মুত‘আ বিয়ের আকিদা ও তাদের মতে তার ফযিলতসমূহ:

ফতহুল্লাহ আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে উল্লেখ করেন:

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হোসাইনের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে হাসানের মর্যাদার সমান; আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আলী ইবন আবি তালিবের মর্যাদার সমান এবং যে ব্যক্তি চারবার মুত‘আ বিয়ে করবে, তার মর্যাদা হবে আমার মর্যাদার সমান।”[1]

আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে আরও উল্লেখ করেন:

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ে (সাময়িক বিবাহ) না করে দুনিয়া থেকে বের হয়েছে (মৃত্যুবরণ করেছে), সে কিয়ামতের দিন নাক কাটা অবস্থায় হাজির হবে।”[2]

আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: জিবরাইল আমার নিকট আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপহার নিয়ে আগমন করল; আর ঐ উপহার ছিল মুমিন নারীদের ভোগ করা। আর এই উপহার আমার পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা আর কোন নবীকে দান করেন নি ...। তোমরা জেনে রাখ, পূর্ববতী সকল নবীর উপর আমার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে বিশেষিত করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তার জীবনে একবার মুত‘আ বিয়ে করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ... আর যখন মুত‘আ বিবাহিত নারী ও পুরুষ কোন জায়গায় একত্রিত হবে, তখন তাদের উপর একজন ফেরেশতা নাযিল হবে এবং সে তারা বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে পাহারা দেবে; আর তাদের উভয়ের মধ্যে যে কথাবার্তা হবে, সে কথাবার্তাগুলো হবে যিকির ও তাসবীহ; আর তাদের একজন যখন অপর জনের হাত ধরবে, তখন তাদের উভয়ের আঙ্গুলসমূহ থেকে গুনাহসমূহ ফোটায় ফোটায় ঝরতে থাকবে; আর যখন তাদের একজন অপর জনকে চুম্বন করবে, তখন তাদের জন্য প্রত্যেক চুম্বনের বিনিময়ে হজ ও ওমরার সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদের সহবাসের সময় প্রত্যেক কামনা ও স্বাদের বিনিময়ে সুউচ্চ পর্বতসমূহ পরিমাণ পুণ্য লেখা হবে। আর যখন তারা গোসলে মশগুল থাকবে এবং পানি ফোটা ঝড়বে, তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ পানির প্রত্যেক ফোটা দ্বারা একজন করে ফেরেশতা সৃষ্টি করবেন, যে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে ও তার পবিত্রতা বর্ণনা করবে এবং তার তাসবীহ ও পবিত্রতা বর্ণনার সাওয়াব তাদের উভয়ের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত লিপিবদ্ধ হতে থাকবে।

হে আলী! যে ব্যক্তি এই সুন্নাতটিকে (মুত‘আ বিয়েকে) হালকা ও দুর্বল মনে করবে এবং তাকে অপছন্দ করবে, সে ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয় এবং আমি তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত ...।

জিবরাইল আ. বলল: হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে দিরহামটি মুমিন তার মুত‘আ বিয়েতে খরচ করবে, তা আল্লাহর নিকট মুতা‘ বিয়ের বাইরে এক হাজার দিরহাম ব্যয় করার চেয়ে উত্তম।

হে মুহাম্মদ! জান্নাতের মধ্যে ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট এক দল হুর রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মুত‘আ বিয়ের অনুসারীদের জন্য।

হে মুহাম্মদ! যখন মুমিন পুরুষ মুমিন নারীকে মুত‘আ বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে, তখন সে তার যে জায়গায়ই দাঁড়াবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং মুমিন নারীকেও ক্ষমা করে দেবেন ...।

আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, মুত‘আ বিয়ে আমার এবং আমার বাপ-দাদার দীনের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি তার উপর আমল করবে, সে আমাদের দীনের উপর আমল করবে এবং যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করবে, সে আমাদের দীনকে অস্বীকার করবে; বরং সে আমাদের দীন ব্যতীত অন্য দীনের অনুসরণ করবে। মুত‘আ বিয়ের স্ত্রীর গর্ভের সন্তান স্থায়ী স্ত্রীর গর্ভের সন্তানের চেয়ে উত্তম। আর মুত‘আ বিয়ের বিধান অস্বীকারকারী কাফির, মুরতাদ।”[3]

‘মুন্তাহাল আমাল’ (منتهى الأمال) নামক গ্রন্থের লেখক ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:

“আস-সাদিক আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের স্ত্রীকে ভোগ করে, অতঃপর গোসল করে, আল্লাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়া প্রতি ফোটা পানি থেকে সত্তর জন ফেরেশতা সৃষ্টি করেন, যাতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং কিয়ামত পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, যে মুত‘আ বিয়ে থেকে দূরে থাকে।”[4]

উর্দু ভাষায় লিখিত ‘উজালাতুন হাসানাহ্ (عجالة حسنة ) মুত‘আ বিয়ের ফযিলত সম্পর্কে অনেকগুলো বর্ণনার উল্লেখ করা হয়েছে; আর তা হল আল-মাজলিসী’র ‘রিসালাতুল মুত‘আ’ (رسالة المتعة) নামক পুস্তিকার অনুবাদ। এখানে আমরা তার কিয়দংশের অনুবাদ উল্লেখ করছি:

