বর্তমানে ইবাদতের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বিদআতের আবিষ্কার হয়েছে, তার সংখ্যা অনেক। যার পক্ষে কোন দলীল-প্রমাণ নেই। অথচ আল্লাহর ইবাদতের জন্য মূলনীতি হলো, التوقيف অর্থাৎ সকল প্রকার ইবাদতের পক্ষে কুরআন বা হাদীছ থেকে দলীল থাকতে হবে। দলীল ছাড়া কোনো ইবাদত শরী‘আতভুক্ত হওয়ার যোগ্য নয়। যে ইবাদতের পক্ষে কোন দলীল নেই, তা বিদআত হিসাবে পরিগণিত হবে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন আমল করল, যার পক্ষে আমাদের কোন আদেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে’’।[1] বর্তমানে যে সমস্ত বিদআতের চর্চা করা হয়, তার কতিপয় দৃষ্টান্ত পেশ করা হলো:
১. সালাতের শুরুতে মুখে নিয়ত পাঠ করা: পাঁচ ওয়াক্ত সালাতসহ অন্যান্য সকল সালাতের শুরুতে নাওয়াইতু বলে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা একটি বিদআত। কারণ এটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতে নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ أَتُعَلِّمُونَ اللَّهَ بِدِينِكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ﴾
‘‘বলো, তোমরা কি আল্লাহকে তোমাদের দীনের ব্যাপারে শিক্ষা দিতে চাও? অথচ আল্লাহ তায়া’লা আকাশ-যমীনের মধ্যকার সকল বস্তু সম্পর্কে অবগত আছেন। আর আল্লাহ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত’’। (সূরা হুজরাত: ১৬) নিয়তের স্থান অন্তর। এটা অন্তরের কাজ, মুখের কাজ নয়।[2]
২. ফরয সালাতের আগে-পরে দলবদ্ধভাবে যিকির করা: প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে হাদীছে বর্ণিত যিকির-আযকারগুলো একাকী পাঠ করা মুস্তাহাব।
৩. বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফাতিহা পাঠ করা: বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উপলক্ষে এবং মৃত ব্যক্তিদের ফাতিহা পাঠ করার জন্য মানুষকে জমায়েত করা বিদআত।[3]
৪. মৃতদের জন্য মাতম করা: মৃত ব্যক্তিদের জন্য মাতম করা, তাদের উপকারের জন্য ভোজনের আয়োজন করা এবং এ উদ্দেশ্যে কারীদেরকে ভাড়া করে এনে তাদেরকে দিয়ে কুরআন পড়ানো হয় এই ভেবে যে, এটি শোক প্রকাশের অন্তর্ভুক্ত কিংবা এগুলো মৃত ব্যক্তির উপকারে আসবে, -এসবগুলোই বিদআত। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো দীনের উপর চাপিয়ে দেয়া বোঝা স্বরূপ। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা কোনো দলীল-প্রমাণ নাযিল করেননি।
৫. ধর্মীয় বিভিন্ন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিরাজে গমন উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করা এবং রজব মাসের ২৭ তারিখের রাত্রিতে শবে মিরাজের নামে এ রাত্রি উদযাপন করা ও এতে বিভিন্ন ইবাদতে মগ্ন হওয়া বিদআত। এমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরত উপলক্ষে হিজরী নববর্ষ পালন করা, এসব উপলক্ষে উৎসব-অনুষ্ঠান করার কোনো ভিত্তি নেই। এসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করার কোনো দলীল নেই।
৬. রজব মাস ও শবে মিরাজের বিভিন্ন বিদআত: রজব মাস ফযীলতপূর্ণ মনে করে এমাসে বিভিন্ন ইবাদত করা বিদআত। এ মাসে উমরাহ পালন করা, এটিকে রজবী উমরাহ্ বলা হয়ে থাকে, এমনি এ মাসে বেশী করে নফল সালাত আদায় করা এবং নফল সিয়াম রাখা, সবই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা অন্যান্য মাসের উপর রজব মাসের আলাদা কোনো ফযীলত নেই। এমাসের উমরাহ, সালাত, সিয়াম, ইবাদত হিসাবে এতে পশু যবেহ করা এবং অন্য কিছু করারও আলাদা কোনো ফযীলত নেই।[4]
৭. সূফীদের বানোয়াট যিকির-আযকার: সূফীদের যত যিকির রয়েছে, তা সবই বানোয়াট ও বিদআতী যিকির। কেননা এগুলো সবই হাদীছে বর্ণিত শরী‘আত সম্মত যিকিরের পরিপন্থী। এ যিকিরগুলোর শব্দ-বাক্য ও তা পাঠ করার পদ্ধতি সম্পূর্ণ শরী‘আত বিরোধী। এ ছাড়া যেসব সময়ে তা পাঠ করা হয় তাও শরী‘আত সম্মত নয়।[5]
