المبحث الأول: الإيمان بأشراط الساعة - প্রথম অনুচ্ছেদ: কিয়ামতের আলামতসমূহের প্রতি ঈমান।

শেষ দিবস উপস্থিত হওয়ার পূর্বে যেহেতু অনেক আলামত প্রকাশিত হয়ে তা নিকটবর্তী হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করবে এবং সেগুলোকে যেহেতু কিয়ামতের আলামত হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে, তাই উক্ত আলামতসমূহ থেকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় আলামত এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। কেননা কিয়ামতের আলামতসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। এ বিষয়টির সাথে আকীদার গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  ﴿اقْتَرَبَتْ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ﴾ ‘‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে এবং চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়েছে’’। (সূরা কামার: ১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

 ﴿فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَن تَأْتِيَهُم بَغْتَةً ۖ فَقَدْ جَاءَ أَشْرَاطُهَا ۚ فَأَنَّىٰ لَهُمْ إِذَا جَاءَتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ﴾

‘‘তারা কি শুধু এ জন্য অপেক্ষা করছে যে, কিয়ামত তাদের নিকট হঠাৎ এসে পড়ুক? কিয়ামতের আলামতসমূহ তো এসেই পড়েছে। অতঃপর কিয়ামত এসে পড়লে উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?’’। (সূরা মুহাম্মাদ: ১৮) أشراط অর্থ নিদর্শন ও লক্ষণসমূহ। এর একবচন হলো شرط. ‘রা’ বর্ণে যবর দিয়ে পড়লে অর্থ হবে আলামত বা নিদর্শন।

 ইমাম বগবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করা কিয়ামতের অন্যতম আলামত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ قَرِيبٌ﴾ ‘‘তুমি জানো কি সম্ভবত কিয়ামত আসন্ন?’’ (সূরা শুরা: ১৭) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿هَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ﴾

‘‘তারা তো তাদের অজ্ঞাতসারে হঠাৎ কিয়ামত আসার অপেক্ষা করছে’’। (সূরা যুখরুফ: ৬৬) কিয়ামতের দিন যেহেতু অতি নিকটে এবং তা যেহেতু নিশ্চয়ই সংঘটিত হবে, তাই ঐদিনকে আল্লাহ তা‘আলা আগামীকাল বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ﴾

‘‘প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক যে, আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে?’’। (সূরা হাশর: ১৮) আজকের দিনের পরের দিনকে غد আগামীকাল বলা হয়।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿إِنَّهُمْ يَرَوْنَهُ بَعِيدًا وَنَرَاهُ قَرِيبًا﴾

‘‘তারা সেটিকে অনেক দূরে মনে করছে। কিন্তু আমি দেখছি তা অতি নিকটে’’। (সূরা মা‘আরেজ: ৬-৭)। ইমাম তিরমিযী আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ وَأشار بالسَّبَّابَةَ وَالْوُسْطَى»

‘‘আমি এবং কিয়ামত এক সাথে প্রেরিত হয়েছি। একথা বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতের শাহাদাত আঙ্গুল এবং মধ্যমা আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন’’।[1]

সহীহ বুখারী (৫৫৭) ও মুসলিমে ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّمَا بَقَاؤُكُمْ فِيمَن مضى قَبْلَكُمْ مِنَ الأُمَمِ من صَلاةِ الْعَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ»

‘‘পূর্বের জাতিসমূহের তুলনায় দুনিয়াতে তোমাদের অবস্থানের মেয়াদ হল আসরের সালাতের সময় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত’’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّمَا بَقَاؤُكُمْ فِيمَا سَلَفَ قَبْلَكُمْ مِنَ الأُمَمِ مَا بَيْنَ صَلاةِ الْعَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ»

‘‘পূর্বের জাতিসমূহের তুলনায় দুনিয়াতে তোমাদের অবস্থানের মেয়াদ হল আসরের সালাতের সময় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত’’। উভয় বর্ণনার মধ্যে কেবল শব্দগত পার্থক্য রয়েছে।

