৩- نزول عيسى بن مريم عليه السلام - ৩. ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামের অবতরণ

ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামের অবতরণের বিষয়টি যেমন কুরআন দ্বারা প্রমাণিত, তেমনি সত্যবাদী ও সত্যবাদী হিসাবে সমর্থিত আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামও তার আগমন সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন। তিনি তো নিজের পক্ষ হতে বানিয়ে কিছুই বলেন না। এ ব্যাপারে মুতাওয়াতের সূত্রে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। এ বিষয়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের সমস্ত আলেমের ইজমা সংঘটিত হয়েছে। ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণের প্রতি ঈমান আনয়ন করাকে ওয়াজিব হিসাবে গণ্য করেছেন।

ইমাম সাফারায়েনী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণের বিষয়টি আল্লাহর কিতাব, রসূলের সুন্নাত ও উম্মতের ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا﴾

‘‘আহলে কিতাবদের প্রত্যেকেই তার মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করবে এবং কিয়ামত দিবসে তিনি তাদের উপর সাক্ষ্য প্রদান করবেন’’।[1]

অর্থাৎ ঈসার মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করবে। আর সেটি হবে আখেরী যামানায় তার অবতরণের পর। তখন মাত্র একটি দীন ব্যতীত অন্য কোনো দীন থাকবেনা। সেটি হবে একনিষ্ঠ মুসলিম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দীন।

সুন্নাতের দলীল দ্বারাও তার অবতরণের বিষয়টি সাব্যস্ত। বুখারী, মুসলিম এবং অন্যান্য কিতাবে আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ»

‘‘ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। অচিরেই ন্যায় বিচারক শাসক হিসাবে ঈসা (আ.) তোমাদের মাঝে আগমন করবেন। তিনি ক্রুশচিহ্ন ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিযিয়া কর প্রত্যাখ্যান করবেন’’।[2] সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«وَالَّله ليَنْزِلَن فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ»

‘‘আল্লাহর শপথ! অচিরেই ন্যায় বিচারক শাসক হিসাবে ঈসা (আঃ) তোমাদের মাঝে আগমন করবেন। তিনি এসে খ্রিষ্টানদের ক্রুশচিহ্ন ভেঙ্গে ফেলবেন’’। ইমাম মুসলিম জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণনা করেছেন যে, রসূল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 «لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ قَالَ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ بنا فَيَقُولُ لَا إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ تَكْرِمَةَ اللَّهِ هَذِهِ الْأُمَّةَ»

‘‘আমার উম্মতের একটি দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করে বিজয়ী থাকবে। অতঃপর ঈসা (আ.) আগমন করবেন। সেদিন মুসলমানদের আমীর তাকে লক্ষ্য করে বলবেন, আসুন! আমাদের ইমামতি করুন। তিনি বলবেন, না; বরং তোমাদের একজন অন্যজনের আমীর। এ কারণে যে, আল্লাহ এ উম্মতকে সম্মানিত করেছেন’’।[3]

ঈসা আলাইহিস সালামের আগমনের ব্যাপারে উম্মতের আলেমদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে। ইসলামী শরী‘আতের কোনো আলেম এই ইজমার বিরোধিতা করেছেন বলে জানা যায়নি। দার্শনিক, নাস্তিক অথবা যাদের কথার কোনো মূল্য নেই তারাই কেবল ঈসা আলাইহিস সালামের আগমনকে অস্বীকার করেছে।

এই মর্মে আলেমদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম আগমন করবেন এবং শরী‘আতে মুহাম্মাদীর মাধ্যমে হুকুম-ফায়ছালা করবেন। তিনি আসমান থেকে নামার সময় নতুন কোনো শরী‘আত নিয়ে আসবেন না। যদিও তিনি নবী হিসাবেই থাকবেন। তিনি নেমে মাহদীর নিকট থেকে দায়িত্ব বুঝে নিবেন। মাহদী নিজে এবং তার অন্যান্য সাথীগণও ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করবেন। ইমাম সাফারায়েনীর কথা এখানেই শেষ।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ঈসা আলাইহিস সালাম আসমানে এখনো জীবিত আছেন। তিনি যখন আসমান থেকে নেমে আসবেন, তখন আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাত ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে ফায়ছালা করবেন না। তখন আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাতের বিরোধিতা করার মতো কিছুই থাকবে না।

