এগুলো অনেক, তন্মধ্যে কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. খতীব সাহেব মুসল্লীদের সালাম দেবেন। প্রথম সালাম দেবেন মসজিদে প্রবেশের সময় যাকে সামনে পাবেন তাকে এবং দ্বিতীয় সালাম দেবেন মিম্বরে উঠে বসার পূর্ব মুহূর্তে। অর্থাৎ সালাম দিয়ে তিনি মিম্বরে বসবেন। (বুখারী: ১২৪০)
২. খুৎবা দেবেন মিম্বরে দাঁড়িয়ে অথবা কোন উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে। আর কিবলামুখী হলে মুস্তহাব হলো মিম্বর থাকবে ইমামের ডান পাশে। সে সময় মিম্বর ও কিবলার মাঝখানে একটি ছাগল অতিক্রম করার মতো জায়গা ছিল। আর মিম্বরটি ছিল কাঠের তৈরি। (শরহুল কাবির- ৫/২৩৫, হাশিয়াতুররাউদ অরমুরবি- ২০/৪৫২, ২/৪৫২)।
৩. সালাম দিয়ে বসার পর মুয়াযযিন আযান শেষ করার পূর্ব পর্যন্ত খতীব সাহেব মিম্বরে বসা অবস্থায় থাকবেন। (আবু দাউদ: ১০৯২, বুখারী: ৯২০, মুসলিম: ৮৬২)
৪. ইমাম মিম্বরে বসার পর মুয়াযযিনের আযান শুরু করা মুস্তাহাব। (বুখারী: ৯১২, ৯১৩, ৯১৫, ৯১৬)
৫. দাঁড়িয়ে খুৎবা দেওয়া। (মুসলিম: ৮৬২, বুখারী: ৯৩৬)
৬. দুই খুৎবার মাঝে সামান্য সময় বসা। এ বৈঠকে রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনকিছু বলতেন না। (বুখারী: ৯২০, মুসলিম: ৮৬২)। উক্ত বৈঠকে কতটুকু সময় ব্যয় করবে এ বিষয়ে কোন হাদীস খুঁজে পাওয়া যায় না। কেউ কেউ বলেছেন, দুই সিজদার মাঝখানে বসার সময়ের সমপরিমাণ বা সূরা ইখলাস পড়তে যতক্ষণ লাগে ততক্ষণ। (আবু দাউদ: ১০৯২)
৭. খুৎবা সংক্ষেপ করা এবং সালাত দীর্ঘ করা অর্থাৎ সালাত অপেক্ষা খুৎবা সংক্ষেপ করা, যাতে শ্রোতারা বিরক্ত না হয়। এতে তারা উপদেশগুলো মুখস্থ করে নিতে পারে এবং সুন্নাতেরও আমল হয়। (মুসলিম: ৮৬৯, ৮৬৬, আবু দাউদ: ১১০৭, ১১০৬, নাসাঈ: ১৪১৪)
৮. সাধ্যমতো উঁচু আওয়াজে বক্তব্য রাখা, বিষয়বস্তুকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা। (মুসলিম: ৮৬৭)
৯. খুৎবায় দুআর সময় ইমাম বা মুক্তাদীর কারোরই হাত না উঠানো। তবে শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতে পারে। কিন্তু হাত ঘুরিয়ে নড়াচড়া করে কথা বলবে না (মুসলিম: ৮৭৪, তিরমিযী: ৫১৫, আবু দাউদ: ১১০৪)। উল্লেখ্য যে, বৃষ্টির নামাযের খুবায় হাত উঠিয়ে দুআ করা সুন্নাত (বুখারী: ১০৩১)। এছাড়া অন্যান্য দু'আর সময়ও হাত উঠানো সুন্নাত। তবে ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পরে জামাআতের সাথে বা একাকী হাত উঠিয়ে দু'আ করা উচিত নয়। কেননা এটা সহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। কিন্তু নফল নামাযের পর হাত উঠিয়ে দু'আ মুনাজাত করা যেতে পারে। সাধারণভাবে সহীহ হাদীসের আলোকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। (বুখারী: ৬৩৪১ নং হাদীসের ব্যাখ্যায় শেখ বিন বায (র.)-এর অভিমত)
১০. দৃঢ়তার সাথে স্পষ্ট ভাষায় খুৎবা দেওয়া। তাড়াহুড়া করবে না এবং কোন অস্পষ্ট উচ্চারণ করবে না। খুৎবায় রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন ধীরস্থিরভাবে কথা বলতেন যে, কেউ চাইলে শব্দগুলো গুণে নিতে পারতেন। (বুখারী: ৩৫৬৭, ৫৬৮, মুসলিম: ২৪৯৩)। মুস্তাহাব হলো- খুৎবায় বেশি কথা না বলা।
১১. ইমাম সাহেবের জন্য সুন্নাত হলো- সামনের দিকে তাকিয়ে খুৎবা দেওয়া, আর মুসল্লীদের কর্তব্য ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযী: ৫০৯, ইবনে মাজাহ: ১১৩৬)
১২. মুসলমানদের জন্য দুআ করা। এমনিতেই মুসলমানদের জন্য দু'আ করা সুন্নাত। আর খুৎবার মধ্যে তো আরো উত্তম। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের জন্য দুআ করাও ভালো। তারা যদি সংশোধিত হয় ও ভালো কাজ করে তাহলে সারা জাতির জন্য তা কল্যাণকর। (আল কাফী লিবনি কুদামা: ১/৪৯৪)