(১) সাতাশ গুণ সাওয়াব বেশি পাওয়া যায়। (বুখারী: ৬৪৫)
(২) শয়তানের চক্রান্ত ও আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা যায়।(আবূ দাউদ: ৫৪৭)।
(৩) যে জামায়াতে মুসল্লী সংখ্যা যত বেশি সেখানে সালাত আদায়ে সাওয়াব তত বেশি। (আবু দাউদ: ৫৫৪)
(৪) যে ব্যক্তি একাধারে চল্লিশ দিন জামাআতে তাকবীরে উলা (প্রথম তাকবীরের) সাথে সালাত আদায় করবে আল্লাহ তাকে দুটি জিনিস থেকে মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন, (এক) জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি, (দুই) মুনাফেকী থেকে মুক্তি (তিরমিযী: ২৪১)।
(৫) যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করে এরপর সে লোক আল্লাহর যিম্মায় থাকে। সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত সেদিন সে লোক আল্লাহর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে থাকে।(মুসলিম)
(৬) যে লোক ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করে সেখানে বসেই সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত যিকির-আযকার করতে থাকে এবং অতঃপর দুই রাকআত (ইশরাকের) সালাত আদায় করে আল্লাহ তাকে একটি পূর্ণ হজ্জ ও একটি পূর্ণ উমরার সাওয়াব দান করেন।(তিরমিযী: ৫৮৬)
(৭) যে লোক এশার সালাত জামাআতে পড়ল সে যেন অর্ধেক রাত্রি দাড়িয়ে সালাত আদায় করল। আর যে লোক ফজরের সালাত জামাআতে পড়ল সে যেন সারা রাত জেগে (তাহাজ্জুদের) সালাত পড়ল (মুসলিম)। অর্থাৎ ফজরের জামাত এশার জামাআতের চেয়েও উত্তম।
(৮) ফেরেশতারা প্রতিদিন ফজর ও আসরের সময় একত্রিত হয়। যেসব ফেরেশতা বান্দার সাথে রাত্রি যাপন করে পরে উপরে গমন করে তাদেরকে আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাকে কি অবস্থায় রেখে এসেছ? উত্তরে তারা বলে, তাদেরকে সালাত আদায়রত অবস্থায় রেখে এসেছি এবং আমরা যখন গিয়েছিলাম তখনও তাদেরকে সালাত আদায়রত অবস্থায় পেয়েছিলাম। (বুখারী) এভাবে প্রতিদিন ফজর ও আসরে সময় ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে বান্দার রিপোর্ট পেশ করে (বুখারী: ৫৫৫)। অন্য এক হাদীসে আছে, যে আসরের সালাত আদায় করল না তার সকল আমল বাতিল হয়ে গেল। (বুখারী: ৫৫৩)।
(৯) জামাআতে সালাত আদায় আল্লাহর কাছে বড়ই পছন্দের ইবাদাত। (মুসনাদে আহমাদ: ৫০২)
(১০) জামাআতে যারা প্রথম কাতারে দাড়ায় রাসূলুল্লাহ (স.) তাদের জন্য তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন আর দ্বিতীয় কাতারে যারা দাঁড়ায় তাদের জন্য প্রার্থনা করতেন একবার। (ইবনে মাজাহ)
(১১) এত বড় পুরস্কার লাভের জন্য দু’জন হলেও জামাআতে সালাত আদায় করবে। একজন আযান ও ইকামাত দিবে এবং অপরজন ইমামতি করবে যার বয়স বেশি। (আবু দাউদ)।
(১২) মহিলাদের ঘরে নামায উত্তম হলেও মসজিদে জামাআতে শরীক হওয়া জায়েয আছে। রাসূলুল্লাহ (স.)-এর যামানায়ও মেয়েরা মসজিদে এমনকি ফজরের জামাআতেও যেতেন। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মেয়েরা মসজিদে যেতে অনুমতি চাইলে তাদের স্বামীরা যেন বাধা না দেয়। (বুখারী) মহিলারা জুমুআর জামাআতেও শরীক হতে পারে। তবে ঈদের জামাআতে নারীদের উপস্থিত হতে রাসূলুল্লাহ (স.) তাকীদ দিয়েছেন।(বুখারী)
