صفة الإسراء والمعراج - কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসরা ও মিরাজের ধরণ

হাফেয ইবনে কাছীর রাহিমাহুল্লাহ তার তাফসীরে বলেন, সঠিক কথা হচ্ছে, তাকে জাগ্রত অবস্থায় রাতের বেলা মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছে; স্বপ্নযোগে নয়। তিনি বোরাকের উপর আরোহন করে ভ্রমণ করেছেন। তিনি যখন মাসজিদুল আকসার দরজা পর্যন্ত পৌঁছালেন, তখন দরজার নিকট বোরাক বেধে মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করলেন। অতঃপর মাসজিদের কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে তাহিয়াতুল মাসজিদ দুই রাক‘আত সালাত পড়লেন। অতঃপর তার জন্য সিড়ি আনয়ন করা হলো। এটি হচ্ছে বিভিন্ন স্তরবিশিষ্ট সিড়ি, যা দ্বারা উপরে উঠা হয়। সুতরাং এ সিড়ির মাধ্যমে তিনি প্রথমে দুনিয়ার আসমানে আরোহন করলেন। অতঃপর দ্বিতীয় আসমানে আরোহন করলেন। অতঃপর তিনি অন্যান্য আসমানে আরোহন করলেন। প্রত্যেক আকাশের নৈকট্যশীল ফেরেশতাগণ তাকে সংবর্ধনা জানালো। সমস্ত আসমানের নবীদের মর্যাদা ও সম্মান অনুযায়ী তাদেরকে সালাম দিলেন। ষষ্ঠ আসমানে মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালামের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছেন এবং সপ্তম আসমান ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। অতঃপর তিনি উভয়ের অবস্থানস্থল অতিক্রম করেছেন। আল্লাহ তার প্রতি, মূসা আলাইহিস সালামের প্রতি এবং সমস্ত নবীর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। পরিশেষে তিনি এমন স্থানে পৌঁছে গেলেন, যেখান থেকে তিনি কলম দিয়ে লেখার আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন। অর্থাৎ যা কিছু হবে তাক্বদীর লেখার কলম দিয়ে তা লেখার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি সিদরাতুল মুনতাহা দেখতে পেলেন। আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব, স্বর্ণের প্রজাপতি এবং বিভিন্ন রং তাকে আচ্ছাদিত রেখেছে ও তাকে ছায়া দিচ্ছে। সেই সঙ্গে ফেরেশতারা সেটাকে ঘিরে রেখেছে। সেখানে জিবরীল আলাইহিস সালামকে তার আসল আকৃতিতে দেখতে পেলেন। তার রয়েছে ছয়শত পাখা। সেখানে তিনি সবুজ রঙের রাফরাফ দেখলেন, যা দিগন্তকে বন্ধ করে রেখেছে। তিনি সেখানে বাইতুল মা’মুর দেখতে পেলেন। তিনি দেখলেন, পৃথিবীতে কাবা নির্মাণকারী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বাউতুল মামুরের সাথে হেলান দিয়ে বসে রয়েছেন। কেননা ইহাই হলো আসমানের কাবা। প্রতিদিন বাইতুল মামুরে ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করে সেখানে ইবাদত করার জন্য। একবার যারা প্রবেশ করে কিয়ামত পর্যন্ত তারা দ্বিতীয়বার তাতে প্রবেশ করার সুযোগ পায় না।

ঐরাতে তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছেন। সেখানে তার উপর ৫০ ওয়াক্ত সালাত  ফরয করা হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে পাঁচ ওয়াক্তে পরিণত করেছেন। এখান থেকেই সালাতের মর্যাদা সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। অতঃপর তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসে নেমে আসলেন এবং তার সাথে নবীগণও নেমে আসলেন। সালাতের সময় হলে তিনি তাদেরকে নিয়ে সালাত পড়েছেন। এটি সম্ভবত সেদিনকার ফজরের সালাত  ছিল। কেউ কেউ মনে করে তিনি আসমানে তাদেরকে নিয়ে সালাত পড়েছেন এবং নামাযে তাদের ইমামতি করেছেন। তবে এ বিষয়ে বর্ণনাগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসে ইমামতি করেছেন। কিছু কিছু বর্ণনা প্রমাণ করে যে, প্রথমবার প্রবেশ করার সময় সালাত  পড়েছেন। তবে ফিরে আসার সময় সালাত পড়াই অধিক সুস্পষ্ট। কেননা তিনি যখন নবীদের পাশদিয়ে নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছেন, তখন তাদের সম্পর্কে একজন একজন করে জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করেছেন। জিবরীল তাকে বলে দিয়েছেন। এমতটিই যথার্থ। কারণ তাকে প্রথমে উর্ধ্বজগতে রবের সান্নিধ্যে ডেকে নেয়া হয়েছিল। যাতে করে আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তার উম্মতের উপর ফরয করেন। যে জন্য তাকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা শেষ হলে তিনি এবং অন্যান্য নবীগণ বাইতুল মুকাদ্দাসে একত্রিত হয়েছেন। ইমামতি করার জন্য তাকে আগে বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে তার সম্মান ও ফযীলত সাব্যস্ত হয়েছে। জিবরীল আলাইহিস সালামের ইঙ্গিতেই তিনি নামাযে নবীদের ইমামতি করেছেন। অতঃপর তিনি বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে বের হয়ে বোরাকে আরোহন করে অন্ধকার থাকতেই মক্কায় ফিরে আসলেন। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন।