ثالثا: ختم الرسالات ببعثة محمد صلى الله عليه وسلم - তৃতীয়ত: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে প্রেরণের মাধ্যমে নবী-রসূল প্রেরণের ধারাবাহিকতা সমাপ্ত করা হয়েছে

আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণের মাধ্যমে নবী-রসূল আগমণের ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ﴾

‘‘মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে কারোর পিতা নন। কিন্তু তিনি আল্লাহর রসূল এবং সর্বশেষ নবী’’। (সূরা আল আহযাব: ৪০)

নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«وَإِنَّهُ سَيَكُونُ في أمتي بَعْدِي ثَلَاثُونََ كذَّابُونَ كُلُّهُمْ يَزعم أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي»

‘‘আমার উম্মতের মধ্যে আমার পরে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমন ঘটবে। তারা সকলেই নবুওয়াতের দাবী করবে। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোনো নবী নেই’’।[1]

নবীদের আগমন বন্ধ হয়ে যাওয়া রসূলদের আগমন বন্ধ হওয়ার দাবি রাখে। কেননা নবী হলেন আম আর রসূল হলেন খাস তথা নবুওয়াতের মর্যাদার চেয়ে রিসালাতের মর্যাদা বেশি। তাই কুরআনের আয়াত ও হাদীছের মাধ্যমে যেহেতু নবী আগমনের পথ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে, তাই রসূল আসার দরজা আরো উত্তমভাবেই বন্ধ করা হয়েছে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের মাধ্যমে নবুওয়াত খতম হয়ে গেছে -এর অর্থ হলো তার নবুওয়াতের পরে আর কোনো নবুওয়াত হবে না এবং তার শরী‘আতের পরে আর কোনো শরী‘আত আসবে না।

আখেরী যামানায় ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণ এর পরিপন্থী নয়। কেননা তিনি যখন আসবেন, তখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরী‘আত অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদত করবেন; তার পূর্বের শরী‘আত অনুযায়ী নয়। কেননা তার আগের শরী‘আত রহিত হয়ে গেছে। সুতরাং তিনি এ শরী‘আতের মূলনীতি ও শাখা-প্রশাখা বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই আল্লাহর ইবাদত করবেন। অতএব তিনি হবেন আমাদের নবীর খলীফা এবং তার উম্মতের মধ্যকার শাসকদের অন্যতম।

অতএব সর্বশেষ নবী সর্বোত্তম কিতাব, পূর্ণতম শরী‘আত, সর্বশেষ্ঠ মিল্লাত এবং পরিপূর্ণ দীনসহ প্রেরিত হয়েছেন। তিনি এমন এক শরী‘আত নিয়ে এসেছেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত সর্বকালের সর্বস্থানের সমস্ত মানবতার সমস্ত প্রয়োজন পূরণের জন্য যথেষ্ট। তার মাধ্যমে নবীদের মালা গাঁথা শেষ হয়ে গেছে। তার পর আর কোনো নবী আসবে না।


সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম এবং অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াহুল্লাহ আনহু  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন,

«إِنَّ مَثَلِي وَمَثَلَ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِي كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى دارا فَأَكملها وأحسنها إِلَّا مَوْضِعَ لَبِنَةٍ فجعل الناس يدخلون ويعجبون منها ويقولون لولا موضع لبنة»

‘‘আমার এবং আমার পূর্বে নবীদের উদাহরণ হলো, যেমন কোনো লোক একটি সুন্দর প্রাসাদ বা বিল্ডিং নির্মাণ করলো। সে সেটার নির্মাণ কাজ পূর্ণ করলো এবং সুন্দর করলো কিন্তু প্রাসাদের এক কোণায় এক ইট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রেখে দিল। লোকেরা এই প্রাসাদে প্রবেশ করে ইহার সৌন্দর্য দেখে মু হয়ে বলতে লাগলো, একটি ইট রাখার জায়গা ফাঁকা না থাকলে প্রাসাদটি কতইনা সুন্দর হতো! ইমাম মুসলিম আরেকটু বাড়িয়ে বলেছেন যে, فجئت فختمت الأنبياء ‘‘অতঃপর আমি এসে নবীদের আগমণের দরজা বন্ধ করে দিয়েছি।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ অর্থে আরেকটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে যে,

«مِنْ زَاوِيَةٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَطُوفُونَ بِهِ وَيَعْجَبُونَ لَهُ وَيَقُولُونَ هَلَّا وُضِعَتْ هَذِهِ اللَّبِنَةُ قَالَ فَأَنَا اللَّبِنَةُ وَأَنَا خَاتِمُ النَّبِيِّينَ»

‘‘লোকেরা এ প্রাসাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় ইহার সৌন্দর্য দেখে মু হয়ে বলতে লাগলো, এ ফাঁকা জায়গায় একটি ইট রাখা হয় না কেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি হলাম বিল্ডিংএর সে শেষ ইট। আমিই সর্বশেষ নবী’’। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

  «كَانَتْ بَنُو إِسْرَائيلَ تَسُوسُهُمُ الانْبِيَاءُ، كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ، وَإِنَّهُ لا نَبِيَّ بَعْدِي، وَسَيَكُونُ خُلَفَاءُ» (بخارى:3455)

‘‘বনী ইসরাঈলদেরকে তাদের নবীগণ পরিচালনা করতেন। যখন একজন নবী মারা যেতেন তখন অন্য একজন নবী তার স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু আমার পরে আর কোনো নবী নেই। অবশ্য আমার পরে অনেক খলীফা হবেন’’।

জাবের ইবনে সামুরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিঠে কবুতরের ডিম সদৃশ একটি ছিলমোহর দেখেছি। ইমাম মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ ফতহুল বারীতে বলেন, ইমাম কুরতুবী বলেছেন, অনেক সহীহ হাদীছের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাম কাঁধের নিকট নবুওয়াতের লাল রং এর ছিল মোহর সুস্পষ্ট ছিল। সেটা যখন ছোট হতো কবুতরের ডিমের মতো পরিলক্ষিত হতো এবং যখন বড় হতো, তখন হাতের মুষ্ঠি পরিমাণ ছিল। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন।

আলেমগণ বলেছেন, বাম কাধের নিকট নবুওয়াতের ছিলমোহর থাকার কারণ হলো, সেখানে রয়েছে قلب বা অন্তকরণ। ইমাম সুহাইলী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাম কাঁধের নিকট নবুওয়াতের ছিলমোহর থাকার কারণ হলো, তিনি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মাসুম ছিলেন। আর এ স্থান দিয়েই যেহেতু শয়তান প্রবেশ করে, তাই তার বাম কাধের নিকট ছিলমোহর লাগিয়ে শয়তানের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

হাফেয ইবনে কাছীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের প্রতি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়ে বিশেষ রহমত করেছেন। সেই সঙ্গে তার মাধ্যমে নবী-রসূলদের আগমণের দরজা বন্ধ করে আল্লাহ তা‘আলা উম্মতে মুহাম্মাদীকে সম্মানিত করেছেন এবং তার জন্য একনিষ্ঠ দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পবিত্র মুতাওয়াতির সুন্নাতে সংবাদ দিয়েছেন যে, তার পরে আর কোনো নবী নেই। যাতে করে মুসলিমগণ জানতে পারে যে, তার পরে যে কেউ নবুওয়াত দাবি করবে, সে গোমরাহ মিথ্যুক দাজ্জাল এবং পথভ্রষ্টকারী হিসাবে গণ্য হবে। যদিও তারা কাল্পনিক কাহিনী, ভেলকিবাজি, বিভিন্ন প্রকার যাদুমন্ত্র, তেলেসমাতি এবং অস্পষ্ট অর্থবিশিষ্ট কিছু লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু জ্ঞানী ও বিবেকবানদের নিকট এগুলো গোমরাহী ও অবাস্তব হিসাবেই ধরা পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা ইয়ামানের আসওয়াদ আনাসী এবং ইয়ামামার মুসায়লামা কাজ্জাবের হাতে এমন কিছু ভ্রান্তিকর অবস্থা এবং এমন অসত্য কথা বের করেছেন, যার মাধ্যমে প্রত্যেক জ্ঞানী ও বিবেকবান ব্যক্তিই বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, তারা দু’জন ছিল গোমরাহ ও মিথ্যুক। তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ হতে অভিশাপ বর্ষিত হোক। অনুরূপভাবে কিয়ামত পর্যন্ত নবুওয়াতের প্রত্যেক মিথ্যা দাবিদারের মিথ্যাচারিতা প্রকাশ হতেই থাকবে। মিথ্যুক দাজ্জালের মিথ্যাবাদিতা সুপ্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমেই তাদের আগমনের দরজা বন্ধ হবে। এসব মিথ্যুকের প্রত্যেকের মধ্যেই আল্লাহ তা‘আলা এমন কিছু জিনিস সৃষ্টি করবেন, যার মাধ্যমে আলেম ও মুমিনগণ তাদের মুখোশ উন্মুক্ত করতে সক্ষম হবেন। সেই সঙ্গে এটি হবে সৃষ্টির প্রতি আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ দয়া স্বরূপ।

আসল কথা হলো, তারা কোনো সৎকাজের আদেশ দেয়না এবং কোনো অসৎকাজ থেকেই নিষেধ করে না; তবে তারা নিজেদের প্রকৃত চেহারা গোপন রাখার জন্যই কখনো কখনো সেটা করে থাকে অথবা তারা নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্যই অসৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের দায়িত্ব পালন করার কথা বলে থাকে। সেই সঙ্গে তারা কথায় ও কাজে মিথ্যা ও পাপাচারে সীমালংঘন করে থাকে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿هَلْ أُنَبِّئُكُمْ عَلَىٰ مَن تَنَزَّلُ الشَّيَاطِينُ تَنَزَّلُ عَلَىٰ كُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٍ﴾

‘‘আমি কি তোমাদের জানাবো শয়তানরা কার উপর অবতীর্ণ হয়? তারা তো প্রত্যেক মিথ্যুক বদকারের উপর অবতীর্ণ হয়’’? (সূরা শুআরা: ২১-২৬)

নবী-রসূলদের অবস্থা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা তারা যা বলেন, যার আদেশ করেন এবং যা থেকে নিষেধ করেন, তারা তাতে সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ন এবং সুদৃঢ় হয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে তাদেরকে মুজিযা, সুস্পষ্ট প্রমাণাদি এবং উজ্জ্বল নির্দশণাবলী দ্বারা শক্তিশালী করা হয়। আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তাদের সকলের উপর সর্বদা অজস্র্ শান্তির ধারা বর্ষিত হোক।

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে প্রেরণ করার পর মানব জাতি আর কোনো নবী প্রেরণের প্রতি মুখাপেক্ষী নয়। কারণ তার শরী‘আত পরিপূর্ণ এবং মানুষের সকল প্রয়োজন পূরণের অঙ্গিকার রয়েছে তাতে। সুতরাং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের পর নতুন নবী প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা আছে কি?

কেউ যদি বলে উম্মত নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট উম্মতকে সংস্কার ও সংশোধন করার জন্য নতুন নবী পাঠানোর প্রয়োজন রয়েছে, তার জবাবে আমরা বলবো যে, শুধু সংস্কার ও সংশোধনের জন্যই কি অতীতে নবী পাঠানো হয়েছে, যাতে বর্তমান কালেও একই উদ্দেশ্যে নবী পাঠানোর প্রয়োজন পড়তে পারে? আসল কথা হলো অহীর বার্তা বহন করার জন্যই নবী পাঠানো হয়ে থাকে। আর নতুন রিসালাত পৌঁছানো বা পূর্ববর্তী রিসালাতের পূর্ণতার জন্য অথবা সেটাকে বিকৃতি ও পরিবর্তন-পরিবর্ধনের কবল থেকে পবিত্র করার জন্যই নবীদেরকে পাঠানো এবং তাদের নিকট অহী প্রেরণ করার প্রয়োজন পড়ে।

নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়ে যেহেতু কুরআন ও সুন্নাতে মুহাম্মাদীকে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং দীন ইসলামকে তার মাধ্যমে পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়েছে, তাই নতুন নবী পাঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এখন শুধু সংস্কারকদের প্রয়োজন রয়েছে। ঈষৎ পরিবর্তনসহ ‘কাদীয়ানী ফির্কার জবাব’ নামক বই থেকে উপরোক্ত কথাগুলো উল্লেখ করা হলো।

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী বানিয়ে পাঠানোর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা নবুওয়াত ও রিসালাতের দরজা বন্ধ করার ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ﴾

‘‘মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে কারোর পিতা নন। কিন্তু তিনি আল্লাহর রসূল এবং সর্বশেষ নবী’’। (সূরা আহযাব: ৪০)

নির্দ্বিধায় গ্রহণযোগ্য কথা হলো, ইসলামের সমস্ত বিধি-বিধান ও হুকুম-আহকামসহ কুরআনুল কারীম যেভাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাযিল হয়েছে হুবহু সেভাবে আমাদের মাঝে সংরক্ষিত রাখার মাধ্যমে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের আইন-কানুন তৈরী করা, সীরাতে নববী বিদ্যমান থাকা এবং কুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকারী সুন্নাতগুলো সঠিকভাবে বিদ্যমান থাকা আমাদের মাঝে রসূল জীবিত অবস্থায় থাকার মতোই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً﴾

‘‘তারপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়ো, তাহলে তা আল্লাহ ও তার রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাকো। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম’’। (সূরা নিসা: ৫৯)

আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে আসার অর্থ হলো তার কিতাবের দিকে ফিরে আসা আর তার মৃত্যুর পর তার দিকে ফিরে আসার অর্থ হলো তার সুন্নাতের দিকে ফিরে আসা। এ কারণেই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণের পর পৃথিবীবাসী আর কোনো নবী বা রসূল কিংবা নতুন শরী‘আত পাঠানোর প্রতি মুখাপেক্ষ নয়। কেননা যদিও আল্লাহ তা‘আলা নবী-রসূল পাঠান, তাহলেও তারা নতুন কিছু আনয়ন করতে পারবেন না এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, তার উপর কিছুই বাড়াতে পারবেন না। তারা দীনের মূলনীতি, আকীদা কিংবা শরী‘আতের মধ্যে কিছুই বাড়াতে পারবেন না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা দীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং শরী‘আতকে পূর্ণতা দিয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا﴾

‘‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিলাম, আমার নিয়ামতকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসাবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা: ৩)

রসূল পাঠানোর উদ্দেশ্য যদিও দীনের এ রিসালাত পৌঁছিয়ে দেয়া এবং মানুষকে সেদিকে দাওয়াত দেয়া, তথাপিও এটি হলো উম্মতের আলেম-উলামাদেরও দায়িত্ব। সুতরাং তাদের উপর আবশ্যক হলো মানুষের কাছে দীনের এ দায়িত্ব পৌঁছিয়ে দেয়া। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে নবুওয়াত খতম না হওয়ার দাবি করবে অথবা যে ব্যক্তি কাউকে নবুওয়াতের দাবিতে সত্যায়ন করবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে গিয়ে মুরতাদে পরিণত হবে।

এ জন্যই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যু বরণ করার পর যে নবুওয়াত দাবি করেছিল সাহাবীগণ তাকে মুরতাদ বলে গণ্য করেছেন। তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং তাদেরকে মুরতাদ হিসাবে নামকরণ করেছেন। পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কালের আলেমগণ তাদের মুরতাদ হওয়ার উপর ঐক্যমত পোষণ করেছেন।


[1]. আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ৫৪০৬।