কিয়ামতের বিষয়টি যেহেতু খুবই ভয়াবহ, তাই এ ব্যাপারে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ জন্যই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের আলামত এবং সেটার লক্ষণগুলো খুব বেশি বর্ণনা করেছেন। কিয়ামতের আগে যেসব ফিতনার আবির্ভাব হবে তিনি তাও বলেছেন। উম্মতকে তিনি এ বিষয়ে সতর্ক ও সাবধান করেছেন, যাতে তারা এর জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে।

তবে কিয়ামত আসার সময়কাল কেবল আল্লাহ তা‘আলাই জানেন। বান্দাদের কল্যাণার্থেই তিনি এর সময়কে তাদের থেকে গোপন রেখেছেন। কিয়ামত দিবসের ভয়াবহ বিপদ থেকে বাঁচার জন্য বান্দারা যেন সবসময় প্রস্ত্তত থাকে, তাই তিনি এর আগমনকাল গোপন রেখেছেন। অনুরূপ তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুর সময়ও আড়াল করে রেখেছেন, যাতে করে সে সবসময় মৃত্যুর জন্য সর্বোচ্চ প্রস্ত্তত থাকে এবং ইহধামের মায়া-মমতা ছেড়ে পরপারের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে ও সেজন্য প্রয়োজনীয় আমলও করতে থাকে।

আল্লামা সাফারায়েনী রহিমাহুল্লাহ বলেন, জেনে রাখা আবশ্যক যে, কিয়ামতের আলামত ও লক্ষণসমূহ তিন প্রকার। এক প্রকার আলামত প্রকাশিত হওয়ার পর অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আরেক শ্রেণীর আলামত প্রকাশিত হয়েছে; কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি; বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর তৃতীয় শ্রেণীর বড় আলামতগুলো বের হওয়ার পর কিয়ামত সংঘটিত হবে। পুতির মালার সুতা ছিড়ে গেলে যেমন সবগুলো পুতি একের পর এক পর্যায়ক্রমে পড়ে যায়, ঠিক তেমনি বড় আলামতসমূহ থেকে একটি বের হয়ে গেলে পর্যায়ক্রমে সবগুলোই প্রকাশিত হবে।

প্রথমত: কিয়ামতের যেসব আলামত প্রকাশিত হয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তার মধ্যে রয়েছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন, তার মৃত্যুবরণ, বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয় এবং আমীরুল মুমিনীন উছমান ইবনে আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যাকান্ড অন্যতম। হুযায়ফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উছমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার মাধ্যমেই ফিতনার সূচনা হয়েছে।

আল্লামা সাফারায়েনী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, উছমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার পর সংঘটিত যুদ্ধ-বিগ্রহ, বিভিন্ন ফির্কা যেমন খারেজী, রাফেযী ইত্যাদি বাতিল ফির্কার আবির্ভাব হয়। অতঃপর শাইখ সাফারায়েনী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কিয়ামতের আরো যেসব আলামত রয়েছে, তার মধ্যে মিথ্যুক দাজ্জালদের আগমন। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবি করবে। আরবদের রাজত্ব চলে যাওয়াও কিয়ামতের অন্যতম আলামত। ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। ধন-সম্পদ বেড়ে যাওয়া কিয়ামতের আলামতসমূহের মধ্যে গণ্য। ইমাম বুখারী এবং অন্যান্য ইমামগণ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। কিয়ামতের আলামতসমূহের মধ্যে আরো রয়েছে যে, কিয়ামতের আগে অনেক ভূমিকম্প হবে, ভূমিধস হবে, চেহারা পরিবর্তনের শাস্তি হবে এবং উপরে উঠিয়ে নিক্ষেপ করার শাস্তিও হবে। এমনি আরো অনেক আলামত সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন, যা প্রকাশিত হয়েছে এবং অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।