৮. শবে বরাতের বিদআত: শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে কিয়াম করা (রাতের সালাত আদায়) এবং পরের দিন ছিয়াম পালন করা বিদআত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ রাতের নফল সালাত এবং দিনের বেলা সিয়াম রাখার ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো সহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না।[6]
৯. কবরের সাথে সম্পৃক্ত বিদআত সমূহ: বর্তমানকালে অনেক মুসলিম সমাজ যেসমস্ত বিদআতে পরিপূর্ণ তার মাঝে কবরের সাথে সম্পৃক্ত বিদআত সবচেয়ে ভয়াবহ। কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করা, কবর পাকা করা, কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা, কবর থেকে বরকত হাসিলের জন্য এবং মৃত অলীদের উসীলা দেয়াসহ অন্যান্য উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারত করা, মহিলাদের কবর যিয়ারত করা[7] এসব কিছুই বিদআত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর যিয়ারতকারী মহিলা এবং কবরের উপর মসজিদ নির্মাণকারী ও কবরে প্রদীপ প্রজ্জলনকারীদের উপর লানত করেছেন।[8]
পরিশেষে বলতে চাই যে, বিদআত হলো কুফরীর প্রাথমিক পর্যায়। তা দীনের মাঝে এমন বিষয় অতিরিক্ত করার নামান্তর, যার অনুমতি আল্লাহ এবং তার রসূল প্রদান করেন নি। বিদআত যে কোনো কবীরা গুনাহ থেকে নিকৃষ্ট। শয়তানের কাছে কবীরা গুনাহের চেয়ে বিদআত অনেক বেশী প্রিয়। কেননা পাপী লোক পাপ করার সময় ভাল করেই জানে যে, সে পাপের কাজে লিপ্ত হচ্ছে। তাই সে তাওবা করার সুযোগ পায়। কিন্তু বিদআতী বিদআতকে দীন মনে করেই পালন করে থাকে। কাজেই সে তাওবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে।[9]
বিদআত সুন্নাতকে মিটিয়ে ফেলে। বিদআতীদের কাছে সুন্নাত অনুযায়ী আমল করা অপ্রিয় হয়ে যায়। তারা সুন্নাত অনুযায়ী আমলকারীদেরকেও ঘৃণা করে। বিদআত মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তিকে আবশ্যক করে, অন্তরকে বাঁকা করে দেয় এবং সেটাকে নষ্ট করে ফেলে।
[1]. সহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮।
[2] . মুখে নিয়ত উচ্চারণের পক্ষে সহীহ তো দূরের কথা, কোন যঈফ হাদীছও পাওয়া যায় না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, কোন তাবেঈ বা চার ইমামের কোন ইমাম এভাবে নিয়ত উচ্চারণ করেননি। এটা কোন এক বুযুর্গ ব্যক্তির তৈরী প্রথা। ইসলামের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং তা বর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য ফরয। পূর্বেই বলা হয়েছে, নিয়ত শব্দের অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প করা। আর তা অন্তরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। মুখের মাধ্যমে নয়। সুতরাং কোন কিছু করার জন্য অন্তরে ইচ্ছা বা সংকল্প করলেই সে কাজের নিয়ত হয়ে গেল। তা মুখে বলতে হবে না।
[3]. আমাদের সমাজে মৃত ব্যক্তিদের উপকারের জন্য কুলখানি, চল্লিশা, হাফেজ-আলেমদের দাওয়াত দিয়ে কুরআন খতম, সাবীনা খতম পড়িয়ে মৃতের রূহের উপর বখশানো, খতমে ইউনুস, খতমে জালালী, ফাতেহা খানি, ইছালে ছাওয়াব ও অন্যান্য অনুষ্ঠান পালন করা সম্পূর্ণ বিদআত। এগুলোর পক্ষে কোন দলীল নেই। এ সমস্ত অনুষ্ঠানে শরীক হয়ে হাদীয়া ও টাকা-পয়সা গ্রহণ বা প্রদান করা সম্পূর্ণ হারাম।
[4]. আমাদের সমাজে রজব মাসের ২৭ তারীখে ব্যাপকভাবে শবে মিরাজ পালন করা হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবেও এটি পালন করা হয় এবং সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। মূলতঃ শবে মিরাজ নামে যেই রাত্রি উদযাপন করা হয় এবং সে উপলক্ষে যে সমস্ত ইবাদত করা হয় তার সবই বিদআত। এ মর্মে শরীয়াতে কোনো দলীল নেই। তাছাড়া রজব মাসের ২৭ তারিখে মিরাজ হয়েছিল, এটি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিতও নয়।
