ আলা গাজওয়াল মুআত্তালা ওয়াল জাহমিয়া - ইবনে কাইয়্যিম (র): ২/৩৮-৪১