১৩৯. জুমু'আর দিনে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য কী কী ফযীলত রয়েছে?

উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য জুমু'আর দিনের ফযীলত

১. সূর্য উদিত হয় এমন দিনগুলোর মধ্যে জুমু'আর দিন হলো সর্বোত্তম দিন। এ দিনে যাকিছু ঘটেছিল তা হলো:
(ক) এই দিনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল,
(খ) এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল।
(গ) একই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল (মুসলিম: ৮৫৪)।
(ঘ) একই দিনে তাঁকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।
(ঙ) এ দিনেই তার তাওবা কবুল করা হয়েছিল,
(চ) এই দিনেই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছিল (আবু দাউদ: ১০৪৬),
(ছ) এ দিনে শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে,
(জ) এ দিনেই কিয়ামত হবে,
(ঝ) এ দিনে সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে (আবু দাউদ: ১০৪৭),
(ঞ) প্রত্যেক নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, আকাশ, পৃথিবী, বাতাস, পর্বত ও সমুদ্র এ দিনটিকে ভয় করে। (ইবনে মাজাহ: ১০৮৪, ১০৮৫, ১৬৩৬, মুয়াত্তা: ৩৬৪)।

২. উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য এটি একটি মহান দিন। এ জুমু'আর দিনটিকে সম্মান করার জন্য ইহুদী-নাসারাদের উপর ফরয করা হয়েছিল; কিন্তু তারা মতবিরোধ করে এ দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অতঃপর ইহুদীরা শনিবারকে আর খ্রিস্টানরা রবিবারকে তাদের ইবাদতের দিন বানিয়েছিল। অবশেষে আল্লাহ তাআলা এ উম্মতের জন্য শুক্রবারকে মহান দিবস ও ফযীলতের দিন হিসেবে দান করেছেন। আর উম্মতে মুহাম্মদী তা গ্রহণ করে নিল। (বুখারী: ৮৭৬, ইফা ৮৩২, আধুনিক ৮২৫; মুসলিম: ৮৫৫)।

৩. জুমু'আর দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮)
৪. জুমুআর দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন। (মুসনাদে আহমদ: ৩/৪৩০; ইবনে মাজাহ: ১০৮৪)
৫. জুমু'আর দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই তাকে দেওয়া হয়। আর এ সময়টি হলো জুমু'আর দিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। (বুখারী: ৯৩৫, ইফা ৮৮৮, আধুনিক ৮৮২, মুসলিম: ৮৫২)
৬. জুমু'আর রাতে বা দিনে যে ব্যক্তি মারা যায় আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফিতন রক্ষা করবেন। (তিরমিযী: ১০৭৪)।
৭. জান্নাতে প্রতি জুমু'আর দিনে জান্নাতীদের হাট বসবে। জান্নাতী লোকেরা সেখানে প্রতি সপ্তাহে একত্রিত হবেন। তখন সেখানে এমন মনোমুগ্ধকর হাওয়া বইবে, যে হাওয়ায় জান্নাতীদের সৌন্দর্য অনেক গুণে বেড়ে যাবে এবং তাদের স্ত্রীরা তা দেখে অভিভূত হবে।(মুসলিম: ২৮৩৩, ৭১/৭৫৩)
৮. যে ব্যক্তি জুমু'আর দিন সূরা কাহফ পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য দুই জুমু'আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেবেন। (জামেউস সাগীর: ৬৪৭০)
৯. যে ব্যক্তি জুমু'আর দিন সূরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে।(মুসলিম)
১০. আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা উত্তম সালাত হচ্ছে জুমু'আর দিন জামা'আতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করা। এ সম্পর্কে একটি হাদীস উল্লেখ রয়েছে, যা আবু নুআইম ‘হিলইয়া’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি নিম্নরূপ: ---
১১. প্রত্যেক সপ্তাহের জুমু'আর দিনে আল্লাহ তাআলা বেহেশতী বান্দাদেরকে দর্শন দেবেন।(সহীহুত তারগীব)
১২. এই দিনে দান-খয়রাত করার সাওয়াব অন্য দিনের চেয়ে বেশি হয়। ইবনুল কায়্যিম (র) বলেছেন, অন্য মাসের তুলনায় রমযান মাসের দানের সাওয়াব যেমন বেশি তেমনি শুক্রবারের দান-খয়রাত অন্য দিনের তুলনায় বেশি। (যাদুল মা'আদ)
১৩. ইবনুল কায়্যিম (র) আরো বলেছেন যে, অন্য মাসের তুলনায় রমযান মাসের মর্যাদা যেমন, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমু'আ বারের মর্যাদা ঠিক তেমন। তাছাড়া রমযানের কদরের রাতে যেমনভাবে দু'আ কবুল হয়, ঠিক শুক্রবারে সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণেও তেমনি দু'আ কবুল হয়।(যাদুল মা'আদ: ১/৩৯৮)।