(১৩) জামাআতে সালাত আদায় করলে শয়তান কুমন্ত্রণা দিয়ে বা অন্য কোনভাবে বান্দার কোন ক্ষতি করতে পারে না।
(১৪) জামাআতে নামায পড়লে সঠিক সময়ে মসজিদে যেতে হয়, ফলে নামাযটা সঠিক সময়ে আদায় হয়। আউয়াল ওয়াক্তেও হয়।
(১৫) জামাআতের আগে-পরে যখন কুরআন পড়ে, যিকির করে, বয়ান করে বা শুনে তখন তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হয়, রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয়, আর ফেরেশতারা তাদেরকে বেষ্টন করে রাখে। (মুসলিম)।
(১৬) জামাআতে সালাতে ইমামের সূরা ফাতেহা পাঠ শেষে ইমাম যখন আমীন বলে, মুক্তাদীরাও আমীন বলবে এবং সে সময় ফেরেশতারাও আমীন বলে। মুসল্লীদের আমীন বলার সাথে যখন ফেরেশতাদের আমীন বলা মিলে যায় তখন মুসল্লীদের পূর্বেকার সব গুনাহ মাফ হয়। যায়। (বুখারী)
(১৭) এক সালাত শেষ করার পর পরবর্তী ফরজ সালাতের জামাআতের অপেক্ষমান মুসল্লীদের জন্য আল্লাহ আসমানের দরজা খুলে দেন। আর এসব মুসল্লীদের নিয়ে আল্লাহ ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন। (ইবনে মাজাহ)।
(১৮) জামাআতে সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষমান সময়টি সালাতরত আছে বলে গণ্য হয়। (বুখারী: ৬৪৭)।
(১৯) জামাআতে শেষ করার পর সে জায়গায় মুসল্লী যতক্ষণ বসে থাকে ততক্ষণ ফেরেশতারা এ বান্দার জন্য এ বলে দুআ করে: (ক) হে আল্লাহ! তাকে তুমি মাফ করে দাও, (খ) হে আল্লাহ! তাকে তুমি (রহম কর) দয়া কর, (গ) এবং তার তাওবা কবুল কর। এভাবে দু'আ করে সে পরিমাণ সময় ধরে যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয় এবং তার ওযূ ছুটে না যায়। (বুখারী: ৬৪৭)।
(২০) লোকেরা যদি জানত যে আযান দেওয়া ও প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কি ফযীলত রয়েছে, তাহলে প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর প্রতিযোগিতা সামলানোর জন্য লটারি করা ছাড়া আরো কোন গত্যন্তর ছিল না। (বুখারী: ৬১৫)।
(২১) ফজর ও এশার জামাআতে এত বেশি সাওয়াব যা মানুষ জানলে (গায়ে জোর না থাকলেও) হামাগুড়ি দিয়ে হলেও জামাআতে শরীক হতো। (আবু দাউদ: ৫৫৪)।
(২২) জামাআতে নামাযের প্রথম কাতারটি ফেরেশতাদের কাতারের সমতুল্য (আবু দাউদ: ৫৫৪)। তবে নারীদের জন্য উত্তম হলো শেষ কাতার সবার পিছনের কাতার। (মুসলিম: ৪৪০)
(২৩) আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা প্রথম কাতারে দাঁড়ানো মুসল্লীদের উপর রহমত বর্ষণ করেন। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ- ৫/২৬২)
(২৪) নিঃসন্দেহে কাতারের ডান দিকের মুসল্লীদের উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেশেতারা তাদের জন্য দু'আ করে। (আবু দাউদ: ৬৭৬)
(২৫) যারা জামাআতে মিশে মিশে দাঁড়িয়ে কাতারগুলো মিলিয়ে রাখে তাদের প্রতি আল্লাহ এবং তার ফেরেশতারা রহমত বর্ষণ করেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের ফাকা বন্ধ করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। (ইবনে মাজাহ: ৯৯৫)
(২৬) যে ব্যক্তি কাতার মিলায় (একজন আরেকজনের সাথে মিশে মিশে দাঁড়ায়। আল্লাহ তাকে মিলিয়ে দেন। আর (বিপরীতে) যে লোক একজন আরেকজন থেকে পৃথক হয়ে যায় (মাঝে ফাঁকা রাখে), আল্লাহ তাকে পৃথক করে দেন।(নাসাঈ: ৮১৯)
