الأصل الثالث: الإيمان بالكتب - তৃতীয় মূলনীতি: আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান

আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করা ঈমানের অন্যতম রুকন। আসমানী কিতাবগুলোর প্রতি ঈমান আনয়নের অর্থ হলো দৃঢ় বিশ্বাস করা যে এগুলো সত্য ও সঠিক। আরো বিশ্বাস করা যে, এগুলো আল্লাহ তা‘আলার কালাম। তাতে রয়েছে হিদায়াত, নূর এবং যাদের প্রতি এগুলো নাযিল করা হয়েছে, তাদের জন্য এগুলোই যথেষ্ট।

আসমানী কিতাবগুলো থেকে আল্লাহ তা‘আলা যেগুলোর নাম উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর প্রতি আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি। যেমন কুরআন, তাওরাত, ইঞ্জিল ও যবুর। আর যেগুলোর নাম আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেন নি, সেগুলোর প্রতিও বিশ্বাস করি। কেননা আল্লাহ তা‘আলার আরো অনেক কিতাব রয়েছে, যা তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানে না।

মানুষের বিবেক-বুদ্ধি যেহেতু সীমিত এবং সেটা দ্বারা ক্ষতিকর ও কল্যাণকর বস্তুর মধ্যে পার্থক্য মোটামুটিভাবে বুঝতে সক্ষম হলেও তারা কল্যাণকর ও ক্ষতিকর বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জানতে সক্ষম নয়। তাই তাদের জন্য আসমান থেকে কিতাব পাঠানোর বিশেষ প্রয়োজন ছিল। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি দয়াশীল হয়ে নবী-রসূলদের মাধ্যমে অনেক কিতাব পাঠিয়েছেন।

সে সঙ্গে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ও চিন্তা-চেতনার উপর প্রবৃত্তির প্রেরণা প্রাধান্য লাভ করে। প্রবৃত্তির তাড়না ও পার্থিব হীন স্বার্থ তাদের বিবেক-বুদ্ধি নিয়ে খেল-তামাশা করে। সুতরাং মানুষকে যদি তাদের সীমিত বিবেক-বুদ্ধির উপর ছেড়ে দেয়া হতো, তাহলে তারা পথভ্রষ্ট হতো। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলার হিকমত ও রহমতের দাবি অনুযায়ী নির্বাচিত রসূলদের উপর তিনি এ কিতাবগুলো নাযিল করেছেন। যাতে তারা মানুষের জন্য এসব কিতাবের দিক-নির্দেশনা বাতলে দিতে পারেন, তাতে যেসব ইনসাফপূর্ণ হুকুম-আহকাম, উপকারী উপদেশ এবং মানবতার সংশোধনের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে আগত আদেশ-নিষেধগুলো সবিস্তারে বর্ণনা করতে পারেন। মানব জাতির পিতা আদমকে যখন জান্নাত থেকে যমীনে নামিয়ে দেয়া হলো, তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾

‘‘এরপর যখন আমার পক্ষ থেকে হিদায়াত তোমাদের কাছে পেঁŠছাবে তখন যারা আমার হিদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের জন্য থাকবে না কোনো ভয় এবং তারা চিন্তিতও হবে না’’। (সূরা আল বাকারা: ৩৮)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿يَا بَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي فَمَنِ اتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾

‘‘হে বনী আদম! তোমাদের কাছে যখন তোমাদের মধ্য থেকে রসূলগণ এসে তোমাদেরকে আমার আয়াতসমূহ বিবৃত করে, তখন যারা সতর্ক হবে এবং নিজেকে সংশোধন করবে, তাদের কোনো ভয় থাকবেনা এবং চিন্তিতও হবে না’’। (সূরা আরাফ: ৩৫)

আসমানী কিতাবগুলোর ব্যাপারে লোকেরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক শ্রেণীর লোক সমস্ত আসমানী কিতাবকে অস্বীকার করেছে। নবী-রসূলদের দুশমন কাফের, মুশরিক ও দার্শনিকরা এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

আরেক শ্রেণীর লোক সমস্ত আসমানী কিতাবেই বিশ্বাস করে। এরা হলো ঐসব মুমিন, যারা সমস্ত নবী-রসূল এবং তাদের উপর অবতীর্ণ সমস্ত কিতাবের উপর ঈমান আনয়ন করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ﴾

‘‘রসূল তার রবের পক্ষ হতে যে হিদায়াত নাযিল করা হয়েছে, তার প্রতি ঈমান এনেছেন। মুমিনগণও ঈমান এনেছেন। তারা সকলেই আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি এবং তার রসূলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। তারা বলে, আমরা রসূলদের একজনকে অন্যজন থেকে পৃথক করিনা। আর তারা বলে, আমরা নির্দেশ শুনেছি এবং অনুগত হয়েছি। হে আমাদের প্রভু! আমরা গুনাহ মাফের জন্য তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। আমরা তোমার দিকেই ফিরে যাবো’’। (সূরা বাকারা: ২৮৫)

আরেক শ্রেণীর লোক কিছু আসমানী কিতাবের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে এবং বাকিগুলোর প্রতি কুফুরী করেছে। এরা হলো ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টান এবং তাদের অনুসারীগণ। তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা কিছু নাযিল করেছেন তার উপর ঈমান আনো, তখন তারা বলে,

﴿نُؤْمِنُ بِمَا أُنزِلَ عَلَيْنَا وَيَكْفُرُونَ بِمَا وَرَاءَهُ وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَهُمْ﴾

‘‘আমরা কেবল আমাদের উপর যা কিছু নাযিল হয়েছে তার উপর ঈমান আনি। এর বাইরে যা কিছু এসেছে তার প্রতি তারা কুফুরী করছে। অথচ তা সত্য এবং তাদের কাছে পূর্ব থেকে যে কিতাব রয়েছে তার সত্যায়নকারী’’। (সূরা বাকারা: ৯১)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ﴾

‘‘তোমরা কি কিতাবের এক অংশের উপর ঈমান আনছো এবং অন্য অংশের সাথে কুফুরী করছো? অতএব তোমাদের যারাই এমনটি করে তাদের প্রতিফল দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ভোগ ছাড়া আর কী হতে পারে? কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত হবে। তোমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহ বেখবর নন’’। (সূরা বাকারা: ৮৫)

কুরআনের এক অংশের প্রতি ঈমান আনয়ন করা অথবা আসমানী কিতাবসমূহের কোনোটির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং কুরআনের কোনো অংশ অথবা কোনো আসমানী কিতাবকে অস্বীকার করা সমস্ত আসমানী কিতাবকে অস্বীকার করার মতই কুফুরী। কেননা সমস্ত আসমানী কিতাব এবং সমস্ত নবী-রসূলের উপর ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক। সেই সঙ্গে ঈমানের বিষয়গুলোর প্রতি একসাথে এমনভাবে অবস্থায় বিশ্বাস করা আবশ্যক, যাতে কোনো পার্থক্য ও বিভক্তি করণ এবং মতভেদ পরিলক্ষিত না হয়। যারা কিতাবের ব্যাপারে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে এবং মতভেদ করেছে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দোষারোপ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ نَزَّلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِي الْكِتَابِ لَفِي شِقَاقٍ بَعِيدٍ﴾

‘‘আল্লাহ তো যথার্থ সত্য অনুযায়ী কিতাব নাযিল করেছেন। কিন্তু যারা কিতাবের ব্যাপারে মতভেদ করেছে, তারা নিজেদের বিরোধের ক্ষেত্রে সত্য থেকে অনেক দূরে চলে গেছে’’। (সূরা বাকারা: ১৭৬)

প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং বাতিল ধারণার বশবতী হয়ে বনী আদমের বিরাট অংশ আসমানী কিতাবগুলো কিংবা কতিপয় কিতাব অস্বীকার অথবা একই কিতাবের কিয়দাংশ অস্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে তাদের ধারণা, বিবেক-বুদ্ধি, রায় এবং মস্তিস্কপ্রসূত কিয়াসই সর্বোচ্চ দলীল। তারা নিজেদেরকে মহাজ্ঞানী এবং দার্শনিক হিসাবে নামকরণ করে থাকে। রসূল ও তাদের অনুসারীদেরকে নিয়ে তারা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে এবং তাদেরকে মূর্খ বলে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَلَمَّا جَاءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ فَرِحُوا بِمَا عِندَهُم مِّنَ الْعِلْمِ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾

‘‘তাদের নিকট যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ নিয়ে তাদের রসূলগণ এসেছিলেন তখন তারা নিজের কাছে বিদ্যমান জ্ঞানের দম্ভ করতো এবং তারা যা নিয়ে ঠাট্রা্-বিদ্রুপ করতো তাই তাদেরকে বেষ্টন করলো’’ (সূরা মু‘মিন:৮৩)।

আর রসূলদের অনুসারীদের ব্যাপারে কথা হলো, তারা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে অবতীর্ণ প্রত্যেক কিতাবের প্রতিই বিশ্বাস স্থাপন করে। তারা এগুলোর মাঝে কোনো পার্থক্য করে না। পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর প্রতি ঈমান আনয়ন করা হবে সংক্ষিপ্তভাবে। অন্তর ও জবানের মাধ্যমে এগুলোর স্বীকৃতি দেয়া আবশ্যক। আর কুরআনের প্রতি ঈমান আনয়ন করতে হবে বিস্তারিতভাবে। কুরআনের প্রতি অন্তর ও জবান দিয়ে স্বীকৃতি প্রদান করা আবশ্যক, সেটাতে যা আছে তার অনুসরণ করা জরুরী এবং ছোট-বড় সব বিষয়েই কুরআনের অনুশাসন মেনে চলা ফরয। এই বিশ্বাস করাও কুরআনের প্রতি ঈমান আনয়নের মধ্যে শামিল যে, সেটা কালাম, আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিল হয়েছে, সেটা সৃষ্টি নয়; বরং তার ছিফাত, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে সেটা এসেছে এবং আখেরী যামানায়[1] তার দিকেই ফিরে যাবে।

আল্লাহ তা‘আলার হিকমতের দাবি অনুযায়ী, পূর্বকালের কিতাবগুলো ছিল নির্দিষ্ট সময়-সীমার জন্য। সেগুলোর সংরক্ষণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মানুষের মধ্য থেকে সেটার বাহকদেরকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّا أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِن كِتَابِ اللَّهِ وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَاءَ﴾

‘‘আমি তাওরাত নাযিল করেছি। তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো। আল্লাহর অনুগত নবীগণ সে অনুযায়ী ইয়াহূদীদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা করতো। আর এভাবে রববানী ও আহবারগণও। কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এবং তারা ছিল এর উপর সাক্ষী’’। (সূরা আল মায়িদা: ৪৪)

আর কুরআনুল কারীমের ব্যাপারে কথা হলো আল্লাহ তা‘আলা সেটাকে কিয়ামত পর্যন্ত সর্বযুগের সর্বস্থানের সমগ্র জাতির জন্য নাযিল করেছেন। তিনি নিজেই ইহাকে সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। কেননা পৃথিবীতে মানব জাতির অস্তিত্ব শেষ না হওয়া পর্যন্তকুরআনের দায়-দায়িত্ব শেষ হবেনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ﴾

‘‘নিশ্চয়ই আমি এ উপদেশ নাযিল করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক’’। (সূরা হিজর: ৯) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ﴾

‘‘সম্মুখ অথবা পশ্চাৎ হতে মিথ্যা এতে প্রবেশ করতে পারে না। এটি প্রজ্ঞাময় প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ’’। (সূরা ফুচ্ছিলাত: ৪২)

মানব সমাজের সমস্ত বিবাদ-বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কুরআনকে ফায়ছালাকারী বানানো আবশ্যক এবং সমস্ত মতভেদের ক্ষেত্রে কুরআনের দিকে ফিরে আসা জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাব ব্যতীত অন্যের নিকট বিচার-ফায়ছালা নিয়ে যাওয়াকে তাগুতের নিকট বিচার-ফায়ছালা চাওয়া বলে উল্লেখ করেছেন।  আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ﴾

‘‘তুমি কি তাদেরকে দেখো নি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তারা সে সমস্ত বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে? তারা বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য তাগুতের কাছে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে, যাতে তারা যেন তাগুতের প্রতি কুফুরী করে’’। (সূরা নিসা: ৬০) الطاغوت শব্দটি الطغيان থেকে فعلون এর ওজনে আধিক্য বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। الطغيان অর্থ সীমালংঘন করা।