“আমীরুল মুমিনীন আলী আ. বলেন: যে ব্যক্তি এই সুন্নাতটিকে (মুত‘আ বিয়েকে) কঠিন হিসেবে পেল এবং তা গ্রহণ করল না, সে ব্যক্তি আমার দলভূক্ত নয় এবং আমি তার দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত।”[5]

“সাইয়্যেদুল ‘আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি মুমিন নারীকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে ভোগ করে, সে যেন সত্তর বার কাবা যিয়ারত করে।”[6]

“রহমাতুল্লিল ‘আলামীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি একবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার শরীরের এক তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি দুইবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার শরীরের দুই তৃতীয়াংশ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করল। আর যে ব্যক্তি তিনবার মুত‘আ বিয়ে করল, সে তার গোটা শরীরকে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে নিরাপদ করল।”[7]

“সাইয়্যেদুল বাশার শাফে‘উল মাহশার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: হে আলী! মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণের উচিত দুনিয়া থেকে ইন্তিকাল করে আখেরাতে যাওয়ার পূর্বে একবার হলেও মুত‘আ বিয়ের প্রতি উৎসাহিত হওয়া।

আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং নিজেই শপথ করে বলেন যে, তিনি এমন পুরুষ অথবা নারীকে শাস্তি দেবেন না, যে মুত‘আ বিয়ে করেছে; আর যে ব্যক্তি এই কল্যাণকর (মুত‘আ বিয়ের) বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করে এবং সেই ব্যাপারে পাথেয় প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।”[8]

আল-কাশানী তার তাফসীরের মধ্যে ফারসি ভাষায় একটি দীর্ঘ বর্ণনার উল্লেখ করেন, যার অর্থ হল:

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল: যে ব্যক্তি মুত‘আ বিয়ের এই বিষয়টি নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা করবে, তার প্রতিদান কী হবে? জওয়াবে তিনি বললেন: সে উভয়ের (সমান) প্রতিদান পাবে। অর্থাৎ মুত‘আ বিবাহকারী নারী ও পুরুষের মধ্যে চেষ্টা-সাধনাকারীর জন্য তাদের উভয়ের সমান প্রতিদান রয়েছে।”[9]

আবূ জাফর আল-কুমী ‘মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ’ (من لا يحضره الفقيه) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন; আর এটা শিয়াদের নিকট চারটি বিশুদ্ধ গ্রন্থের অন্যতম, তাতে বলা হয়:

“মুমিন পরিপূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মুত‘আ বিয়ে করবে।”[10]

আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:

“আবূ জাফর আ. বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন আকশ পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হল, তখন তিনি বলেন, জিবরাইল আমার সাথে মিলিত হল এবং বলল: হে মুহাম্মদ! আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি তোমার উম্মতের মধ্য থেকে মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে নারীদের ভোগকারীদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।”[11]

আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:

“আস-সাদিক আ. বলেন: আমি সেই পুরুষ ব্যক্তির মৃত্যুবরণকে অপছন্দ করি, যার স্বভাবের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বভাবসমূহের মধ্য থেকে একটি স্বভাব বাকি রয়েছে এবং সে তা বাস্তবায়ন করেনি; অতঃপর আমি বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মুত‘আ বিয়ে করেছেন? তিনি বললনে: হ্যাঁ।”[12]

আল-কুমী আরও উল্লেখ করেন:“আবদুল্লাহ ইবন সিনান থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা আমাদের শিয়াদের উপর মাতালকারী প্রত্যেক শরাব নিষিদ্ধ করেছেন এবং তার বিনিময় স্বরূপ তাদেরকে মুত‘আ বিয়ের সুযোগ দিয়েছেন।”[13]

>
[1] মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫৬

[2] মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫৬

[3] মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫৬

[4] মুন্তাহাল আমাল (منتهى الأمال), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১

[5] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী’র ‘রিসালাতুল মুত‘আ’ (رسالة المتعة)-এর অনুবাদ ‘উজালাতুন হাসানা’ (عجالة حسنة), পৃ. ১৫

[6] ‘উজালাতুন হাসানা (عجالة حسنة), পৃ. ১৬

[7] ‘উজালাতুন হাসানা (عجالة حسنة), পৃ. ১৬

[8] ‘উজালাতুন হাসানা (عجالة حسنة ), পৃ. ১৬

[9] মোল্লা ফতহুল্লাহ আল-কাশানী, তাফসীরু মানহাজিস সাদেকীন (تفسير منهج الصادقين), পৃ. ৩৫৬

[10] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ (من لا يحضره الفقيه), পৃ. ৩৩০

[11] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ (من لا يحضره الفقيه), পৃ. ৩৩০

[12] আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন বাবুইয়া আল-কুমী, মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ (من لا يحضره الفقيه), পৃ. ৩৩০

[13] মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকিহ (من لا يحضره الفقيه), পৃ. ৩৩০; মুন্তাহাল আমাল (منتهى الأمال), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১