শাইখুল ইসলাম আরো বলেন, ঈসা আলাইহিস সালাম জীবিত আছেন। সহীহ সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, তোমাদের মাঝে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম ন্যায় বিচারক এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী হিসাবে অবতরণ করবেন। তিনি এসে ক্রুশচিহ্ন ভেঙে ফেলবেন। তিনি শূকর হত্যা করবেন এবং জিযিয়া কর রহিত করবেন। তার থেকে সহীহ সূত্রে আরো বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, দামেস্ক নগরীর পূর্ব পার্শ্বের সাদা মিনারের উপর তিনি অবতরণ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। আর যাদের রূহ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আসমান থেকে তাদের দেহ অবতরণ করবে না। তাদেরকে যখন জীবিত করা হবে, তখন তারা তাদের কবর থেকে বের হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  

﴿إِذْ قَالَ اللَّهُ يَاعِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا﴾

‘‘যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে ওয়াফাত দান করবো। অতঃপর তোমাকে আমার দিকে উঠিয়ে নিবো এবং আমি তোমাকে কাফেরদের থেকে পবিত্র করবো’’। (সূরা আলে-ইমরান: ৫৫)

এ আয়াতে ওয়াফাত দ্বারা মৃত্যু উদ্দেশ্য করা হয়নি। যদি মৃত্যু উদ্দেশ্য করা হতো, তাহলে তিনি এ বিষয়ে অন্যান্য সাধারণ মুমিনের মতই হতেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের রূহ কবয করেন এবং তা আসমানে উঠানো হয়। এতে জানা গেলো যে, তার রূহ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে পুনরায় তাতে ফেরত দেয়ার মধ্যে আলাদা কোনো বৈশিষ্ট থাকেনা।

অনুরূপ আল্লাহ তা‘আলার বাণী:﴿وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا﴾  ‘‘এবং আমি তোমাকে কাফেরদের থেকে পবিত্র করবো’’। তাকে আসমানে উঠানোর সময় যদি তার রূহ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হতো, তাহলে তার দেহ অন্যান্য নবী কিংবা সাধারণ মুমিনদের দেহের মতোই যমীনে থাকতো। আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন,

﴿وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمْ ۚ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ ۚ مَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّ ۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا بَل رَّفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا﴾

‘‘প্রকৃতপক্ষে তারা তাকে হত্যা করেনি এবং শূলেও চড়ায়নি বরং ব্যাপারটিকে তাদের জন্য সন্দিহান করে দেয়া হয়েছে। আর যারা এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছে তারাও আসলে সন্দেহের মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের কাছে এ সম্পর্কিত কোনো জ্ঞান নেই, আছে আন্দাজ-অনুমানের অন্ধ অনুস্মরণ মাত্র। নিঃসন্দেহে তারা ঈসা মসীহকে হত্যা করেনি; বরং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’’। (সূরা নিসা: ১৫৭-১৫৮)

আল্লাহ তা‘আলার বাণী, তাকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, এর মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে যে, তাকে রূহ এবং দেহ সহকারে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। যেমন সহীহ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, তার দেহ এবং রূহ উভয়ই অবতরণ করবে। যদি তার মৃত্যু উদ্দেশ্য করা হতো, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা বলতেন, তারা তাকে হত্যা করতে পারেনি, ক্রুশবিদ্ধ করতে পারেনি; বরং তিনি স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছেন।