যারা সমস্ত আসমানী কিতাবের উপর ঈমান আনয়নের দাবি করে, অথচ কুরআন ও সুন্নাহর বিচার-ফায়ছালা বাদ দিয়ে কতিপয় তাগুতের বিচার-ফায়ছালা মেনে নেয়, আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিন্দা করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে জাতি আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ কিতাব বাদ দিয়ে অন্য কিছু দিয়ে বিচার-ফায়ছালা করবে, তাদের পরস্পরের মধ্যেই যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগে যাবে। মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের অবস্থা পরিবর্তন হওয়া, তাদের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হওয়া এবং তাদের মধ্যে মারামারি শুরু হওয়ার এটিই সবচেয়ে বড় কারণ। কেননা কিতাবের প্রতি ঈমানের দাবিতেই সেটার বিচার-ফায়ছালা মেনে নেয়া আবশ্যক। যে ব্যক্তি কিতাবের প্রতি ঈমান আনয়নের দাবি করে, অথচ সে কিতাব বাদ দিয়ে অন্য কিছুর নিকট বিচার-ফায়ছালা নিয়ে যায়, সে তার কথায় মিথ্যাবাদী। মূলতঃ আল্লাহর কিতাব অবিভাজ্য। জীবনে সকল ক্ষেত্রেই কিতাবের কুরআনের সব হুকুম বাস্তবায়ন করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক। আকীদা, আমল ও জাগতিক লেন-দেন, ব্যক্তিগত কাজ-কর্ম, অপরাধ ও দ-বিধি, শিষ্টাচার এবং আচার-আচরণের ক্ষেত্রেও কিতাবের দাবি বাস্তবায়ন করা এবং সেটার হুকুম মেনে নেয়া আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْكَافِرُونَ﴾

‘‘যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা কাফের’’। (সূরা মায়েদা: ৪৪)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الظَّالِمُونَ﴾

‘‘যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা যালেম’’। (সূরা আল মায়েদা: ৪৫) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الفَاسِقُوْنَ﴾

‘‘যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা ফাসেক’’। (সূরা আল মায়েদা: ৪৭) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا﴾

‘‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতোক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক মনে করবে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবুল করে নিবে’’। (সূরা আন নিসা: ৬০-৬৫)

এখানে কসমের মাধ্যমে জোর দিয়ে ঐসব লোক থেকে ঈমান নাকোচ করা হয়েছে, যারা ঝগড়া-বিবাদ নিষ্পত্তির ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ফায়ছালাকারী হিসাবে মেনে নেয় না। সেই সঙ্গে বক্ষ প্রশস্ত করে এবং নত হয়ে আল্লাহর হুকুম কবুল করে নেয়া আবশ্যক। অনুরূপ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার অবতীর্ণ কিতাব দ্বারা ফায়ছালা করে না, তিনি তাকে কাফের, যালেম ও ফাসেক বলেছেন। যদিও সে নিজেকে মুমিন ও ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী বলে দাবি করে।

ধ্বংস হোক ঐসব লোক, যারা তাগুতের তৈরী আইন-কানুন দ্বারা আল্লাহর কিতাব পরিবর্তন করেছে, অথচ তারা ঈমানের দাবি করে। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সৎকাজের তাওফীক পাওয়া যায় না এবং সুমহান আল্লাহর শক্তি ছাড়া অন্যায় কাজ থেকে বেঁচে থাকার কোনো শক্তি নেই।


[1]. আখেরী যামানায় এক রাতেই কুরআন উঠিয়ে নেয়া হবে। তখন মানুষের অন্তর এবং মুসহাফ থেকে কুরআন উঠে যাবে। তাদের অন্তরে ও মুসহাফে কুরআনের কোন অংশই অবশিষ্ট থাকবেনা। পৃথিবী তখন পাপাচারে ভরে যাবে। এমনকি আল্লাহ আল্লাহ বলার মত কোন লোক থাকবে না। তখন সেই নিকৃষ্ট লোকদের উপর কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন।