নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

সোমবার দিনভর রাসূল (ছাঃ)-এর স্থলাভিষিক্ত নেতা বা ‘খলীফা’ নির্বাচনে ব্যয় হয়ে যায়। ছাক্বীফায়ে বনী সা‘এদায় সর্বসম্মতভাবে হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) উম্মতের খলীফা নির্বাচিত হন। পরদিন মঙ্গলবার সকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে গোসল দেওয়া হয়। এই সময় পর্যন্ত রাসূল (ছাঃ)-এর দেহ মুবারক একটি জরিদার ইয়ামনী চাদর দ্বারা আবৃত রাখা হয় এবং তাঁর কক্ষ ভিতর থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যগণ বন্ধ করে রাখেন।

গোসলের কাজে অংশ নেন রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা হযরত আববাস ও তাঁর দুই পুত্র ফযল ও কুছাম (قُثَمْ) এবং রাসূল (ছাঃ)-এর মুক্তদাস শুক্বরান (شُقْرَان), উসামা বিন যায়েদ ও আওস বিন খাওলী এবং হযরত আলী (রাঃ) সহ মোট ৭জন। আওস ছিলেন খাযরাজ গোত্রের একজন বদরী ছাহাবী। যিনি হযরত আলীকে আল্লাহর কসম দিয়ে গোসলের কাজে শরীক হওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন’ (ইবনু হিশাম ২/৬৬২)। আওস বিন খাওলী রাসূল (ছাঃ)-এর দেহ মুবারক নিজের বুকের উপরে ঠেস দিয়ে রাখেন। হযরত আববাস ও তাঁর পুত্রদ্বয় তাঁর দেহের পার্শ্ব পরিবর্তন করে দেন। উসামা ও শুক্বরান পানি ঢালেন এবং হযরত আলী রাসূল (ছাঃ)-এর দেহ মুবারক ধৌত করেন। এসময় রাসূল (ছাঃ)-এর পরিহিত পোষাক খোলা হয়নি।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে তিনটি ইয়ামনী সাদা চাদর দিয়ে কাফন পরানো হয়। এগুলির মধ্যে ক্বামীছ ও পাগড়ী ছিল না।[1] তাঁর অন্য বর্ণনায় এসেছে, লোকেরা তাঁকে গোসল দেওয়ার সময় মতভেদ করল যে, অন্যান্য মাইয়েতের দেহ থেকে যেভাবে কাপড় খুলে নেওয়া হয়, সেভাবে করা হবে কি-না? তখন আল্লাহ তাদের উপর নিদ্রা চাপিয়ে দেন। যাতে তারা সবাই ঢুলতে থাকে। এরি মধ্যে হঠাৎ একজন গৃহ কোণ থেকে বলে উঠে, ‘তোমরা নবীকে গোসল দাও তাঁর দেহের কাপড় সহ। তখন সকলে উঠে দাঁড়াল এবং তাঁকে গোসল দিল। এমতাবস্থায় তাঁর দেহে ক্বামীছ (জামা) ছিল। ক্বামীছের উপর দিয়েই তারা পানি ঢালে এবং ক্বামীছের উপর দিয়েই তাঁর দেহ কচলায়’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘যদি আমি আগে জানতাম যা পরে জানলাম, তাহ’লে রাসূল (ছাঃ)-কে কেউই গোসল দিতে পারত না, তাঁর স্ত্রীগণ ব্যতীত’।[2] এক্ষণে তাঁকে পরিহিত পোষাকসহ গোসল ও কাফন করা হয় বিধায় প্রথম বর্ণনায় কাফনের কাপড়ের মধ্যে ক্বামীছ বা জামা ছিল না বলার সেটিও একটি কারণ হ’তে পারে।

তিনটি কাপড়ে কাফন দেওয়ার কথা বিভিন্ন ছহীহ হাদীছে এসেছে। কিন্তু তিনটি কাপড়ের ব্যাখ্যা এসেছে আহমাদ (হা/১৯৪২), আবুদাঊদ (হা/৩১৫৩), তিরমিযী (হা/৯৯৭) সহ অন্যান্য হাদীছে ক্বামীছ, ইযার ও লিফাফাহ তথা জামা, লুঙ্গী ও বড় চাদর হিসাবে। যদিও ঐসব হাদীছগুলির সনদ দুর্বলতা মুক্ত নয়। তবে জামা সহ তিন কাপড়ে কাফন দেওয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই’।[3]

[1]. বুখারী হা/১২৬৪; মুসলিম হা/৯৪১ (৪৬); মিশকাত হা/১৬৩৫।

[2]. হাকেম হা/৪৩৯৮; বায়হাক্বী দালায়েল হা/৩১৯৬ সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৫৯৪৮।

[3]. বিস্তারিত দ্রঃ মির‘আত শরহ মিশকাত হা/১৬৫০-এর ব্যাখ্যা, ৫/৩৪৫ পৃঃ।