ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রথম দিন বা সপ্তম দিন নব জাতকের নাম রাখা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আজ রাতে আমার একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। আমার পিতা ইবারাহীমের নামানুসারে তার নামকরণ করেছি ইবরাহীম।[1]
ইমাম আবু দাউদ, আহমদ, দারেমি, ইবন হিব্বান ও আহমদের বর্ণনাকৃত হাদীসের ভাষ্য মতে নবজাতকের নাম সুন্দর রাখা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নিজ নামে ও তোমাদের বাপ-দাদার নামে আহ্বান করা হবে। অতএব, তোমরা তোমাদের নাম সুন্দর করে নাও।
মুসলিমের হাদীসে রয়েছে, আল্লাহর পছন্দনীয় ও সর্বোত্তম নাম হচ্ছে, আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। আবু দাউদের হাদীসে রয়েছে, সবচেয়ে সত্য নাম হচ্ছে, হারিস ও হাম্মাম। আর সবচেয়ে ঘৃণিত নাম হচ্ছে, হারব ও মুররাহ।
হারিস ও হাম্মাম-কে সবচেয়ে সত্য বলা হয়েছে এ হিসেবে যে, এ নামগুলোর অর্থের সঙ্গে মানুষের কর্ম ও প্রকৃতির পুরোপুরি মিল রয়েছে। কারণ, হারিস শব্দের অর্থ কর্মজীবি ও উপার্জনকারী আর হাম্মাম শব্দের অর্থ আকাঙ্ক্ষী ও ইচ্ছা পোষণকারী। প্রত্যেক মানুষের প্রকৃতির মধ্যে এ স্বভাবগুলো পুরোপুরি বিদ্যমান। তাই এগুলো সবচেয়ে সত্য নাম। পক্ষান্তরে হারব শব্দের অর্থ যুদ্ধ-বিগ্রহ আর মুররাহ শব্দের অর্থ তিক্ততা-বিষাক্ততা। যেহেতু এসব শব্দ থেকে অশুভ লক্ষণ বুঝে আসে তাই এসব নামকে সবচেয়ে ঘৃণিত নাম বলা হয়েছে।
এর দ্বারা বুঝে আসে যে, যার অর্থ ভালো ও সুন্দর, এমন শব্দ দ্বারা নাম রাখা মুস্তাহাব। যেমন, নবীদের নাম, আল্লাহর সাথে দাসত্ব যুগ করে দেওয়া নাম এবং যেসব শব্দের অর্থ ভালো সেসব শব্দের নাম।
তবে যেসব শব্দের মধ্যে বড়ত্ব, অহমিকা, অহংকার ও আত্মপ্রশংসার অর্থ রয়েছে, সেসব শব্দের মাধ্যমে নাম রাখা ঠিক নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَلَا تُزَكُّوٓاْ أَنفُسَكُمۡۖ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَنِ ٱتَّقَىٰٓ﴾ [النجم: ٣٢]
“কাজেই তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। কে তাকওয়া অবলম্বন করেছে, সে সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩২]
অতএব, এমন শব্দ দ্বারা নাম রাখা ঠিক নয়, যার মধ্যে আত্মপ্রসংশা রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বাচ্চাদের, রাবাহ ও নাজীহ শব্দের মাধ্যমে নাম রাখতে বারণ করেছেন। সহীহ মুসলিমে সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা বাচ্চাদের ইয়াসার, রাবাহ, নাজিহ ও আফলাহ নাম রেখ না। (রাবাহ শব্দের অর্থ লাভ, নাজিহ শব্দের অর্থ শুদ্ধ-সুস্থ, ইয়াসার শব্দের অর্থ সহজতা ও আফলাহ শব্দের অর্থ সফলতা) কারণ, যখন তুমি এ নামে কাউকে ডাকবে আর সে ওখানে উপস্থিত না থাকলে উত্তর আসবে নেই।
এ থেকে কুলক্ষণ বুঝে আসে। অর্থাৎ ওখানে লাভ নেই, যা আছে ক্ষতি আর ক্ষতি ইত্যাদি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাররাহ নাম রাখতেও নিষেধ করেছেন। (যার অর্থ পূণ্যবান নারী) যয়নব বিনতে আবু সালামা বলেন, তার নাম ছিল বাররাহ বিনতে আবু সালামা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজদেরকে নিষ্পাপ ঘোষণা কর না। আল্লাহই ভালো জানেন কে নিষ্পাপ আর কে পূণ্যবান। তারা বলল, আমরা তাকে কী নামে ডাকব? তিনি বললেন, যয়নাব বলে ডাক।[2]
এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোনো কোনো স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছেন। যেমন যয়নাব বিনতে জাহাশের নাম, জয়নাব বিনতে উম্মে সালামার নাম এবং জুয়াইরিয়া বিনতে হারেসের নাম। মুসলিমের বর্ণনা মতে তাদের প্রত্যেকের নাম ছিল বাররাহ।
আল্লাহর নামে নামকরণ করাও হারাম। যেমন, খালেক, রহমান, কুদ্দুস, আওয়াল, আখের, যাহির, বাতেন ইত্যাদি।
আল্লাহর এমন সব নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখাও নিষেধ, যার মাধ্যমে বড়ত্ব বা অহমিকার প্রকাশ পায়। যেমন, নুরুল্লাহ, নুরুল ইলাহ ইত্যাদি। এসব নামের মাধ্যমে নিজের পূণ্যতা ও আত্মপ্রশংসার প্রকাশ ঘটে অথচ বাস্তব তার বিপরীতও হতে পারে।
ইয়াসিন শব্দ দ্বারাও নাম রাখা নিষেধ। কারণ, এটা কুরআনের একটি সুরার নাম। কেউ কেউ বলেছেন, ইয়াসিন আল্লাহর নাম। আশহাব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, ইয়াসিন নাম রাখা কেমন? তিনি বলেন, আমি এটা অনুচিত মনে করি। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ইয়াসিন, ওয়াল-কুরআনিল হাকিম, ইন্নাকা লামিনাল মুরসালীন।
ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেছেন, আরো কিছু শব্দের মাধ্যমে নাম রাখা নিষেধ। অর্থাৎ কুরআনের নামে নাম রাখা, কুরআনের সূরার নামে নাম রাখা। যেমন, তাহা, ইয়াসিন, হা-মিম ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ইয়াসিন, তাহা এগুলো নবীগণের নাম বলে যে কথা প্রচলিত আছে এর কোনো ভিত্তি নেই।
তাই আমাদের উচিত হবে নবীদের নামে, নেককার লোকদের নামে, সাহাবীগণের নামে বা যেসব শব্দের অর্থ ভালো তার মাধ্যমে বাচ্চাদের নামকরণ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খারাপ অর্থের নামগুলো ভাল অর্থের শব্দের দ্বারা পরিবর্তন করে দিতেন। সুনান আবু দাউদে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আসিয়া (অর্থ অবাধ্য) নামকে জামিলা (অর্থ সুন্দর) শব্দ দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন।
[2] সহীহ মুসলিম