প্রিয় মুসলিম ভাই! আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ও আপনাকে ইসলামী আকীদা জানা, মেনে চলা এবং এটার দিকে দাওয়াত দেয়ার তাওফীক দিন। আপনি জেনে রাখুন যে, নাজাতপ্রাপ্ত দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের নিকট ইসলামী আকীদার মূলনীতিগুলো হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান, ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান, আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান, নবী-রসূলদের প্রতি ঈমান, আখেরাত দিবসের প্রতি ঈমান এবং তাক্বদীরের কল্যাণ-অকল্যাণের প্রতি ঈমান আনয়ন করা।
আকীদার এ মূলনীতিগুলোর পক্ষে কুরআন ও হাদীছের অনেক দলীল রয়েছে। মুসলিম উম্মাহর আলেমগণ এগুলো আকীদা ও ঈমানের মূলনীতি হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ﴾
‘‘তোমরা তোমাদের মুখম-ল পূর্ব বা পশ্চিম দিকে প্রত্যাবর্তিত করার মধ্যে কোন ছাওয়াব নেই; বরং পূণ্য তার, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে’’। (সূরা আল বাকারা: ১৭৭)
তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনয়ন সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ﴾
‘‘আমি প্রত্যেক বস্ত্ত সৃষ্টি করেছি নির্দিষ্ট পরিমাপে’’। (সূরা কামার: ৪৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿آَمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آَمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ﴾
‘‘রসূলের উপর তার রবের পক্ষ হতে যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি তিনি ঈমান এনেছেন এবং ঈমানদারগণ। তারা সবাই আল্লাহকে, তার ফেরেশতাদেরকে, তার কিতাবসমূহকে ও তার রসূলদেরকে বিশ্বাস করেছে এবং তাদের বক্তব্য হচ্ছে: আমরা আল্লাহর রসূলদের একজনকে অন্যজন থেকে আলাদা করি না’’। (সূরা আল বাকারা: ২৮৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَمَن يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا﴾
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ, তার ফেরেশতাবর্গ, তার কিতাবসমূহ, তার রসূলগণ ও পরকালের প্রতি কুফুরী করলো সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহুদূর চলে গেলো’’। (সূরা আন নিসা: ১৩৬)
সহীহ হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন,
أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ
‘‘তুমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে (১) আল্লাহ পাকের উপর (২) তার ফেরেশতাদের উপর (৩) তার কিতাবসমূহের উপর (৪) তার নবী-রসূলদের উপর (৫) আখেরাত বা শেষ দিবসের উপর এবং (৬) তাক্বদীরের ভালো-মন্দের উপর’’।[1]
আকীদার এ বিরাট মূলনীতিগুলোকে ঈমানের রুকন বলেও নামকরণ করা হয়। সমস্ত নবী-রসূল এবং সমস্ত আসমানী শরী‘আত এগুলো ঈমানের রুকন ও আকীদার মূলনীতি হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। আসমানী কিতাবসমূহ এ মূলনীতিগুলোসহ নাযিল হয়েছে। ঈমানের গ-- থেকে বের হয়ে যারা কাফেরে পরিণত হয়েছে, তারা ব্যতীত অন্য কেউ এগুলোকে অথবা এগুলো থেকে কোনো কিছু অস্বীকার করতে পারে না। যেমন-
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا أُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَلَمْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ أُولَٰئِكَ سَوْفَ يُؤْتِيهِمْ أُجُورَهُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا﴾
‘‘যারা আল্লাহ ও তার রসূলদের সাথে কুফুরী করে, আল্লাহ ও তার রসূলদের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে আমরা কারো প্রতি ঈমান আনয়ন করি ও কারো প্রতি কুফুরী করি। আর তারা কুফর ও ঈমানের মাঝখানে একটি পথ বের করতে চায়, তারা সবাই আসলে কট্টর কাফের। আর এহেন কাফেরদের জন্য আমি অবমাননাকর শাস্তি তৈরী করে রেখেছি। বিপরীত পক্ষে যারা আল্লাহ ও তার রসূলদেরকে মেনে নেয় এবং তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না, তাদেরকে আমি অবশ্যই পুরস্কার দান করবো। আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়’’। (সূরা আন নিসা: ১৫০-১৫২)
এ হলো আকীদার বিরাট মূলনীতিগুলো এবং ঈমানের সুদৃঢ় ও মজবুত রুকনগুলোর বিশদ ব্যাখ্যা বিরণ প্রদান করা দরকার। আমরা এ কিতাবে যথাসাধ্য এ মূলনীতিগুলোর ব্যাখ্যা করবো ইনশা-আল্লাহ।
[1]. সহীহ মুসলিম, হা/৮, সহীহ বুখারী, হা/৫০, ইবনে মাজাহ, হা/৬৩, আবূ দাউদ, হা/৪৬৯৫।