দাউদ ‘আলাইহিস সালামের পবিত্র জীবনের অবস্থা ও ঘটনাবলী আমাদের জন্য যে সমস্ত জ্ঞান ও উপদেশ পেশ করেছে তা যদিও অতিশয় ব্যাপক, তবুও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য এবং মূল্যাবান পরিণাম বিশেষভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
আল্লাহ তা‘আলা যখন কাউকে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী করেন এবং তার ব্যক্তিত্বকে বিশেষ মর্যাদায় সম্মানিত করতে ইচ্ছে করেন, যখন তাঁর স্বভাবজাত যোগ্যতাসমূহকে বাল্যকাল থেকেই দীপ্তিমান করে তুলতে থাকেন এবং তার ললাট দীপ্তিমান নক্ষত্রের ন্যায় উজ্জ্বল পরিদৃষ্ট হতে থাকে। যেমন, দাউদ ‘আলাইহিস সালামকে যখন পয়গম্বর এবং উচ্চ শ্রেণির রাসূল মনোনীত করা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ছিল, তখন জীবনের প্রাথমিক স্তরেই তাগুতের মতো যালিম ও প্রবল প্রভাবশালী রাজাকে তার হত্যা করিয়ে তার সাহস ও বীরত্ব এবং তা দৃঢ় সংকল্প ও দৃঢ়পদতার যোগ্যতাকে এমনভাবে প্রকাশ করে দিলেন যে, সমগ্র বনী ইসরাঈল তাকে নিজেদের প্রিয় নেতা এবং বরেণ্য পথ প্রদর্শকরূপে মান্য করতে লাগল।[1]
অনেক সময় আমরা কোনো একটি বস্তুকে মামুলী এবং সাধারণ মনে করি, কিন্তু অবস্থা ও ঘটনাবলী পরে প্রকাশ করে যে, এটি অতি মূল্যবান বস্তু। যেমন, দাউদ ‘আলাইহিস সালামের শৈশবের অবস্থাবলীর মধ্যে পরবর্তীকালে মুজাহিদসুলভ সত্যের সংরক্ষণ, আল্লাহ তা‘আলার আহকামকে দৃঢ়রূপে ধারণের সাথে দাওয়াত প্রদান এবং নবুওয়্যাতকালের অবস্থাবালীর মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে তাই উপরোক্ত দাবীর জ্বলন্ত প্রমাণ।[2]
সর্বদা খলীফাতুল্লাহ (নবী ও রাসূল) এবং নাফরমান ও বে-দীন বাদশাহদের মধ্যে এ প্রভেদ দৃষ্ট হবে যে, প্রথম দলের মধ্যে সর্বপ্রকার প্রতাপ-প্রতিপত্তি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও বিনয় ও নম্রতা এবং মানবজাতির খিদমত প্রদীপ্ত চিহ্ন দেখা যাবে। আর শেষোক্ত দলের মধ্যে অহংকার, আমিত্ব, যুলুম ও জবরদস্তীর প্রাবল্য থাকবে। তারা (জনসেবার পরিবর্তে) আল্লাহর সৃষ্ট মানব জাতিকে নিজেদের শান্তি ও আমোদ-উপভোগের যন্ত্রস্বরূপ মনে করবে।
আল্লাহ তা‘আলার বিধান এই যে, যে ব্যক্তি সম্মান ও উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হওয়ার পর যে পরিমাণ আল্লাহ তা‘আলার শোকর করে এবং তাঁর দয়া অনুগ্রহ যে পরিমাণ স্বীকার করে, সে পরিমাণই তাকে বেশি পুরষ্কার ও সম্মান প্রদান করা হয়। দাউদ ‘আলাইহিস সালামের পূর্ণ জীবনটি এরই প্রমাণ।[3]
মাযহাব, ধর্ম যদিও আধ্যাত্মিকতার সাথে অধিক সংশ্লিষ্ট, কিন্তু পার্থিব ক্ষমতা (খিলাফত) এর বড় পৃষ্ঠপোষক। অথ্যাৎ ধর্ম ও ধর্ম সঙ্গত সমাজ দ্বীন এবং পার্থিব অবস্থার সংশোধনের যিম্মাদার। আর পার্থিব ক্ষমতা তথা খিলাফত হলো ধর্মে বর্ণিত ন্যায়নীতির সংরক্ষক। এ মর্মে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাণী সুপ্রসিদ্ধ ‘‘নিঃসন্দেহে, আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমতার অধিকারী শাসকের দ্বারা অন্যায় দমনের সে কাজ গ্রহণ করে থাকেন, যা কুরআন মাজীদের দ্বারা সম্পন্ন হয় না।[4]
আল্লাহ তা‘আলা রাজ্য ও রাজত্ব প্রদানের জন্য কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে যা বর্ণনা করেছেন, তার সারমর্ম এই যে, সর্বপ্রথম মানুষের মনে এ বিশ্বাস জন্মিয়ে নেওয়া উচিৎ যে, রাজ্য ও রাজত্ব প্রদান করা এবং তা কেড়ে নেওয়া একমাত্র আল্লাহরই এখতিয়ারাধীন।
[2] প্রাগুক্ত।
[3] প্রাগুক্ত।
[4] প্রাগুক্ত।