২.৪২ রোগ শয্যায় রোগীর করণীয় জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা হায়াত মউত সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে তকদীরের লিখনী। এ ভাগ্যলিপির উপর বিশ্বাস রাখা যেমন ঈমানের ভিত্তি, তেমনি এর উপর সন্তুষ্ট থাকাও অত্যাবশ্যক। রোগবালাই মানুষের জীবনের এক কঠিন ও কষ্টের অধ্যায়। রোগ শয্যা মানুষের এক নিদান কাল। আল্লাহ চাইলে মানুষ সেখান থেকে সুস্থ হয়ে উঠে, আর তিনি না চাইলে চির বিদায় নিয়ে চলে যেতে হয় কবরে। তাই এ অবস্থায় রোগীর কিছু করণীয় আছে। যা নিচে বিবৃত করা হলো।
(১) আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা পোষণ করা। (মুসলিম: ২৮৭৭)। অর্থাৎ আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন এমন আস্থা রাখা।
(২) পরকালের আযাবকে ভয় করা এবং আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন এ আশাও রাখা। (তিরমিযি: ৯৮৩, মিশকাত: ১৬১২)।
(৩) মৃত্যু কামনা না করা। ব্যথা বেদনা যত কষ্টই হোক নিজের মৃত্যু কামনা না করা। (আহমাদ: ২৫৬৪০) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুঃখ-কষ্টে পতিত হওয়ার কারণে তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। তবে যেন এ দু'আটি করে
হে আল্লাহ! আমাকে ততদিন পর্যন্ত জীবিত রাখ, যতদিন বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর হয়। আর তখনই আমাকে মৃত্যু দিও যখন মরে যাওয়া আমার জন্য কল্যাণকর হয়। (বুখারী: ৫৬৭১)
“আর সাবধান! কোন অবস্থাতেই আত্মহত্যা না করা। কেননা, আত্মহত্যা এক ভয়ানক কবীরা গুনাহ। মানসিক যন্ত্রণা বা পেরেশানী যত বেশিই হোক সবর করে থাকা। আত্মহত্যার ভয়াবহতা ও পরিণতি সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যে লোক পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুনে পুড়বে।চিরকাল সে জাহান্নামের ভেতর ঠিক ঐভাবেই লাফিয়ে পড়তে থাকবে। আর যে লোক বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে, (জাহান্নামে ঢুকে) সেখানেও জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে বিষ থাকবে। চিরকাল জাহান্নামের ভেতর সে বিষ পান করতে থাকবে। আর যে লোক লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের ভেতরও সেই লোহা তার হাতে থাকবে। চিরকাল সে (লোহা) দিয়ে নিজের পেটে (নিজেই) আঘাত করতে থাকবে।” (বুখারী: ৫৭৭৮)
এভাবে সে আত্মহত্যার পরিণাম ভােগ করতে থাকবে।
(৪) রোগীর অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, অন্যের হক ও দেনা-পাওনা পরিশোধ করে দেয়া। সক্ষমতা না থাকলে ওয়ারিশদের অসিয়ত করে যাওয়া। (বুখারী: ১৩৫১)। কেননা, অপরের সম্পদ আত্মসাতের কারণে পরকালে ঐ ব্যক্তির গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে অথবা। নিজের ইবাদত ঐ ব্যক্তি নিয়ে নেবে। (বুখারী: ৫৬৭১)।
(৫) দ্রুত অসিয়তনামা লিখে নেওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“(হে ঈমানদারেরা!) তোমাদের জন্যে এটাও ফরয করা হয়েছে যে, যদি তোমাদের মাঝে কোন লোকের মৃত্যু এসে হাজির হয় এবং সে যদি কিছু সম্পদ রেখে যায়, (তাহলে) ন্যায়ানুগ পন্থায় (তা বণ্টনের কাজে) তার পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের জন্যে অসিয়তের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, এটা পরহেযগার লোকদের ওপর (একান্ত) করণীয়।" (সূরা ২; বাকারা ১৮০) অসিয়তনামা লিখতে বিলম্ব না করা। ইবনে উমর (রা.) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যেদিন বলেছেন যে অসিয়তনামা না লিখে দুই রাত্রিও অতিবাহিত করা ঠিক নয়-এরপর থেকে অসিয়তনামা প্রস্তুত না করে আমি এক রাত্রিও যাপন করিনি। (বুখারী:২৭৩৮) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অসিয়তযোগ্য সম্পদ কারও কাছে থাকলে সে লোক যেন অসিয়ত লেখা ছাড়া দুই রাতও না কাটায়। (বুখারী: ২৭৩৮) আর অসিয়তনামা লিখবে ন্যায়নিষ্ঠভাবে।(সূরা ২; বাকারা:১৮০)।
(৬) রোগ শয্যায় আল্লাহকে বার বার ডাকাডাকি করা, দু'আ করা এবং বেশি বেশি তওবইস্তিগফার করা।
(৭) প্রস্তুতিস্বরূপ রোগী তার নখ কেটে, বগল ও নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করে রাখবে মরণ আসন্ন বুঝে খুবাইব (রা.) এরূপ করেছিলেন। (বুখারী: ৩৯৮৯, আবু দাউদ: ২৬৬০)।