দ্বিতীয়ত: কিয়ামতের মধ্যম পর্যায়ের কিছু আলামত রয়েছে। এগুলো বের হয়েছে; কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। বরং এগুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে। এগুলোর সংখ্যা প্রচুর।

নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكُونَ أَسْعَدَ النَّاسِ بِالدُّنْيَا لُكَعُ ابْنُ لُكَعٍ»

‘‘নিকৃষ্ট লোকের নিকৃষ্ট সন্তানরা দুনিয়ার সম্পদ লাভে সর্বাধিক ধন্য না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা’’।[2]

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, ইমাম তিরমিযী এবং যিয়া আল-মাকদেসী রাহিমাহুল্লাহ হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। لكع অর্থ হলো ক্রিতদাস, বোকা এবং নিকৃষ্ট লোক। হাদীছের অর্থ হলো নিকৃষ্ট, অভদ্র, বোকা এবং তাদের অনুরূপ লোকেরা মানুষের নেতা না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না। কিয়ামতের আরো আলামত যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ الصَّابِرُ فِيهِمْ عَلَى دِينِهِ كَالْقَابِضِ عَلَى الْجَمْرِ»

‘‘মানুষের নিকট এমন একটি সময় আসবে, যখন জ্বলন্ত আগুনের স্ফুলিঙ্গ হাতের মুষ্ঠির মধ্যে রাখার মতই দীন নিয়ে টিকে থাকা কঠিন হবে’’।[3] ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুল্লাহ আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَبَاهَى النَّاسُ فِي الْمَسَاجِدِ»

‘‘যতদিন লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব না করবে ততদিন কিয়ামত হবে না’’।[4] ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে হিববান এবং ইবনে মাজাহ আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, আখেরী যামানায় মূর্খ আবেদ-ইবাদাতকারী এবং ফাসেকদের আবির্ভাব হবে’’। আবু নুআইম এবং হাকেম আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে, চাঁদ উঠার সময় বলা হবে, এটি দুই রাতের চাঁদ। চাঁদ খুব মোটা হয়ে উঠার কারণেই এমন কথা বলা হবে। এ অর্থে ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম তাবারানী একটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আলামত হচ্ছে, চন্দ্র মোটা হয়ে উদিত হবে’’।[5] মসজিদকে সচরাচর যাতায়াতের রাস্তা বানানোও কিয়ামতের একটি আলামত।

ইমাম সাফারায়েনী রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেন, সহীহ বুখারী এবং অন্যান্য কিতাবে আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, আমি তোমাদেরকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একটি হাদীছ শুনাবো। আমি ব্যতীত তোমাদেরকে অন্য কেউ তা শুনাবে না। আমি রসূল তাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,

«إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَكثر الْجَهْلُ ويكثر الزنى وَيكثر شْرب الْخَمْرُ ويقل الرجال ويكثر النساء حتى يكون لخمسين إمرأة القيم الواحد»

‘‘নিশ্চয় কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে জ্ঞান উঠিয়ে নেয়া হবে, অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে, যেনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে, মদ্যপান ছড়িয়ে পড়বে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এমনকি পঞ্চাশজন মহিলার দেখা-শুনা করার জন্য মাত্র একজন পুরুষ বিদ্যমান থাকবে’’।[6]

আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক মজলিসে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় একজন গ্রাম্য লোক এসে নবীজীকে এই বলে প্রশ্ন করলো যে, কিয়ামত কখন হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কথা চালিয়ে যেতে থাকলেন। কিছু লোক মন্তব্য করলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকটির প্রশ্নকে অপছন্দ করেছেন। আবার কিছু লোক বললো, তিনি তার কথা শুনতে পাননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচনা শেষে বললেন, প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বললো, এ তো আমি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

«إِذَا ضُيِّعَتِ الْأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ قَالَ كَيْفَ إِضَاعَتُهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ إِذَا أُسْنِدَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ»

