(১) মাইয়্যেত দাফন করা ফরয। এমনকি কাফের মুশরেক হলেও। রাসূলুল্লাহ (সা.) চাচা আবু তালেবকে দাফন করার জন্য নবীজি নির্দেশ দিয়েছিলেন। (আহমাদ: ৮০৭) আল্লাহর নবীর নির্দেশে বদর যুদ্ধের দিন নিহত ২৪ জন কুরাইশ (কাফের) সর্দারের লাশ বদর প্রান্তরে একটি নোংড়া আবর্জনাপূর্ণ কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। (সহীহ বুখারী: ৩৯৭৬) উমাই বিন খালাফের লাশকে মাটি ও পাথরচাপা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
(২) দাফনের স্থান: সুন্নাত হচ্ছে, কবর স্থানে দাফন করা। আলাদা জায়গায় কবর খনন বা পৃথক পৃথক পারিবারিক কবরস্থান বানানো সমীচীন নয়। তাছাড়া কোন বুযুর্গের পাশে দাফন করার জন্য লাশ দূর দূরান্তে নিয়ে যাওয়া বিদ'আত। কেননা সাহাবায়ে কেরামের মাঝে এমন কোন নযীর নাই। তাছাড়া কাফের মুশরিকদের কবরের পাশে মুসলিমদের কবর দেওয়া জায়েয নেই। (আবু দাউদ: ৩২৩০) এমনকি বিজ্ঞ আলেমদের মতে বেনামাযীদেরকে নামাযী মুসলমানদের পাশে কবর দেওয়াও ঠিক নয়। কারণ, হাদীসে আছে- যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায তরফ করে, সে কুফরী করে বা কাফের হয়ে যায়। (নাউযুবিল্লাহ!) তাছাড়া নিজ ঘরে কবর দিতে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম: ৭৮০)। তবে নবী-রাসূলদের ব্যাপার ভিন্ন।
(৩) দাফনের সময়: নামাযের নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যেকোন সময় দাফন করা জায়েয। নিষিদ্ধ সময়গুলো হলো- (ক) সূর্য উদয় ও (খ) সূর্য অস্ত যাওয়ায় সময় এবং (গ) ঠিক দুপুরে সূর্য যখন মাথার উপরে থাকে।(মুসলিম: ৮৩১) তবে একান্ত জরুরি দেখা দিলে সেক্ষেত্রে এ তিন নিষিদ্ধ সময়েও দাফন করা যাবে। একান্ত আবশ্যক না হলে রাত্রেও দাফন করা বৈধ নয়। রাত্রের দাফনে রাসূলুল্লাহ (সা.) ভৎসনা করেছেন। (মুসলিম: ৯৪৩)
(৪) কবর বেশ গভীর, প্রশস্ত ও সুন্দর করে তৈরি করা ওয়াজিব। (নাসাঈ: ২০১৫, ২০১৬, ২০১৮) কবর ২ প্রকার: আমাদের দেশের প্রচলিত কবর হলো ‘শাক্কা’ কবর। আরব দেশে আরেক প্রকার কবর আছে সেটাকে বলা হয় লাহদ কবর। ঐ কবরে লম্বালম্বি একটি গর্ত করার পর নিচ দিয়ে পাশে আরেকটি গর্ত করা হয়। পরে নিচু দিয়ে লাশ ঐ গর্তে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এটাই হলো উত্তম। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এরূপ লাহদ কবরেই দাফন করা হয়েছিল। (ইবনে মাজাহ: ১৫৫৭) উহুদ যুদ্ধের শহীদদের একই ধরনের কবরে দাফন করা হয়েছিল।
(৫) দুই বা ততোধিক লাশ একই কবরে দাফন করা বৈধ। (সহীহ বুখারী: ১৩৪৮) কিন্তু মহিলা ও পুরুষ একই কবরে দাফন করবে না।
(৬) দূর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে মারা যাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ দেহ পাওয়া না গেলে যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুই গোসল, কাফন ও জানাযা শেষে দাফন করে নেবে। (ফাতাওয়া তাযিয়াহ পৃ. ২৩)।
(৭) হাড়ভাঙ্গা কবর খুঁড়তে গিয়ে আগে দাফনকৃত মাইয়্যেতের হাড় পাওয়া গেলে তা ভাঙ্গা যাবে না। কেননা, মৃতের হাড়ভাঙ্গা জীবিত লোকের হাড়ভাঙ্গার সমান অপরাধ। (আবু দাউদ: ৩২০৭) এ জন্য একান্ত আবশ্যক না হলে লাশের ময়না তদন্ত করতে দেওয়া বৈধ নয়।
(৮) মৃত নারীর গর্ভে জীবিত সন্তান থাকলে তা অপারেশন করে বের করে নেওয়া ওয়াজিব। (আহকামুল জানাইয)।