[5]. এ ছাড়া দলবদ্ধ হয়ে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর যিকির, আল্লাহু আল্লাহু বলে যিকির করা, যিকিরে যলী, যিকিরে খফী, যিকিরে রূহী, যিকিরে কলবী ইত্যাদি সবই ইবাদতের নামে নতুন সৃষ্টি তথা বিদআত।
[6]. এ রাতকে আমাদের দেশের পরিভাষায় শবে বরাত বলা হয়ে থাকে। এ রাত সম্পর্কে মানুষের বিদআতী ধারণা এবং এ রাতে মানুষ যে সমস্ত বিদআতী আমল করে তার বিস্তারিত বিবরণ প্রয়োজন। নিম্নে তার কিছু বিবরণ পেশ করা হলো:
শবে বরাতে কুরআন নাযিল হয়েছে বলে ধারণা:
শবে বরাত পালনকারীদের বক্তব্য হল, শবে বরাতের রাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে। সূরা দুখানের ৩নং আয়াতকে তারা দলীল হিসাবে পেশ করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِىْ لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ﴾
‘‘আমি কুরআনুল কারীমকে একটি বরকতপূর্ণ রাতে অবতীর্ণ করেছি। এবরকতপূর্ণ রাতই হল শবে বরাতের রাত। কতিপয় আলেম এভাবেই অত্র আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন।
তাদের এব্যাখ্যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এখানে বরকতপূর্ণ রাত বলতে লাইলাতুল কদর উদ্দেশ্য। আল্লামা ইবনে কাছীর (রহি.) বলেন, অত্র বরকতপূর্ণ রাতই হল লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত। যেমন অন্যত্র সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। কুরআনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য কথা হল, কুরআনের কোন অস্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা যদি অন্য কোন আয়াতে সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায়, তাহলে কুরআনের ব্যাখ্যাই গ্রহণ করতে হবে। আমরা দেখতে পাই যে, আল্লাহ সূরা কদরের শুরুতে বলেনঃ
﴿إِنَّ أَنْزَلْنَاهُ فِى لَيْلَةِ الْقَدْرِ﴾
‘‘আমি কুরআনকে কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি’’। (সূরা কদর: ১) আর এ কথা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে, লাইলাতুল কদর রামাযান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে নেই। এমনিভাবে আল্লাহ তায়া’লা রামাযান মাসে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে সূরা বাকারায় বলেন,
﴿شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِى أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ﴾
‘‘রামাযান মাস এমন একটি মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে’’। (সূরা বাকারা: ১৮৫) সুতরাং শবে বরাতে কুরআন নাযিল হওয়ার কথা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
শবে বরাতের রাতে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসার ধারণা:
শবে বরাতসহ অন্যান্য বিদআতী ইবাদতের পক্ষের আলেমগণ বলে থাকে, এ রাতের শেষের দিকে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং সকল মানুষকে ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ দেন। আল্লাহ রাববুল আলামীন ক্বলব গোত্রের বকরীগুলোর লোম সংখ্যার চেয়ে অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ ক্ষমা করে থাকেন।
উপরোক্ত অর্থ বহনকারী হাদীছটি কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সকল বর্ণনাই যঈফ বা দূর্বল। নির্দিষ্টভাবে এ রাতে আল্লাহর দুনিয়ার আকাশে নেমে আসার এবং সকল বান্দাকে ক্ষমা চাওয়ার প্রতি আহবান জানানোর হাদীছটি সুনানে ইবনে মাজায় জাল সনদে বর্ণিত হয়েছে। হাদীছের সনদে ইবনে আবু সাব্রাহ্ নামে একজন জাল হাদীছ বর্ণনাকারী রাবী রয়েছে। তা ছাড়া হাদীছটি বুখারী সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত সহীহ হাদীছের বিরোধী। সহীহ হাদীছের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ তায়া’লা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি ক্ষমা করে দিব। অমুক আছ কি? অমুক আছ কি? এভাবে প্রতি রাতেই ঘোষণা করতে থাকেন। সুতরাং জাল হাদীছের উপর ভিত্তি করে সহীহ হাদীছের মর্ম প্রত্যাখ্যান করে শবে বরাতের রাতে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসার আকীদা পোষণ করা এবং সে রাতে বিশেষ ইবাদত করার কোন বৈধতা নেই।
মৃত ব্যক্তির রূহ দুনিয়াতে আগমনের বিশ্বাস:
শবে বরাত পালনের পিছনে যুক্তি হল, এরাতে মানুষের মৃত আত্মীয়দের রূহসমূহ দুনিয়াতে আগমন করে স্ব স্ব আত্মীয়দের সাথে সাক্ষাৎ করে। এটি একটি অবান্তর ধারণা, যা কুরআন-সুন্নার সুস্পষ্ট বিরোধী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَ مِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمٍ يُبْعَثُوْنَ﴾
‘‘ওদের (মৃতদের) পিছনে রয়েছে অন্তরায়, তারা সেখানে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত অবস্থান করবে’’। (সূরা মুমিনূন: ১০০)
এরাত্রে মানুষের ভাগ্য লেখা হয় বলে ধারণা:
তাদের এধারণাটিও ঠিক নয়। এ কথার পিছনে কুরআন হাদীছের কোন দলীল নেই। সহীহ হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«كَتَبَ اللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلَائِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ»
‘‘আকাশ-জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই আল্লাহ তায়া’লা স্বীয় মাখলুকের তাকদীর লিখে রেখেছেন’’ মুসলিম ২৬৫৩।
হালুওয়া রুটির রহস্য: তাদের বক্তব্য হচ্ছে শবে বরাতের দিন ওহুদ যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দন্ত মোবারক শহীদ হয়েছিল। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শক্ত খাবার খেতে না পারায় নরম খাদ্য হিসাবে হালুওয়া-রুটি খেয়েছিলেন। তাই আমরাও নবীর দাঁত ভাঙ্গার ব্যথায় সমবেদনা প্রকাশ করে হালুওয়া-রুটি খেয়ে থাকি। এটি একটি কাল্পনিক কথা। কারণ উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে, শাবান মাসে নয়।
এ রাতে কবর যিয়ারতের পিছনে যুক্তি ও তা খন্ডন: এ রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাকী কবরস্থান যিয়ারত করেছেন। তাই আমাদেরকেও এ রাতে কবর যিয়ারত করতে হবে। এ মর্মে ইবনে মাজাহ শরীফে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ। হাদীছের সনদে হাজ্জাজ ইবনে আরত্বাত নামক একজন যঈফ রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন।
একশত রাকাত সালাতের ভিত্তি খন্ডন: এরাতে একশত রাকাত সালাতের ব্যাপারে যত হাদীছ রয়েছে, তার সবই জাল বা বানোওয়াট। এ সালাত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন হাদীছ প্রমাণিত নেই। একশত রাকাত সালাত পড়ার বিদআতটি ৪৪৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম জেরুজালেমের বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদে প্রবর্তিত হয়। মসজিদের ইমামগণ অন্যান্য সালাতের ন্যায় এ সালাত ও চালু করে দেয়।
শবে বরাতের সিয়াম: শবে বরাতের রোযা রাখার প্রমাণ স্বরূপ দু’টি হাদীছ পেশ করা হয়ে থাকে। প্রথম হাদীছ: শাবান মাসের মধ্যরাত এলে তোমরা রাতে কিয়াম কর এবং দিনে ছিয়াম পালন কর। এ হাদীছের সনদে ইবনে আবু সাব্রাহ নামক একজন জাল হাদীছ রচনাকারী রাবী থাকার কারণে হাদীছটি গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয় হাদীছ: ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বলেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি কি সিরারে শাবানের রোযা রেখেছ? লোকটি বললো না। অতপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানের পরে রোযা দু’টি কাযা আদায় করতে বললেন।
