৩.৮ সিয়াম অবস্থায় যা অবশ্য করণীয় - ২৪. সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে কী কী কাজ ও আমল অত্যাবশ্যক?

সিয়াম অবস্থায় অত্যাবশ্যকীয় আমলসমূহ:

১. পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত আদায় করা: কোন শরয়ী উযর না থাকলে সালাত মাসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে আদায় করা। জামা'আতে সালাত আদায়কে বিজ্ঞ ওলামায়ে কিরাম ওয়াজিব বলেছেন। যারা জামাআতের সাথে সালাত আদায় করে না তারা ২৭ গুণ সাওয়াব থেকে বঞ্চিততো হয়ই, উপরন্তু ফজর ও ঈশার জামা'আত পরিত্যাগকারীকে হাদীসে মুনাফিকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যারা অবহেলা করে বিনা ওযরে সালাত দেরী করে আদায় করে তার সালাত একশতবার পড়লেও তা কবুল হবে না বলে উলামায়ে কিরাম মন্তব্য করেছেন। আর মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় থেকে বিরত থাকতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধ ব্যক্তিকেও অনুমতি প্রদান করেননি।

২. মিথ্যা না বলা- কারণ মিথ্যা হলো বড় ধরনের কবীরা গুনাহ।

৩. গীবত না করা - আর তা হলো অসাক্ষাতে কারো দোষ-ত্রুটি বা সমালোচনা করা।

৪. চোগলখোরী না করা - আর তা হলো একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনকে কিছু বলে ক্ষেপিয়ে তোলা ও ঝগড়া লাগিয়ে দেওয়া।

৫. ধোকা না দেওয়া- ক্রয়-বিক্রয় ও অন্যান্য কাজে কাউকে প্রতারণা না করা।

৬. গান গাওয়া ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো থেকে বিরত থাকা- মধুর কণ্ঠে গাওয়া যৌন উত্তেজনামূলক গান থেকে আরো বেশি সাবধান থাকা।

৭. সকল প্রকার হারাম কাজ-কর্ম পরিহার করা - জাবের (রা.) বলেছেন,

যখন “তুমি রোযা রাখবে তখন যেন তোমার কর্ণ, চক্ষু এবং জিহ্বাও মিথ্যা ও হারাম কাজ থেকে রোযা রাখে। আর তুমি খাদেমকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকো। আত্মমর্যাদা ও প্রশান্ত ভাব যেন তোমার উপর বজায় থাকে। আর তোমার রোযার দিনটি যেন রোযা না রাখার দিনের সমান না হয়। (ইবন আবী শাইবাহ: ৮৮৮০)

৮. ইসলামকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুসরণ করা- মসজিদে যেমনভাবে ইসলাম তেমনি পরিবার, সমাজ, ব্যবসা এবং রাষ্ট্রীয় জীবনেও ইসলামকে একমাত্র জীবনবিধান হিসেবে বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ বলেন,

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে দাখিল হও পরিপূর্ণভাবে (অর্থাৎ জীবনের সর্বক্ষেত্রে)।” (সূরা ২; বাকারাহ ২০৮)।

৯. পাপাচার ত্যাগ করা সকল প্রকার অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা- নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“কতো সিয়াম পালনকারী আছে যাদের রোযা হবে শুধু উপোস থাকা। আর কতো লোক রাতের ইবাদতকারী আছে যাদের রাত জাগরণ ছাড়া ইবাদতের কিছুই হবে না। (অর্থাৎ পাপ কাজ থেকে বিরত না হওয়ার কারণে তার রোযা যেন রোযা নয়, তার রাতের সালাতও যেন ইবাদত নয়)।” (দারেমী: ২৭৬২)।

“তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তাকে গালাগালি ও তার সাথে মারামারি করতে আসে, সে যেন বলে ‘আমি রোযাদার’।” (মুসলিম: ১১৫১)

“শুধুমাত্র পানাহার ত্যাগের নাম রোযা নয়, প্রকৃত রোযা হলো (সিয়াম অবস্থায়) বেহুদা ও অশ্লীল কথা এবং কাজ থেকে বিরত থাকা।” (ইবনে খুযাইমা: ১৯৯৬)

“যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং অজ্ঞতা থেকে মুক্ত হতে পারেনি সে ব্যক্তির শুধুমাত্র পানাহার বর্জনের (এ সিয়ামে) আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।” (বুখারী: ৬০৫৭)।

১০. রোযা রাখা (ও অন্যান্য ইবাদত) একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য করা- আল্লাহ তাআলা বলেন,

“মানুষকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তাদের ইবাদত যেন শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য হয়।” (সূরা ৯৮; বাইয়্যেনাহ ৫)

১১. সকল হুকুম আহকাম পালনে নবী করীম (সা.)-এর তরীকা অনুসরণ করা- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“যে ব্যক্তি এমন (তরীকায়) কোন আমল করল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্দেশিত সেই কাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য তো হবেই না বরং তা হবে প্রত্যাখ্যাত।” (মুসলিম: ১৭১৮)

১২. সিয়াম ভঙ্গের সহায়ক কাজ-কর্ম পরিহার করা- স্বামী-স্ত্রীর আলিঙ্গন, চুম্বন বা একত্রে শয়ন জায়েয হলেও তা যেন রোযা ভঙ্গের পর্যায়ে নিয়ে না যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা।

১৩. অন্তরে ভয় ও আশা পোষণ করা- কোন অজানা ভুলের জন্য রোযাটি ভেঙ্গে যায় কি না এ ধরনের ভয় থাকা এবং আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান পাবো এ আশাও পোষণ করা। অন্তরকে এ দুয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য করে রাখতে হবে ।