এ জন্যই কতক আলেম বলেছেন, ﴿إِنِّي مُتَوَفِّيكَ﴾ ‘‘নিশ্চয় আমি তোমাকে ওয়াফাত দান করবো’’। অর্থাৎ আমি তোমার দেহ ও রূহ গ্রহণ করে নিবো। যেমন বলা হয়, توفيت الحساب واستوفيته ‘‘আমি তার থেকে পরিপূর্ণ হিসাব গ্রহণ করেছি’’। التوفي শব্দটি দ্বারা দেহ ব্যতীত শুধু রূহ কবয করা বুঝায় এবং আলাদা কোনো আলামত ছাড়া উভয়টি একসাথে কবয করাও বুঝায় না। কখনো কখনো সেটা দ্বারা নিদ্রা উদ্দেশ্য হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,      

﴿اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا ۖ فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾

‘‘মৃত্যুর সময় আল্লাহ রূহসমূহ কবয করেন আর যে এখনো মরেনি নিদ্রাবস্থায় তার রূহ কবয করেন। অতঃপর যার মৃত্যুর ফায়ছালা কার্যকরী হয় তাকে রেখে দেন এবং অন্যদের ‘রূহ’ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফেরত পাঠান। যারা চিন্তা-গবেষণা করে তাদের জন্য এর মধ্যে বড় নিদর্শন রয়েছে’’। (সূরা যুমার: ৪২) এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘রূহ’ কবয করা হয়, তাকে আটকিয়ে রাখা হয় আবার ছেড়েও দেয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُم بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُم بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيهِ لِيُقْضَىٰ أَجَلٌ مُّسَمًّى ۖ ثُمَّ إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾

‘‘তিনিই রাত্রিকালে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কিছু উপার্জন করো তা জানেন। পুনরায় তোমাদের সেই কর্মজগতে ফেরত পাঠান, যাতে জীবনের নির্ধারিত সময়-কাল পূর্ণ হয়। সবশেষে তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি জানিয়ে দেবেন তোমরা কি কাজে লিপ্ত ছিলে’’। (সূরা আনআম: ৬০) শাইখুল ইসলামের কথা এখানেই শেষ।

ইমাম কাযী ইয়ায রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতে ঈসা আলাইহিস সালামের আগমন এবং দাজ্জালকে হত্যা করা সত্য ও সঠিক। কেননা এ মর্মে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। বিবেক-বুদ্ধি প্রসূত দলীল ও শরী‘আতের দলীল এটিকে বাতিল করে না। সুতরাং ঈসা আলাইহিস সালামের আগমন ও দাজ্জালের আগমন সাব্যস্ত করা আবশ্যক। তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন, এটি সাব্যস্ত করাও আবশ্যক। কিছু কিছু মু‘তাযিলা ও জাহমীয়া দাজ্জালের আগমন ও ঈসা আলাইহিস সালামের আগমনকে অস্বীকার করেছে। তারা মনে করেছে ঈসা আলাইহিস সালামের আগমন সংক্রান্ত হাদীছগুলো আল্লাহ তা‘আলার বাণী: «وخاتم النبيين» ‘‘তিনি সর্বশেষ নবী’’ এবং নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী, «لانبي بعدي» ‘‘আমার পরে আর কোনো নবী নেই’’ দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে মুসলিমদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে যে, আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবীর পরে আর কোনো নবী নেই। তার শরী‘আত কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, তা কখনো রহিত হবে না।

এটি একটি ভ্রান্ত দলীল। কেননা ঈসা আলাইহিস সালামের আগমণের উদ্দেশ্য এ নয় যে, তিনি নবী হয়ে আগমন করবেন এবং নতুন শরী‘আত নিয়ে আসবেন ও আমাদের শরী‘আতকে রহিত করে দিবেন। উপরোক্ত হাদীছে কিংবা অন্যান্য হাদীছে এমন কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায় না। বরং এখানে আলোচিত একাধিক সহীহ হাদীছ এবং ঈমান অধ্যায়ে অতিক্রান্ত হাদীছগুলো প্রমাণ করে যে, তিনি একজন ন্যায়পরায়ন শাসক হয়ে আগমন করবেন ও আমাদেরকে শরী‘আত দ্বারা ফায়ছালা করবেন। সেই সঙ্গে মানুষ আমাদের শরী‘আতের যে বিষয়গুলো পরিত্যাগ করেছে, তিনি তা পুনরুজ্জীবিত করবেন। শাইখুল ইসলামের কথা এখানেই শেষ।