অধিকাংশ আলেমদের মতে সিরার অর্থ মাসের শেষ। উক্ত ব্যক্তি শাবানের শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত রোযা পালনে অভ্যস্ত ছিল অথবা এটা তার মানতের রোযা ছিল। রামাযানের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ভয়ে সে রোযা রাখা ছেড়ে দিয়েছিল। কারণ শাবান মাসের শেষের দিকে রামাযানের রোযার সাথে মিশিয়ে রোযা রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সিয়াম দু’টি কাযা আদায় করতে বলেছিলেন।
প্রিয় পাঠক মন্ডলী! শবে বরাতের পিছনে এত আয়োজন, যার জন্য সরকারী ছুটি পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়। লক্ষ লক্ষ টাকা এর পিছনে ব্যয় করা হয়ে থাকে। অথচ এর কোনো ভিত্তি নেই। মুসলিম জাতির উচিৎ এই বিদআত থেকে বিরত থাকা। পরিতাপের বিষয় এই যে, অনেকেই এ বিদআতকে বিদআতে হাসানাহ বলে থাকে। আসলে বিদআতে হাসানাহ বলতে কিছু নেই। ইসলামের নামে তৈরীকৃত সকল বিদআতই মন্দ, হাসানাহ বা ভাল বিদআত নামে কোন বিদআতের অস্তিত্ব নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٍ وَ كُلُّ ضَلَالَةٍ فِى النَّارِ»
‘‘প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা আর সমস্ত ভ্রষ্টতার পরিণাম হল জাহান্নাম’’ নাসাঈ ১৫৭৮, সহীহ। ইবনে উমার (রা.) বলেন, ‘‘সমস্ত বিদআতই ভ্রষ্টতা যদিও মানুষ তাকে উত্তম বলে থাকে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, শবে বরাতের এ আয়োজন শুধুমাত্র বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ অনারব দেশসমূহেই দেখা যায়। আরব দেশসমূহে এর তৎপরতা নেই বললেই চলে। বিশেষ করে ইসলামের প্রাণ কেন্দ্র সৌদি আরবে শবে বরাতের কোন অস্তিত্বই দেখা যায় না। মক্কা-মদীনার সম্মানিত ইমামগণের কেউ কোন দিন শবে বরাত উদযাপন করার প্রতি জনগণকে উৎসাহিত করেন না। কারণ তারা ভাল করেই জানেন যে ইহা দীনের কোন অংশ নয়। বরং তা একটি নব আবিষ্কৃত বিদআত। এ জন্যই তারা শবে বরাতসহ অন্যান্য সকল বিদআত থেকে মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে থাকেন এবং তাদের সকল জুমআর খুৎবা ও অন্যান্য আলোচনা ও ভাষণে বিনা শর্তে কুরআন-সুন্নার অনুসরণের আহবান জানান।
[7]. তবে বেপর্দা, বিলাপ এবং অন্যান্য ফিতনার আশঙ্কা থেকে মুক্ত হলে কবর অতিক্রম করার সময় মহিলারা কবর যিয়ারত করতে পারবে।
[8]. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শির্কের সকল পথই বন্ধ করে দিয়েছেন এবং শিরক থেকে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। তিনি কবরের ব্যাপারে আরও কঠোরভাবে সাবধান করেছেন এবং আওলীয়া ও সৎ লোকদেরকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। কেননা সৎ লোকদেরকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করাই তাদের এবাদতের দিকে নিয়ে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা থেকে সাবধান থাকবে। কেননা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেই অতীত জাতিসমূহ ধ্বংস হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খ্রিষ্টানরা যেমন মরিয়মের পুত্র ঈসা (আ.) কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে, তোমরা আমাকে নিয়ে তেমন বাড়াবাড়ি করনা। আমি আল্লাহর একজন বান্দা। সুতরাং তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল বল। তিনি কবরের উপর প্রাচীর নির্মাণ এবং ঘর-গম্বুজ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। আবুল হাইয়াজ আল-আসাদী বলেন, আমাকে আলী (রা.) বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে যে কাজ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, আমি কি তোমাকে সে কাজ দিয়ে পাঠাবনা? তা এই যে কোন মূর্তি পেলে তা ভেঙ্গে ফেলবে এবং মাটি থেকে উঁচু কোন কবর পেলে তা ভেঙ্গে মাটির সমান করে দিবে।
এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের উপর চুনকাম করতে এবং তার উপর কোন প্রকার নির্মাণ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। জাবের (রা.) রাসূল ছব্লস্নাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের উপর চুনা লাগাতে, কবরের উপর বসতে এবং তার উপর কিছু নির্মান করতে নিষেধ করেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের কাছে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ বুখারী (৪৩৫) ও মুসলিমে (৫৩১) বর্ণিত উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রা.) বলেন,
«لَمَّا نُزِلَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَفِقَ يَطْرَحُ خَمِيصَةً لَهُ عَلَى وَجْهِهِ فَإِذَا اغْتَمَّ كَشَفَهَا عَنْ وَجْهِهِ فَقَالَ وَهُوَ كَذَلِكَ لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ يُحَذِّرُ مِثْلَ مَا صَنَعُوا»
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মৃত্যুকালিন সময়ে উপনীত হলেন, তখন তার মুখমণ্ডল একটি চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল। তার অবস্থা যখন একটু ভাল হত, তখন মুখের উপর থেকে চাদরটি সরাতেন এবং বলতেন ইয়াহূদী-নাসারাদের উপর আল্লাহর লানত, তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করেছে। তাদের কাজকর্ম থেকে সাবধান করার জন্যই তিনি একথা বলেছেন। তার কবরকে মসজিদে পরিণত করার ভয় না থাকলে মুমেন জননী আয়েশা (রা.) এর ঘরে কবর না দিয়ে তাকে ঘরের বাইরে কবর দেয়া হত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
«أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ إِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ»
‘‘জেনে রাখা উচিৎ যে, তোমাদের পূর্বের লোকেরা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করত। সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মসজিদে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি। সহীহ মুসলিম ৫২৩।
কবরকে মসজিদে পরিণত করার অর্থ হল কবরের কাছে সালাত আদায় করা। যদিও তার উপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি। মূলতঃ সালাতের জন্য কোন স্থানে গমণ করাই উক্ত স্থানকে মসজিদে রূপান্তরিত করার শামীল। বর্তমান কালে অধিকাংশ মুসলিম সমাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিষেধ অমান্য করে চলেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিষেধ করেছেন, তারা তাতেই লিপ্ত হয়েছে। এতে করে তারা বড় শির্কে লিপ্ত হয়েছে। কবরের উপর নির্মাণ করেছে মসজিদ, গম্বুজ, কবরকে পরিণত করেছে মাযার বা যিয়ারতের স্থানে, কবরের কাছে পশু যবেহ করা, কবরবাসীর কাছে দু’আ করা, তাদের কাছে আশ্রয় চাওয়া, তাদের নামে মানত পেশ করাসহ বিভিন্ন প্রকার শিরকী কাজে লিপ্ত হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের কাছে বা কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। মুসলমানেরা তাঁর নিষেধ অমান্য করে কবরকে নামাযের স্থানে পরিণত করেছে। তিনি কবরকে মসজিদে পরিণত করতে নিষেধ করেছেন। তারা তাকে মসজিদে পরিণত করেছে। তিনি কবরে প্রদীপ জ্বালাতে নিষেধ করেছেন। তারা তাতে বাতি জ্বালিয়ে হাজার হাজার টাকা অপচয় করছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাযারের (কবরের) পাশে ওরস (উৎসব) করতে নিষেধ করেছেন। এরা কবরের পাশে প্রতি বছর ঈদের মত উৎসব পালন করে চলছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁচু কবরকে মাটির সাথে সমান করে দিতে বলেছেন।
সহীহ মুসলিম (৯৬৯) শরীফে ইমাম মুসলিম আবুল হাইয়াজ আল আসাদী (রা.) হতে বর্ণনা করেন যে, আবুল হাইয়াজ আল আসাদী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ أَلَّا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ»
