ব্যভিচারে নায়ক-নায়িকার জন্য সাময়িক সুখ থাকলেও এর পরিণতি কিন্তু চরম ভয়ানক। পরকালের শাস্তি ছাড়াও ইহকালে রয়েছে তার অহিতকর বিভিন্ন কুফল।
আধুনিক যুগে ব্যভিচার ও জরায়ু-স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় উপহার হল এড়স। এড়স এমন। এক মহামারী, যার সঠিক ঔষধ ও চিকিৎসা-পদ্ধতি অদ্যাবধি আবিষ্কার হয়নি। যে রোগ নিয়ে বিশ্বের বড় বড় ডাক্তারদের সম্মিলন হচ্ছে, কিন্তু এর কোন প্রতিকার বা প্রতিরোধব্যবস্থা সার্বিকভাবে হয়ে উঠছে না।
এড়স এমন ভয়ানক ব্যাধি, যা ক্যান্সার অপেক্ষা অধিক বিপজ্জনক। যার শেষ পরিণাম হল, নানা ধরনের ব্যথা-বেদনার পর মৃত্যু। ক্যান্সারের মতই এডস শরীরের কোন নির্দিষ্ট স্থানে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। বরং সারা শরীরে ছড়িয়ে থাকে এ রোগের জীবাণু। ফলে নির্মূল করার মত কোন চিকিৎসার আশা বড় একটা অবশিষ্ট থাকে না। সুতরাং এমন ব্যাধিগ্রস্তের অধিকাংশ মানুষ মরণ-সাগরে গিয়ে মিলিত হয়।
জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ১৯৯৮ সালে এডস রোগের ফলে ২৩ লাখ। মানুষের মৃত্যু ঘটেছে! (মাজাল্লাতুল বায়ান ১৪০/৮৯)
বলাই বাহুল্য যে, এ রোগের প্রকোপ সেই উন্নত বিশ্বেই বেশী, যেখানে আছে প্রগতির রঙে চরম যৌন-স্বাধীনতা ও ব্যভিচারের ব্যাপক প্রচলন। যে সব দেশে কুমারী মা ও গর্ভিণীর সংখ্যা সীমাহীন এবং যে সব দেশের অভিধান থেকে ‘সতী ও সতীত্ব’ শব্দটুকুও মুছে ফেলা হয়েছে।
সত্য বলেছেন আল্লাহর নবী (সা.)। সত্য তাঁর নবুওয়াতের অহীলব্ধ ভবিষ্যদ্বাণী। তিনি বলেছেন, “হে মুহাজিরদল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে (উপযুক্ত শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে)। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, যাতে তোমরা তা প্রত্যক্ষ না কর। যখনই কোন জাতির মধ্যে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখনই সেই জাতির মধ্যে প্লেগ এবং এমন মহামারী ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল। না----” (বাইহাকী, ইবনে মাজাহ ৪০১৯নং, সহীহ তারগীব ৭৫৯নং) নবী ৯ বলেন, “যখনই কোন জাতি তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তখনই তাদের মাঝে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যখনই কোন জাতির মাঝে অশ্লীলতা আত্মপ্রকাশ করে তখনই সে জাতির জন্য আল্লাহ মৃত্যুকে আধিপত্য প্রদান করেন। (তাদের মধ্যে মৃতের হার বেড়ে যায়।) আর যখনই কোন জাতি যাকাৎ-দানে বিরত হয় তখনই তাদের জন্য (আকাশের) বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।” (হাকেম ২/১২৬, বাইহাকী ৩/ ৩৪৬ বাযযার ৩২৯৯ নং সিলসিলাহ সহীহাহ ১০ ৭নং)
