(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُوا أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنفُسَكُمْ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ﴾
‘‘তুমি যদি যালেমদেরকে ঐ সময়ে দেখতে যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রনায় থাকবে এবং ফেরেশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবে, তোমরা নিজেরাই নিজেদের প্রাণ বের করে আনো। তোমাদের আমলের কারণে আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর আযাব দেয়া হবে। কারণ তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করেছিলে এবং তোমরা তার আয়াতের বিরুদ্ধে অহংকার করেছিলে’’। (সূরা আনআম: ৯৩)
এটি মৃত্যুর সময় মানুষের জন্য ফেরেশতাগণের সম্বোধন। সত্যবাদী ফেরেশতাগণ এখানে সংবাদ দিয়েছেন যে, তারা মৃত্যুর সময় মানুষকে অবমাননাকর শাস্তি দিয়ে থাকেন। দুনিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত যদি তাদের শাস্তি বিলম্বিত করা হতো, তাহলে তাদেরকে সম্বোধন করে এ কথা বলা ঠিক হতো না যে, আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে। এর দ্বারা বুঝা গেলো যে, আয়াত দ্বারা কবরের আযাব উদ্দেশ্য।
(২) আল্লাহ তা‘আলা সূরা তুরের ৪৫- ৪৭ নং আয়াতে বলেন,
﴿فَذَرْهُمْ حَتَّىٰ يُلَاقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِي فِيهِ يُصْعَقُونَ يَوْمَ لَا يُغْنِي عَنْهُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا وَلَا هُمْ يُنصَرُونَوَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا عَذَابًا دُونَ ذَٰلِكَ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ﴾
‘‘অতএব, হে নবী! তাদেরকে আপন অবস্থায় থাকতে দাও। যাতে তারা সে দিনটির সাক্ষাত পায়, যেদিন তাদেরকে (মেরে-পিটিয়ে) বেহুশ করা হবে। সেদিন না তাদের কোন চালাকি কাজে আসবে, না কেউ তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। আর সেদিনটি আসার আগেও যালেমদের জন্য একটা আযাব আছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না’’।
এখানে আযাব দ্বারা দুনিয়াতে হত্যা ও অন্যান্যভাবে তাদেরকে শাস্তি দেয়া উদ্দেশ্য হতে পারে। আলমে বারযাখের শাস্তিও উদ্দেশ্য হতে পারে। এটিই অধিক সুস্পষ্ট। কেননা তাদের অনেকেই দুনিয়ার শাস্তি ভোগ না করেই মৃত্যু বরণ করেছে। কেউ কেউ বলেছেন, অপরাধীদের যারা দুনিয়াতে শাস্তি ভোগ করার আগেই মারা গেছে, তাদেরকে বারযাখী জিন্দেগীতে শাস্তি দেয়া হবে আর যারা রয়ে গেছে, তাদেরকে দুনিয়াতে হত্যা কিংবা অন্যান্যভাবে শাস্তি দেয়া হবে। সুতরাং তাদেরকে শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে। এ আযাব দ্বারা দুনিয়ার আযাব, বারযাখের আযাব এবং অন্যান্য আযাবও উদ্দেশ্য হতে পারে।
(৩) আল্লাহ তা‘আলা সূরা গাফেরের ৪৫-৪৬ নং আয়াতে বলেন,
﴿ فَوَقَاهُ اللَّهُ سَيِّئَاتِ مَا مَكَرُوا وَحَاقَ بِآلِ فِرْعَوْنَ سُوءُ الْعَذَابِالنَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ﴾
‘‘অতঃপর আল্লাহ তাকে তাদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্ট হতে রক্ষা করলেন এবং ফেরাউন সম্প্রদায়কে কঠিন শাস্তি ঘিরে ফেললো। দোযখের আগুনের সামনে তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় পেশ করা হয়। কিয়ামত সংঘটিত হলে নিদের্শ দেয়া হবে, ফেরাউনের অনুসারীদেরকে কঠিন আযাবে নিক্ষেপ করো’’। এখানে উভয় জগতের আযাবের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে অন্য কোনো কিছু বুঝার সুযোগ নেই। সুতরাং আয়াত দ্বারা কবরের আযাব সাব্যস্ত হয়েছে।
(৪) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿فَلَوْلَا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ (83) وَأَنْتُمْ حِينَئِذٍ تَنْظُرُونَ (84) وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْكُمْ وَلَكِنْ لَا تُبْصِرُونَ (85) فَلَوْلَا إِنْ كُنْتُمْ غَيْرَ مَدِينِينَ (86) تَرْجِعُونَهَا إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (87) فَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنَ الْمُقَرَّبِينَ (88) فَرَوْحٌ وَرَيْحَانٌ وَجَنَّتُ نَعِيمٍ (89) وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ (90) فَسَلَامٌ لَكَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ (91) وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنَ الْمُكَذِّبِينَ الضَّالِّينَ (92) فَنُزُلٌ مِنْ حَمِيمٍ (93) وَتَصْلِيَةُ جَحِيمٍ﴾
‘‘তবে কেন নয়; প্রাণ যখন কণ্ঠাগত হয় এবং তখন তোমরা তাকিয়ে দেখো। আর আমি তোমাদের অপেক্ষা তার নিকটতম। কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। তবে কেন নয়; যদি তোমরা প্রতিদানপ্রাপ্ত না হও। তবে তোমরা ওটা ফিরাও না কেন? যদি তোমরা সত্যবাদী হও। যদি সে নৈকট্য প্রাপ্তদের একজন হয়। তার জন্য রয়েছে আরাম, উত্তম রিযিক ও নিয়ামতময় জান্নাত। আর সে যদি হয় ডান দিকের একজন। তাহলে তাকে সাদর অভিনন্দন জানানো হবে এভাবে যে, তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আর সে যদি হয় অস্বীকারকারী পথভ্রষ্টদের একজন। তাহলে তার সমাদরের জন্য রয়েছে ফুটন্ত গরম পানি এবং জাহান্নামের দহন’’। (সূরা আল-ওয়াকেয়া: ৮৩-৯৪)
এখানে মৃত্যুর সময় রূহ এর অবস্থা ও হুকুম-আহকাম বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা আল-ওয়াকিআর শুরুর দিকে পুনরুত্থান দিবসের হুকুম-আহকাম উল্লেখ করা হয়েছে। চূড়ান্ত গন্তব্যস্থলের গুরুত্ব বুঝানোর জন্যই মৃত্যুকালীন অবস্থার পূর্বে কিয়ামতের আলোচনা করা হয়েছে। কেননা কিয়ামত দিবসের আলোচনা করার গুরুত্ব বেশী। তাই তার আলোচনা বেশি করা দরকার। সূরা আল-ওয়াকিআতে মানুষকে যেমন তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে অনুরূপ আখিরাতেও তাদেরকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হবে।