২.২৮ জুমু'আর আদব - ১৪২. জুমু'আর আদব কী কী?

খুৎবার আদবসমূহ

১. জুমু'আর দিন গোসল করা। যাদের উপর জুমু'আ ফরয তাদের জন্য এ দিনের গোসল করাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) ওয়াজিব করেছেন। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভালো কাজ। (বুখারী: ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)

২. জুমু'আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারী: ৮৮০)।
৩. মিসওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারী ৮৮৭, ইফা ৮৪৩)
৪. গায়ে তৈল ব্যবহার করা। (বুখারী: ৮৮৩)।
৫. উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমু'আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহ: ১০৯৭)
৬. মুসল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযী: ৫০৯, ইবনে মাজাহ: ১১৩৬)

৭. মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব।(বুখারী: ৯৩৪, মুসলিম: ৮৫৭, আবূ দাউদ: ১১১৩, আহমাদ- ১/২৩০)।
৮. আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া।(বুখারী: ৮৮১, মুসলিম: ৮৫০)
৯. পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদ: ৩৪৫)
১০. জুমু'আর দিন ফজরের ১ম রাকাআতে সূরা সাজদা ও ২য় রাকাআতে সূরা ইনসান (দাহর) পড়া। (বুখারী: ৮৯১, মুসলিম: ৮৭৯)
১১. সূরা জুমু'আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুমু'আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুমু'আ আদায় করা। (মুসলিম: ৮৭৭, ৮৭৮)
১২. জুমু'আর দিন ও জুমু'আর রাতে বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা। (আবু দাউদ: ১০৪৭)
১৩. এ দিন বেশি বেশি দুআ করা। (বুখারী: ৯৩৫)।
১৪. মুসল্লীদের ফাক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারী: ৯১০, ৮৮৩)
১৫. মুসল্লীদের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
১৬. কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারী: ৯১১, মুসলিম: ২১৭৭, ২১৭৮)
১৭. খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনো দু' রাকাআত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারী: ৯৩০)

১৮. জুমু'আর দিন জুমু'আর পূর্বে মসজিদে যিকর বা কোন শিক্ষামূলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদ: ১০৮৯)
১৯. কেউ কথা বললে চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসাঈ: ৭১৪, বুখারী ৯৩৪)
২০. মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধূমপান না করা। (বুখারী: ৮৫৩)
২১. ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদ: ১১১৯)
২২. ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদ: ১১১০, ইবনে মাজাহ: ১১৩৪)
২৩. খুবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ: ১১০৮)।
২৪. জুমুআর দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তাআলা দুই জুমুআর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেম- ২/৩৬৮, বায়হাকী: ৩/২৪৯)।
২৫. জুমআর আযান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আযান দেওয়া হয় তা। (বুখারী: ৯১২)।
২৬. জুমু'আর ফরয আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকাআত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারী: ১৮২, মুসলিম: ৮৮১, আবু দাউদ: ১১৩০)।
২৭. উযর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুমু'আ চালু না করা। আর উযর হলো এলাকাটি খুব বড় হওয়া বা প্রচুর জনবসতি থাকা বা মসজিদ দূরে হওয়া বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া বা কোন ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামা৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ- ২৪/২০৮)

২৮. ওযূ ভেঙে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার ওযু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু দাউদ: ১১১৪)
২৯. একান্ত উযর না থাকলে দুই পিলারের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। (হাকেম- ১/২১৮)।
৩০. সালাতের জন্য কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা (আবু দাউদ: ৮৬২)। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাযের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।
৩১. কোন নামাযীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারী: ৫১০)
৩২. এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদ: ১৩৩২)
৩৩. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফযীলত অন্তরে জাগরূক রাখা।
৩৪.হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।
৩৫. খুৎবার সময় খতীবের কোন কথার সাথে সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েয।(বুখারী: ১০২৯, মুসলিম: ৮৯৭)
৩৬. হানাফী আলেমগণ বলেছেন যে, ভীড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসল্লীর পিঠের উপর সিজদা দেওয়া জায়েয (আহমাদ- ১/৩২)। দরকার হলে পায়ের উপরও দিতে পারে। (আর রাউদুল মুরবী) ৩৭. যেখানে জুমু'আর ফরয আদায় করেছে, উত্তম হলো ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া । অথবা কোন কথা বলে বা এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিম: ৭১০, বুখারী: ৮৪৮)।
৩৮.ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা ইসতিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রত থাকা।