অবৈধ যৌনাচারের ফলে প্রাদুর্ভূত বিভিন্ন পুরনো রোগ তো আছেই। গণােরিয়া, সিফিলিস, শুক্রক্ষরণ প্রভৃতি যৌনরোগ ব্যভিচারীদের মাঝেই আধিপত্য বিস্তার করে। গণােরিয়া বা প্রমেহ রোগে জননাঙ্গে ঘা ও জ্বালা সৃষ্টি হয় এবং সেখান হতে পুঁজ নিঃসরণ হয়। মূত্রনালী জ্বালা করে, সুড়সুড় করে। মূত্রত্যাগে কষ্ট হয়। পানির মত প্রস্রাবের পর হলুদ পুঁজযুক্ত পদার্থ বের হয়। সে সঙ্গে মাথা ধরা ও ঘোরা, জ্বর এবং নিমগ্রন্থি-স্ফীতি তো আছেই।
সিফিলিস বা উপদংশ রোগ শরীরে প্রবেশ করার পর সপ্তাহ মধ্যে লাল দাগ ও ফুস্কুড়ি প্রকাশ পায়। এরপর হতে শরীর অনবরত চুলকায় ও তার চারধারে প্রদাহযুক্ত পানি-ভরা ফোস্কা দেখা দেয় এবং ঐ সব ফুস্কুড়ি হতে পরে গলে ঘা হয় ও পুঁজ বের হয়। রোগ পুরনো হলে নখ খসে যায়, চুল ওঠে এবং সর্বাঙ্গে উদ্ভেদ প্রকাশ পায়।
আর শুক্রক্ষরণ রোগে তরল বীর্য যখন-তখন ঝরতে থাকে। এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, বুক ধড়ফড় করে, মাথা ধরে ও ঘোরে ইত্যাদি।
সুতরাং এমন সব রোগের কথা শুনে শঙ্কিত হওয়া উচিত ব্যভিচারীকে। ক্ষণস্থায়ী সে স্বাদে লাভ কি, যার পরে আছে দীর্ঘস্থায়ী বা চিরস্থায়ী বিষাদ।
ব্যভিচার ব্যভিচারীর জন্য সাংসারিক ও পারিবারিক লাঞ্ছনা ডেকে আনে। আত্মীয়স্বজনের সামনে হতে হয় অপমানিত। কারণ, ব্যভিচারী যতই সতর্কতা ও গোপনীয়তা অবলম্বন করুক না কেন, একদিন না একদিন তার সে পাপ-রহস্য মানুষের সমাজে প্রকাশ পেয়েই যায়। ফলে তার ব্যাপারে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে একটা এমন দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে, যার দরুন সে প্রায় সকলের কাছে নিন্দাহ্ ও ঘৃণার্থ হয়। সহজে কেউ তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করতে চায় না। অনেক সময় তার কারণে তার পুরো বংশ ও পরিবারেরই বদনাম হয়। শেষে পরিণতি এই দাঁড়ায় যে, ভালো লোকেরা তাদের সহিত কোন সম্পর্ক কায়েম করতে চায় না। অবশ্য কানা বেগুনের ডোগলা খদ্দের তো আছেই।
পক্ষান্তরে ব্যভিচারীর জীবনে লাঞ্ছনা যখন আসে, তখন তার হৃদয়ের জ্যোতি বিলীন হয়ে যায় এবং মন ভরে ওঠে অন্ধকারে। অপমানের পর এমনও হয়ে থাকে যে, শেষে সে একজন নির্লজ্জ ধৃষ্টতে পরিণত হয়ে যায়। সমাজে চলার পথে তার আর কোন প্রকার হায়া-শরম’ বলতে কিছু থাকে না। আর যার লজ্জা থাকে না, তার কিছু থাকে না। লজ্জাহীনের পূর্ণ ঈমানও থাকে না। যার ফলে মানুষের মনুষ্যত্ব ধ্বংস হয়ে যায় এবং পশুর পশুত্ব এসে স্থান নেয় তার মনে ও আচরণে।
ব্যভিচারীর মনে সব সময় এক প্রকার ভয় থাকে। অন্তরে বাসা বাঁধে সার্বক্ষণিক লাঞ্ছনা। যেমন আল্লাহর আনুগত্যে থাকে সম্মান ও মনের প্রফুল্লতা। মহান আল্লাহ বলেন, “যারা মন্দ কাজ করে, তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে---।” (সূরা ইউনুস ২৭)
ব্যভিচারী সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে। জারজ জন্ম নিলে তো আরো। এ ছাড়া ব্যভিচারের। ফলে তার সম্ভ্রম ও আত্মমর্যাদা যায়, স্ত্রী-কন্যার ব্যাপারে ঈর্ষা যায়। বরং ব্যভিচারী মিথ্যাবাদীও হয়, খেয়ানতকারী ও ধোকাবাজ হয়। সাধারণতঃ বন্ধুর বন্ধুত্বের মানও খেয়াল রাখে না। (রওযাতুল মুহিব্বীন দ্রঃ)
ব্যভিচারী দ্বীনী ইল্ম থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ, ইম হল আল্লাহর নুর। আর আল্লাহর নুর কোন পাপিষ্ঠকে দেওয়া হয় না, তথা পাপের কালিমা সে জ্যোতিকে নিষ্প্রভ করে ফেলে। ব্যভিচার এমন এক ফ্রি সার্ভিস’ চিত্তবিনোদনের সুন্দর উপায় যে, ব্যভিচারীকে বিবাহ করে ঘর-সংসার করতে বাধা দেয়। তাকে বিবাহে আগ্রহহীন ও নিস্পৃহ করে তোলে। বিনা খরচ ও পরম স্বাধীনতায় যদি কাম-চরিতার্থ করা সহজ হয় এবং স্বামীর কোন প্রকার দায়িত্ব ঘাড়ে না নিয়েই যদি মনের মত বউ’ পাওয়া যায়, তবে কে আর বিয়ে করবে? ব্রিটেনের প্রায়। ৯০ শতাংশ যুবক-যুবতী এই দায়-দায়িত্বহীন সম্পর্ককেই পছন্দ করে এবং বিবাহে জড়িয়ে পড়াকে বড় ঝামেলার কাজ মনে করে। (আল-ইফ্ফাহ ১৯ পৃঃ)।
ব্যভিচার স্বামী-স্ত্রীর সংসারে ফাটল ধরায়। কারণ, অন্যাসক্ত স্বামীর মন পড়ে থাকে অন্য যুবতীর প্রতি। অনুরূপ অন্যাসক্তা স্ত্রীর মন পড়ে থাকে কোন অন্য রসিক নাগরের যৌবনআসনে। আর এই উভয়ের মাঝে সন্দেহ বাসা বাঁধে। একে অপরের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। সন্দেহ হয় স্বামীর নিজের সন্তানের ব্যাপারেও। প্রতিবাদ ও কৈফিয়ত হলে কলহ বাধে। অতঃপর চলে মারধর। আর তারপরই তালাক অথবা খুন! ব্যভিচার পিতার পিতৃবোধ এবং মাতার মাতৃবোধ বিনষ্ট করে ফেলে। পিতৃ ও মাতৃবাৎসল্য সন্তানদের উপর থেকে উঠে যায়। যেমন অনেকের জানতে বা অজান্তে সমাজে পয়দা হয় হাজারো জারজ সন্তান।
ব্যভিচার সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ডেকে আনে। ধর্ষণের ভয়ে কিশোরী-যুবতীর নিরাপত্তা থাকে না। এমন কি নিরাপত্তা থাকে না কোন সুদর্শন কিশোরেরও! বাড়ির ভিতরে থেকেও মনের আতঙ্কে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পায় না তারা। অনেকে ঐ শ্রেণীর হিংস্র নেকড়ের পাল্লায় পড়ে জীবন পর্যন্তও হারিয়ে বসে। মানসিক বিপর্যয় ঘটিয়েই ব্যভিচার বহু সমাজ-বিরোধী অপরাধী সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে পিতা-মাতার স্নেহ ও মায়া-মমতা থেকে বঞ্চিত জারজ সন্তানরা মানসিক কঠোরতা ও সামাজিক ঘূণার মাঝে মানুষ হতে থাকে এবং পরিশেষে অপরাধ জগৎকেই মনের মত জগৎ বলে নিজের জন্য বেছে নয়।
ব্যভিচার চরিত্রহীনতার এক মহা অপরাধ। এ অপরাধ-রাজ্যে বাস করে মানুষ যে সব সময় আনন্দ পায় তা নয়। যেমন আল্লাহর আনুগত্য ও স্মরণে মন প্রশান্ত থাকে, তেমনি তার অবাধ্যাচরণ ও পাপ-পঙ্কিলতাময় জীবনে মন বিক্ষিপ্ত ও অশান্তিময় থাকে। আর মহান আল্লাহ বলেন, “তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ তা জেনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং ওর কর্ণ ও হৃদয় মোহর (সীল) করে দিয়েছেন। আর ওর চোখের উপর ফেলে দিয়েছেন পর্দা। অতএব আল্লাহ তাকে বিভ্রান্ত করার পর কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?” (সূরা জাসিয়াহ ২৩ আয়াত)
বলা বাহুল্য যে, প্রেম ও ব্যভিচারের মত ক্ষণিকের সুখ ও সম্ভােগের জগতে মন-পূজারী। বহু যুবক-যুবতী আপোসের মাঝে প্রেম ও মিলন কলহ নিয়ে কত শত মনের ধিক্কারে আত্মহত্যার শিকারে পরিণত হয়। ১৯৮৭ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বৃটেনে প্রতি ২ ঘন্টায় একটি করে যুবক আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করে থাকে! (আল-ইফ্ফাহ ২৫পৃঃ)
ব্যভিচার এমন এক অপরাধ যে, তার ফলে খুন হয় লাখো লাখো সদ্যপ্রসূত কচি-কাঁচা শিশু। নির্দয় পাষন্ড মা জন্মের পর তাকে ডাষ্টবিনে, নদীতে অথবা কোন ঝোপে-জঙ্গলে ফেলে আসে! লাখো লাখো সন্তানকে ভ্রুণ অবস্থায় পেটেই হত্যা করা হয়। কারণ, পিতামাতার উদ্দেশ্য ছিল, কেবল কামতৃষ্ণা নিবারণ করা, কোন অযাচিত সন্তান নেওয়া নয়।
ব্যভিচারের ফলে বংশে এমন এক সন্তান অনুপ্রবেশ করে, যে সে বংশের কেউ নয়। সে। মীরাস পায়, অথচ সে ওয়ারেস নয়। অনেক সময় এই সন্তান প্রকৃত ওয়ারেসীনকে বঞ্চিতও করে। পরিবারে অনেকের সে মাহরাম গণ্য হয়, অথচ প্রকৃতপক্ষে সে গায়র মাহরাম ও বেগানা। আর এইভাবে একটি পাপের কারণে আরো বহু গুপ্ত ফাসাদ চলতে থাকে সংসারে। যে পাপের কথা কেবল মন জানে, যেমন আসল বাপের কথা কেবল মা জানে।
ব্যভিচার আল্লাহর গযব আনয়ন করে। সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” (সূরা নুর ৬৩ আয়াত)
ব্যভিচার এক নিকৃষ্ট মহাপাপ। যে পাপের শাস্তি স্বরূপ অনুরূপ পাপ তার পরিবারে এসে যেতে পারে। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন, “মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ।” (সূরা শুরা ৪০ আয়াত)
“যারা মন্দ কাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং তাদেরকে লাঞ্ছনা আচ্ছন্ন করবে ---” (সূরা ইউনুস ২৭ আয়াত) সাধারণতঃ ব্যভিচারীদের স্ত্রী অথবা বোন অথবা কন্যাও ব্যভিচারিণী হয়ে থাকে। কারণ, তারা তাদের ব্যাপারে ঈর্ষাহীন হয়ে পড়ে। তাছাড়া যে পরস্ত্রীকে অসতী করে বেড়ায়, তার স্ত্রীও অসতী হতে পারে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, “দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য।” (সূরা নুর ২৬ আয়াত)।
অথচ কোন মানুষ, বরং স্বয়ং ব্যভিচারী ও লম্পটও চায় না যে, তার স্ত্রী ব্যভিচারিণী বা অসতী হোক।
নিজেদের নেই মনুষ্যত্ব, জানি না কেমনে তারা
নারীদের কাছে চাহে সতীত্ব হায়রে শরম-হারা!
