মৃত অন্তরে দ্বীনের পরিপন্থী কোন প্রকারের কুমন্ত্রণা ও কুচিন্তা আসে না। যেহেতু সে হৃদয়। তো মৃত ও ধ্বংসগ্রস্ত, শয়তান এর চেয়ে বেশী আর কিছু চায় না। এই জন্যই ইবনে মসউদ অথবা ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে যখন বলা হল যে, ইয়াহুদীরা বলে, তারা তাদের নামাযে কোন কুমন্ত্রণা অনুভব করে না। অর্থাৎ, নামাযে তাদের মনোযোগ নষ্ট হয় না। তখন তিনি বললেন, 'ঠিকই তো বলেছে। শয়তান পতিত হৃদয়ে (কুমন্ত্রণা দিয়ে) কি করবে? সত্যই তো যে বাঘ মরেই আছে, তাকে মারার জন্য অস্ত্র ব্যবহার করা অবশ্যই প্রয়োজন। নেই।
পক্ষান্তরে হৃদয় যদি জীবিত হয় এবং তাতে সামান্য পরিমাণও ঈমান থাকে, তাহলে শয়তান তার প্রতি এমন অভিযান ও আক্রমণ শুরু করে যে, অবিরাম ও অবিচলভাবে তা চলতেই থাকে। দ্বীন-বিরোধী নানা কুচিন্তা ও কুমন্ত্রণা তার মনে প্রক্ষিপ্ত করতে থাকে। বান্দা। যদি তার নিকট পরাজয় স্বীকার করে, তাহলে বিরাট সর্বনাশে আপতিত হয়। এমন কি শয়তান তার দ্বীন, আকীদাহ ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বিষয়েও নানা সংশয় ও সন্দেহ তার মনে সৃষ্টি করে। এতে যদি সে তার হৃদয়ে দুর্বলতা ও পরাভব লক্ষ্য করে, তাহলে তাকে বশীভূত করে ফেলে এবং অবশেষে দ্বীন থেকে খারিজ করে ফেলে। কিন্তু যদি সে তার হৃদয়ে সবলতা ও বিজয়-ভাব লক্ষ্য করে, তাহলে পরাস্ত, লাঞ্ছিত ও হীনতাগ্রস্ত হয়ে পলায়ন করে।
পরন্তু মুসলিম যদি রসুল (রাঃ) কর্তৃক নির্দেশিত চিকিৎসার সাহায্য নেয়, তাহলে শয়তানের দেওয়া ঐ কুমন্ত্রণা তার হৃদয়-মনে কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে না।
এক ব্যক্তি মহানবী ও এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল, 'আমার মনে এমন কথা আসে, যা মুখে উচ্চারণ করার চেয়ে আমি যদি জ্বলন্ত আঙ্গার হয়ে যাই, তাহলে সেটাই আমার কাছে অধিকতর পছন্দনীয়!' এ কথা শুনে নবী ৪৪ বললেন, “সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা, যিনি তার চক্রান্তকে প্রতিহত করেছেন।” অর্থাৎ, শয়তানের কুমন্ত্রণা বাতিল করে দিয়েছেন। (আবু দাউদ)
অনুরূপভাবে কিছু সাহাবা (রাঃ) তাঁর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মনের ভিতর এমন কথা পাই, যা আমাদের কেউ তা মুখে আনতে মারাত্মক মনে করে। মহানবী ২ বললেন, “তোমরা কি তা পেয়েছ?” তারা বললেন, জী হ্যা।' তিনি বললেন, “এটাই তো স্পষ্ট ঈমান।” (মুসলিম ১৩২নং)
এখানে স্পষ্ট ঈমানের অর্থ এই যে, তোমাদের মনে ঐ প্রক্ষিপ্ত কুমন্ত্রণা এবং তোমাদের তা অগ্রাহ্যকরণ, হার্দিক প্রতিবাদ ও তা মুখে উচ্চারণ করতে ভীষণ খারাপ ভাবা, তোমাদের ঈমানের কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করে না। বরং এইরূপ হওয়াটা তোমাদের প্রকট ও উজ্জ্বল ঈমানেরই পরিচায়ক।
তিনি আরো বলেন, “তোমাদের মধ্যে কারো নিকট শয়তান হাজির হয়ে বলে, 'এটা কে সৃষ্টি করেছে? ওটা কে সৃষ্টি করেছে?’ শেষ পর্যন্ত সে বলে যে, (সব তো আল্লাহ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু) তোর রবকে কে সৃষ্টি করেছে?!’ অতএব যখন কেউ এই পর্যায়ে পৌছে যাবে, তখন সে যেন আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং (এ ধরনের চিন্তা থেকে) বিরত হয়।” (বুখারী, মুসলিম ১৩৪নং) অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, “তখন সে যেন বলে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছি।'
আবু দাউদের বর্ণনায় সূরা ইখলাস পড়তে এবং তারপর বাম দিকে ৩ বার থুথু মারতে ও বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট পানাহ চাইতে বলা হয়েছে। উপরোল্লেখিত হাদীসসমূহে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) মহানবী ৪ এর নিকট রোগের নানা লক্ষণ বর্ণনা করলে তিনি তার চিকিৎসা-পদ্ধতি চারভাবে বর্ণনা করলেনঃ
১। ঐ কুমন্ত্রণায় ধ্যান না দিয়ে কুচিন্তা থেকে বিরত হওয়া। অর্থাৎ, ঐ ধরনের চিন্তা মন থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা এবং এমনভাবে বিস্মৃত হওয়া, যেন ঐ চিন্তা মনেই ছিল। অতঃপর কোন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়া অথবা কোন উত্তম ও মার্জিত চিন্তায় অভিনিবেশ করা।
২। ঐরূপ কুচিন্তা ও কুমন্ত্রণা এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করা।
৩। ‘আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উপর ঈমান এনেছি’ বলা।
৪ সূরা ইখলাস পাঠ করা। (মিন মুশকিলাতিশ শাবাব ২৬-২৮ পৃঃ দ্রঃ)