‘‘যখন আমানতের খেয়ানত হবে তখন কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে বলে মনে করবে। লোকটি আবার প্রশ্ন করলো, কিভাবে আমানতের খেয়ানত করা হবে? নবীজী বললেন, যখন অযোগ্য লোকদেরকে দায়িত্ব দেয়া হবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করতে থাকো’’।[7]

তৃতীয়ত: কিয়ামতের বেশ কিছু বড় বড় আলামত রয়েছে। এসব বড় বড় আলামত প্রকাশিত হওয়ার পরপরই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। এগুলো হচ্ছে, মাহদীর আত্মপ্রকাশ, দাজ্জালের আগমন, ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামের অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন, কাবাঘর ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া, বিশাল আকারের ধোঁয়ার আগমন, কুরআন উঠে যাওয়া, পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়া, যমীন থেকে দাববাতুল আরয নামক একটি অদ্ভুত প্রাণী বের হওয়া এবং আদনের গর্ত থেকে বিশাল আকারের আগুন বের হওয়া। অতঃপর শিঙ্গায় তিনবার ফুঁ দেয়া হবে। প্রথমবার ফুঁ দেয়ার সময় সমস্ত মানুষ ঘাবড়ে যাবে, দ্বিতীয়বার ফুঁ দেয়ার সময় মানুষ অচেতন ও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে যাবে এবং সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে, তৃতীয়বার ফুঁ দেয়ার সময় পুনরুত্থান ও হাশর-নাসর সংঘটিত হবে।

মোটকথা কিয়ামতের বিষয়টি অত্যন্ত ভয়াবহ। অথচ আমরা গাফেল হয়ে আছি। কিয়ামতের অনেক আলামত বের হয়ে গেছে। আমরা আল্লাহর কাছে দু‘আ করি, তিনি যেন আমাদেরকে দীনের উপর অটল রাখেন, ইসলামের উপর মৃত্যু দান করেন এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সমস্ত ফিতনা থেকে হেফাযত করেন।

এ আলামতগুলো আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত ও রিসালাতের সত্যতা প্রমাণ করে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাকে ভবিষ্যতে সংঘটিতব্য যেসব বিষয়ের জ্ঞান দান করেছেন, তা তিনি যেভাবে সংবাদ দিয়েছেন, হুবহু সেভাবেই সংঘটিত হয়েছে। এগুলো বান্দার ঈমান মজবুত করে।

এসব আলামত সম্পর্কে সংবাদ দেয়া বান্দাদের জন্য রহমত স্বরূপ। যাতে তারা সতর্ক হয়, প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে এবং তাদের দীনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণার উপর থাকতে পারে। সুতরাং সেই সম্মানিত নবীর প্রতি আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক, যিনি সুস্পষ্টভাবে মানুষের নিকট দীনের দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং পূর্ণভাবে তার বিবরণ দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদানকারী।

এসব আলামতের মধ্যে সর্বপ্রথম আলামত হলো মাহদীর আত্মপ্রকাশ, অতঃপর দাজ্জালের আগমন অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালামের আগমন। অতঃপর বাকি বড় আলামতগুলো ধারাবাহিকভাবে একের পর এক প্রকাশিত হবে।


[1]. সহীহ মুসলিম ২৯৫১, অধ্যায়: কিয়ামতের আলামত, বুখারী ৪৯৩৬, ইবনে মাজাহ ৪৫।

[2]. সহীহ: তিরমিযী ২২০৯।

[3]. সহীহ: তিরমিযী ২২৬০।

[4]. মুসনাদে আহমাদ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে, হাদীছ নং- ৭২৯৮।

[5]. তাবরানী। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৫৭৭৪।

[6]. সহীহ বুখারী ৫২৩১, অধ্যায়: কিতাবুল ইলম, মুসনাদে আহমাদ।

[7]. সহীহ বুখারী ৬৪৯৬, অধ্যায়: কিতাবুর রিকাক, মুসনাদে আহমাদ।