ব্যভিচারী হলেও সে কোন দিন চাইবে না যে, তার স্ত্রীও তারই মত ব্যভিচার করুক অথবা তার স্ত্রীকে কেউ ধর্ষণ করুক। স্ত্রী খুন হয়েছে শুনে মনে যতটা আঘাত লাগে, স্ত্রী ব্যভিচার। করেছে বা ধর্ষিতা হয়েছে শুনে মনে আঘাত লাগে তার থেকে অনেক গুণ বেশী। সা’দ বিন । উবাদাহ (রাঃ) বলেন, 'যদি আমি আমার স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষকে দেখি, তাহলে তরবারি দ্বারা তার মাথা কেটে ফেলব।' এ কথা মহানবী # এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, “তোমরা কি সা’দের ঈর্ষায় আশ্চর্যবোধ করছ? আল্লাহর কসম! আমি ওর থেকেও বেশী ঈর্ষাবান এবং আল্লাহ আমার থেকেও বেশী ঈর্ষাবান। আর এ জন্যই তিনি গুপ্ত ও প্রকাশ্য সকল অশ্লীলতাকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। (বুখারী ৭৪১৬ মুসলিম ১৪৯৯ নং)।
অনুরূপ কোন আত্মমর্যাদাবান পুরুষই চায় না যে, তার কোন নিকটাত্মীয় মহিলা ব্যভিচারিণী হোক। অতএব ব্যভিচারী কিরূপে অপরের নিকটাত্মীয় মহিলার সহিত সে কাজ পছন্দ করে?
একদা এক যুবক আল্লাহর রসূল (সা.) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, আপনি আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন!' তিনি বললেন, “তুমি কি তোমার মায়ের সাথে তা পছন্দ কর? তোমার বোন বা মেয়ের সাথে, তোমার ফুফু বা খালার সাথে তা পছন্দ কর?” যুবকটি প্রত্যেকের জন্য উত্তরে একই কথা বলল, না। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ হোক। (তাদের সঙ্গে আমি এ কাজ করতে চাই না।) তখন মহানবী (সা.) বললেন, “তাহলে লোকেরাও তো পছন্দ করে না যে, কেউ তাদের মা, মেয়ে, বোন, খালা বা ফুফুর সাথে ব্যভিচার করুক।” (আহমাদ ৫/২৫৬-২৫৭, ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ ৩৭০ নং)
অতএব ব্যভিচারী যুবককে এ ব্যাপারে উপদেশ গ্রহণ করা উচিত। ব্যভিচার ও লাম্পট্য জগতের এ পাপ কিন্তু এক পর্যায়ের নয়। যেমন, ছোট ব্যভিচার হল, কাম নজরে দেখা চোখের ব্যভিচার। যৌন উত্তেজনামুলক কথা শোনা কানের ব্যভিচার এবং তা বলা জিভের ব্যভিচার। স্পর্শ করা হাতের এবং যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে চুলা পায়ের। ব্যভিচার। আর দুই যৌনাঙ্গের মিলনে হয় বড় ও আসল ব্যভিচার। (মিশকাত৮৬ নং) কোন অবিবাহিতা নারীর সহিত ব্যভিচার করার চাইতে বড় ব্যভিচার হল কোন বিবাহিতা নারীর সহিত ব্যভিচার। এর চাইতে বড় হল কোন আত্মীয় বা প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার। অতঃপর নিজের ভাইঝি-বোনঝি বা খালা-ফুফুর সাথে, অতঃপর নিজের বোনের সাথে, অতঃপর নিজের মেয়ের সাথে এবং সর্বোপরি বড় ব্যভিচার হল মায়ের সাথে ব্যভিচার। (নাউযু বিল্লাহি মিন যালিকা কুল্লিহ) অবশ্য একান্ত জানোয়ার ছাড়া নিজের নিকটাত্মীয় এগানা মহিলাদের সাথে কেউ একাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয় না। আর এগানা মহিলা হল সেই সব মহিলা, যাদের সহিত কোন সময়ই বিবাহ বৈধ নয়।