আল্লামা শাইখ সালেহ ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ বলেন, আমি বলছি, বর্তমান সময়ে কিছু মূর্খ লেখক এবং অর্ধ শিক্ষিত লোক তাদের বিবেক-বুদ্ধির উপর নির্ভর করে ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণকে অস্বীকার করে। তারা এ বিষয়ে বর্ণিত সহীহ হাদীছগুলোকে অস্বীকার করে থাকে অথবা এগুলোর ভুল ব্যাখ্যা করে। রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন এবং আকীদার যেসব বিষয় তার থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, মুসলিমদের তা বিশ্বাস করা আবশ্যক। কেননা এগুলোতে বিশ্বাস করা ঐসব গায়েবী বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ তা‘আলা তার রসূলকে অবগত করেছেন।

আল্লামা ইমাম সাফারায়েনী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ঈসা আলাইহিস সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরী‘আতের স্বীকৃতি প্রদান করবেন। কেননা তিনি এ উম্মতের জন্য একজন দূত স্বরূপ। যেমনটি ইতিপূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। তিনি দুনিয়াতে নামার আগেই আসমানে অবস্থানকালে আল্লাহ তা‘আলার আদেশে এ শরী‘আতের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জেনে নিবেন।

ইমাম সাফারায়েনী রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেন, কতিপয় আলেম মনে করে ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করার আগে ইসলামী শরী‘আতের হুকুম-আহকাম উঠে যাবে। একাধিক সহীহ হাদীছের বর্ণনা অনুপাতে এ ধারণা সম্পূর্ণ বাতিল। হাদীছগুলো প্রমাণ করে যে, তিনি এ শরী‘আতের হুকুম-আহকামের স্বীকৃতি প্রদান করবেন এবং সেটার সংস্কার সাধন করবেন। কেননা মুহাম্মাদী শরী‘আত হলো সর্বশেষ শরী‘আত এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ রসূল। বিনা আসমানী শরী‘আতে দুনিয়া কখনো টিকে থাকবে না। দুনিয়া টিকে থাকা আসমানী শরী‘আতের তাকলীফ বিদ্যমান থাকার উপর নির্ভরশীল। পৃথিবীতে যতদিন আল্লাহ আল্লাহ বলা হবে ততো দিন কিয়ামত হবে না। ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ তার ‘তাযকিরা’ নামক গ্রন্থে এ কথা উল্লেখ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, ঈসা আলাইহিস সালাম পৃথিবীতে কতদিন থাকবেন, এ বিষয়ে ইমাম তাবারানী এবং ইবনে আসাকির আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিনি মানুষের মাঝে চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। ইমাম আহমাদ, ইবনে আবী শায়বা, আবু দাউদ, ইবনে জারীর এবং ইবনে হিববান প্রমুখ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। অতঃপর মৃত্যুবরণ করবেন। মুসলিমগণ তার জানাযা সালাত পড়বে। আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশেই তাকে দাফন করা হবে। ইমাম সাফারায়েনীর উক্তি এখানেই শেষ।


[1]. সহীহ বুখারী ৩৪৪৮, অধ্যায়: কিতাবু আহাদীছুল আম্বীয়া। মুসলিম, অধ্যায়: ঈসা (আ.)এর অবতরণ।

[2]. সহীহ বুখারী ৩৪৪৮, অধ্যায়: কিতাবু আহাদীছুল আম্বীয়া। মুসলিম, অধ্যায়: ঈসা (আ.)এর অবতরণ।

[3]. মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল ঈমান।