‘‘আমাকে আলী (রা.) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে যে কাজের জন্য পাঠিয়েছিলেন, আমি কি তোমাকে সে কাজের জন্য পাঠাবো না? তা এ যে কোথাও কোন মূর্তি দেখতে পেলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। কোন উঁচু কবর পেলে তা মাটির সাথে সমান করে দিবে। সহীহ মুসলিম শরীফে ছুমামা ইবনে শুফাই (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, আমরা একদা ফুজালা ইবনে উবাইদের সাথে রোম দেশের বারদুস অঞ্চলে ছিলাম। সেখানে আমাদের একজন সঙ্গী মৃত্যু বরণ করলেন। ফুজালা (রা.) তাঁর কবরকে মাটির সাথে সমান করে রাখতে বললেন। অথচ কবর পূজারীরা হাদীছের বিরোধীতা করে কবরকে ঘরের মত উঁচু করে থাকে।
প্রিয় পাঠক ভাই! লক্ষ্য করুন! কবরের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছেন, আর এরা কি করছে। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতের সম্পূর্ণ বিপরীত পথে চলছে। তাদের বিদআতী কাজ-কর্মের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না।
প্রিয় পাঠক! আরো লক্ষ্য করুন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কেন কবর যিয়ারত করতে বলেছেন? আমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে বলেছেন এই জন্য যে, যাতে কবর আমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমরা কবরের পাশে গিয়ে কবরবাসীর জন্য দু’আ করতে পারি, তার জন্য আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি। বর্তমান যুগের নামধারী মুসলমানেরা কবর যিয়ারতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পালটিয়ে দিয়েছে। দীনকে পরিবর্তন করে ফেলেছে। বর্তমানে তাদের কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য হল তথায় গিয়ে শির্কে লিপ্ত হওয়া, কবরবাসীর কাছে দু’আ করা, তার উসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দু’আ করা, কবরবাসীর কাছে প্রয়োজন পূর্ণ করার আবেদন করা, কবর থেকে বরকত তালাশ করা ইত্যাদি।
[9]. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ اللَّهَ حَجَبَ التَّوْبَةَ عَنْ صَاحِبِ بِدْعَةٍ حَتَّى يَدَعَهَا»
‘‘বিদআত পরিত্যাগ করার পূর্বে আল্লাহ তায়ালা বিদআতীর তাওবা কবুল করেন না। বিদআত সুন্নাতকে ধ্বংস করে ফেলে এবং বিদআতীরা সুন্নাত ও সুন্নীদেরকে ঘৃণা করে (জামে সহীহ)।
বিদআত মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, আল্লাহর ক্রোধকে আবশ্যক করে এবং অন্তরকে নষ্ট করে দেয়। বিদআতী কিয়ামতের দিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাউজে কাউছার থেকে বঞ্চিত হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«إِنِّي فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ مَنْ مَرَّ عَلَيَّ شَرِبَ وَمَنْ شَرِبَ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا لَيَرِدَنَّ عَلَيَّ أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُونِي ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ فَأَقُولُ إِنَّهُمْ مِنِّي فَيُقَالُ إِنَّكَ لَا تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ فَأَقُولُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِي»
‘‘কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের জন্য হাউজে কাউছারের নিকট উপস্থিত থাকব। যে ব্যক্তি আমার কাছে আসবে, আমি তাকে তা থেকে পানি পান করাবো। যে আমার হাউজ থেকে একবার পানি পান করবে, সে আর কখনো পিপাসিত হবে না। এমন সময় আমার কাছে একদল লোক আগমন করবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারবো। তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অতঃপর আমার এবং তাদের মাঝে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করা হবে। আমি বলব, তারা আমার উম্মত। তখন আমাকে বলা হবে, আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে কত বিদআত তৈরী করেছিল। আমি বলব আমার রেখে আসা দীনের মধ্যে যারা পরিবর্তন করেছো, তারা এখান থেকে সড়ে যাও। অতঃপর তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা হবে। (বুখারী)