ذكر خصائص الرسول محمد صلى الله عليه وسلم إجمالا - সংক্ষেপে রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিছু বৈশিষ্ট্য

রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা দ্বারা তিনি অন্যান্য নবীদের চেয়ে বিশেষ ফযীলতের অধিকারী হয়েছেন। এমনি তার এমন আরো কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে, যা দ্বারা তিনি তার উম্মত থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লাভ করেছেন।

অন্যান্য নবীদের তুলনায় তার কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য:

(১) তিনি হলেন সর্বশেষ নবী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا﴾

‘‘মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে কারোর পিতা নন। কিন্তু তিনি আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত’’। (সূরা আহযাব: ৪০) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«وَإِنَّهُ سَيَكُونُ في أمتي بَعْدِي ثَلَاثُونََ كذَّابُونَ كُلُّهُمْ يَزعم أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي»

‘‘আমার উম্মতের মধ্যে আমার পরে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমন ঘটবে। তারা সকলেই নবুওয়াতের দাবী করবে। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোনো নবী নেই’’।[1]

(২) তাকে মাকামে মাহমুদ প্রদান করা হয়েছে। আর এটিই হলো শাফা‘আতে উযমা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴾  ﴿عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا‘‘তোমার প্রতিপালক তোমাকে অচিরেই একটি প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন’’। (সূরা বানী ইসরাঈল: ৭৯)

বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত শাফা‘আতের দীর্ঘ হাদীছে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা যখন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত বনী আদমকে একই যমীনে একত্রিত করবেন তখন তারা পরস্পর বলাবলি করবে, তোমরা কি দেখছো না, তোমরা কী অবস্থায় আছো? তোমরা কি দেখছো না তোমাদের কেমন কষ্ট হচ্ছে? তোমরা কি এমন কাউকে খুঁজবে না, যিনি তোমাদের জন্য তোমাদের প্রভুর নিকট সুপারিশ করবেন? অতঃপর তারা দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করার জন্যে পর্যায়ক্রমে আদম, নুহ, ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসা ইবনে মারইয়ামের কাছে গমণ করবে। সকলেই অক্ষমতা প্রকাশ করে বলবে, তোমরা আমাকে বাদ দিয়ে অন্যের কাছে যাও। পরিশেষে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসবে। তিনি বলবেন, আমি তা করবো। অতঃপর তিনি শাফা‘আত করার অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত সিজদায় পড়ে থাকবেন’’।[2] উপরোক্ত হাদীছের মাধ্যমে সমগ্র সৃষ্টির উপর আমাদের নবীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় এবং সম্মানিত স্থান মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে তার বিশেষত্ব প্রমাণিত হয়।

(৩) তিনি সমস্ত জিন-ইনসানের নিকট প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ  إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا﴾  ‘‘হে মুহাম্মাদ! বলো, হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল হিসাবে এসেছি’’। (সূরা আরাফ: ১৫৮)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾

‘‘আর আমি তো তোমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে পাঠিয়েছি। কিন্তু বেশীর ভাগ লোক জানেনা’’। (সূরা সাবা: ২৮) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَىٰ عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا﴾

‘‘বড়ই বরকত সম্পন্ন তিনি, যিনি তারঁ বান্দার উপর নাযিল করেছেন এ ফুরকান। যাতে সে সমগ্র সৃষ্টির জন্য সতর্ককারী হন’’। (সূরা ফুরকান: ১)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ﴾ ‘‘হে মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে সৃষ্টিজগতের জন্য আমার রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি’’। (সূরা আন্বীয়া: ১০৭) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنصِتُوا فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَىٰ قَوْمِهِم مُّنذِرِينَ﴾

 ‘‘আর যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে নিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাতে তারা কুরআন শোনে। যখন তারা সেখানে পৌঁছলো তখন পরস্পরকে বললো, চুপ করো। যখন তা পাঠ করা শেষ হলো তখন তারা সতর্ককারী হয়ে নিজ নিজ কওমের কাছে ফিরে গেল’’। (সূরা আহকাফ: ২৯)

সুতরাং কুরআন-সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র মানব ও জিন জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছেন।

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যেসব আয়াত নাযিল করা হয়েছে, তাতে জিন-ইনসান সকলকে সম্বোধন করা হয়েছে। কেননা তার রিসালাত তাদের সকলের জন্যই। যদিও আরবদের মধ্যে শিরক, অশ্লীলতা, পাপাচার, অন্যায়-অপকর্ম অনুপ্রবেশ করার কারণেই কেবল তার উপর কুরআন নাযিল হয়েছে। তবে মুসলিমদের ঐক্যমতে এটা সাব্যস্ত যে, কুরআনের যেসব আয়াত বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়েছে, সেগুলো উক্ত কারণের সাথেই খাস। কোনো মুসলিম বলেনি যে, তালাকের আয়াত, যিহারের আয়াত, লিআনের আয়াত, চোরের শাস্তি সংক্রান্ত আয়াত এবং সন্ত্রাসীদের শাস্তি সংক্রান্ত আয়াত ঐ ব্যক্তির সাথেই খাস, যাকে কেন্দ্র করে সেটা নাযিল হয়েছে।


[1]. আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ৫৪০৬।

[2]. বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুর্ রিকাক, শারহুল আকীদা আত-তাহাবীয়াহ, পৃষ্ঠা নং- ২০৪।