আকিকার আভিধানিক অর্থ: আল্লাহর দরবারে নজরানা পেশ করা, শুকরিয়া আদায় করা, জানের সদকা দেওয়া ও আল্লাহর নি‘আমতের মোকাবেলায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। ইসলামী পরিভাষায় আকিকা হচ্ছে, নবজাতকের পক্ষ থেকে পশু জবেহ করা। আলেমদের অনেকেই আকিকা করাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলেছেন।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনের পক্ষ থেকে একটি করে বকরি জবেহ করেছেন।[1]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় রয়েছে, দুটি বকরি জবেহ করেছেন। খায়সামি রহ. বলেছেন, আনাসের বর্ণনা শুদ্ধতার বিচারে বুখারী-মুসলিমের বর্ণনার সমমর্যাদা রাখে।
ইমাম মালেক রহ. তার মুআত্তায় বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার সন্তান হয় সে যদি সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা করতে চায়, তবে তা করা উচিত। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা কর, নাম রাখ ও চুল কর্তন কর।[2]
ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, ছেলের পক্ষ থেকে প্রতিদান হিসেবে দু’টি বকরি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। জন্মের সপ্তম দিন, সম্ভব না হলে ১৪তম দিন বা ২১তম দিন আকিকা করা সুন্নত। বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, সপ্তম দিন অথবা চতুর্দশ দিন অথবা একুশতম দিন আকিকা কর।[3]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজ উভয়ের মাধ্যমেই আকিকার প্রমাণ পাওয়া যায়। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, বাচ্চার সঙ্গে আকিকার দায়িত্ব রয়েছে। সুতরাং তোমরা তার পক্ষ থেকে আকিকা কর এবং তার শরীর থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করে দাও।[4]
উম্মে কুরয আল-কা‘বিয়া বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেন, ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি পশু। নর-মাদি যে কোনো এক প্রকার হলেই চলে, এতে কোনো সমস্যা নেই।[5]
অধিকাংশ আলেম আকিকার গোস্ত পাকানো মুস্তাহাব বলেছেন, এমনকি সদকার অংশও। হ্যাঁ, পাকানো ব্যতীত বণ্টন করাও বৈধ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, ছেলের পক্ষ থেকে সমমানের দু’টি আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি জবেহ কর।[6]
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মেয়ের পক্ষ থেকে একটি এবং ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি বকরি জবেহ করার নির্দেশ দিয়েছেন।[7]
আরো জ্ঞাতব্য যে, কুরবানির পশুর ক্ষেত্রে যেসব শর্ত রয়েছে আকিকার পশুর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। অর্থাৎ পশুর কোনো অংশ মজদুরি হিসেবে দেওয়া যাবে না এবং এর চামড়া বা মাংস বিক্রি করা যাবে না বরং এর মাংস খাবে, সদকা করবে ও যাকে ইচ্ছে উপহার হিসেবে প্রদান করবে।
একদল আলেম বলেছেন, কুরবানিতে যেমন অংশিদারিত্ব বৈধ এখানে সে অংশিদারিত্ব বৈধ নয়। যদি কেউ গরু বা উটের মাধ্যমে আকিকা করতে চায় তাকে একজনের পক্ষ থেকে পূর্ণ একটি পশু জবেহ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল ও বাণী থেকে এ মতই সঠিক মনে হয়।
ইবন হাযম রহ. বলেন, আকিকার পশুর হাড় ভাঙতে কোনো অসুবিধা নেই। যেসব বর্ণনায় আকিকার পশুর হাড় ভাঙতে নিষেধ করা হয়েছে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। অধিকন্তু তিনি আবু বকর ইবন আবু শায়বা রহ.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, ইমাম যুহরী রহ. বলেছেন, আকিকার পশুর হাড় ও মাথা ভাঙা যাবে; কিন্তু তার রক্তের কোনো অংশ বাচ্চার শরীরে মাখা যাবে না।[8]
[2] আহমদ ও সুনান গ্রন্থসমূহ, তিরমিযী হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
[3] তিরমিযী
[4] সহীহ বুখারী
[5] আবু দাউদ, নাসাঈ
[6] আহমদ, তিরমিযী। ইমাম তিরমিযীর নিকট হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
[7] ইমাম তিরমিযীর নিকট হাদীসটি সহীহ ও হাসান।
[8] মুহাল্লা: ৭/৫২৩