(২৭) জামায়াতের সালাতে ইমামের আমীন বলার সাথে সাথে ফেরেশতারাও তখন আমীন বলে। আর সে সময় ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে সাথে যখন মুক্তাদীর আমীন বলার শব্দ মিলে যায় তখন আল্লাহ তার পূর্বেকার সকল গুনাহ মাফ করে দেন।(বুখারী: ৭৮২)।
(২৮) জামাআতে সালাত আদায়ের জন্য যে লোক ঘন ঘন মসজিদে যায় কাল কিয়ামতের দিন কঠিন মুহূর্তে আল্লাহ তাকে তার আরশের ছায়ায় নিচে আশ্রয় দেবেন।(বুখারী: ৬৬০)।
(২৯) জামাআত ধরার জন্য হেটে যাওয়া প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে মুসল্লির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, গুনাহ মাফ হয় ও নেকী লেখা হতে থাকে। (বুখারী: ৬৪৭)।
(৩০) যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় যতবার মসজিদে যায়, আল্লাহ তাআলা জান্নাতে ততবার মেহমানদারির ব্যবস্থা করে রাখেন। (বুখারী: ৬৬২)
(৩১) জামাআত ধরার জন্য মসজিদে গিয়ে যদি দেখে যে জামাত শেষ হয়ে গেছে, এরপরও তিনি জামাআতে সালাত আদায়ের সাওয়াব পাবেন অথচ যারা জামাত পেল তাদের সাওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না। (আবু দাউদ: ৫৬৪)
(৩২) জামাত ধরার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে পুনরায় ঘরে ফিরে আসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত পুরু সময়টি সালাতে রত আছে বলে গণ্য হবে।(ইবনে খুযাইমা- ১/২২৯)
(৩৩) নিজ ঘর থেকে ওযূ করে যে ব্যক্তি ফরজ সালাত আদায়ের জন্য বের হবে, সে লোক ইহরাম বেঁধে হজ্জ পালনকারীর সমান সাওয়াব পাবে। আর যে লোক চাশতের নামায আদায়ের জন্য ঘর থেকে বের হবে সে একজন উমরা পালনকারীর সমান সাওয়াব অর্জন করবে। (আবু দাউদ: ৫৫৮) এভাবে শুধুমাত্র একদিনেই জামাআতে সালাত আদায়কারীরা মোট পাঁচটি হজ্জ পালনের সাওয়াব অর্জন করতে পারে।সুবহানাল্লাহ!
(৩৪) তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ নিজেই তাদের নিরাপত্তার যিম্মাদার: (ক) যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়, (খ) যে ব্যক্তি আগ্রহ সহকারে মসজিদে যায়, (গ) যে ব্যক্তি নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে মিলিত হয়ে সালাম বিনিময় করে। (আবু দাউদ: ২৪৯৪)
(৩৫) যে লোক জামাত শেষ হওয়ার পরও (কিছুক্ষণ) মসজিদে অবস্থান করবে, জামাত ধরার জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং কষ্টের সময়ও উত্তমরূপে ওযূ করবে, সে কল্যাণের মধ্যে বেঁচে থাকবে, কল্যাণের মধ্যে মৃত্যুবরণ করবে এবং জন্মগ্রহণের দিনের মতোই নিস্পাপ হয়ে যাবে। (তিরমিযী: ৩২৩৩)
(৩৬) জামাআতে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে গমণকারীরা স্বাচ্ছন্দের জীবন যাপন করবে। (সূরা ১৬; নাহল ৯৭)।
(৩৭) জামাআতে সালাত আদায়কারীরা যেন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য মসজিদে যায়। আর এ জন্য আল্লাহর দায়িত্ব হলো তাদেরকে সম্মান করা ও ইকরাম করা। (তাবরানী- ৬/২৫৩)।
(৩৮) জামাত ধরার জন্য বান্দা যখন মসজিদে যায় আল্লাহ তখন তার প্রতি উৎফুল্ল হন। (ইবনে খুযাইমা)