৫. জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي وَسَطِ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ خُطْبَةَ الْوَدَاعِ، فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ، وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ، أَلاَ لاَ فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ، وَلاَ لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ، وَلاَ لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ، وَلاَ أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ، إِلاَّ بِالتَّقْوَى، إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ، أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ؟ قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: فَلْيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ- رواه البيهقى فى الشُّعَب و رواه أحمد-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে আইয়ামে তাশরীক্বের মধ্যবর্তী দিনে আমাদের উদ্দেশ্যে বিদায়ী ভাষণ দিয়ে বলেন, (৯) ‘হে জনগণ! নিশ্চয় তোমাদের পালনকর্তা মাত্র একজন। তোমাদের পিতাও মাত্র একজন। (১০) মনে রেখ! আরবের জন্য অনারবের উপর, অনারবের জন্য আরবের উপর, লালের জন্য কালোর উপর এবং কালোর জন্য লালের উপর কোনরূপ প্রাধান্য নেই আল্লাহভীরুতা ব্যতীত’। (১১) নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু। তিনি বলেন, (১২) আমি কি তোমাদের নিকট পৌঁছে দিলাম? লোকেরা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, অতএব উপস্থিতগণ যেন অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছে দেয়’।[1]
৬. আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, এদিন রাসূল (ছাঃ) হামদ ও ছানার পর ‘দাজ্জাল’ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। অতঃপর বলেন,
مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ قَدْ أَنْذَرَهُ أُمَّتَهُ، لَقَدْ أَنْذَرَهُ نُوحٌ وَالنَّبِيُّونَ مِنْ بَعْدِهِ، وَإِنَّهُ يَخْرُجُ فِيكُمْ، وَمَا خَفِيَ عَلَيْكُمْ مِنْ شَأْنِهِ، فَلاَ يَخْفَى عَلَيْكُمْ إِنَّهُ أَعْوَرُ عَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّهَا عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ ثُمَّ قَالَ: وَيْلَكُمْ أَوْ وَيْحَكُمْ انْظُرُوا لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ-
(১৩) ‘আল্লাহ এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি তার উম্মতকে এ বিষয়ে সতর্ক করেননি। নূহ এবং তাঁর পরবর্তী নবীগণ তাদের স্ব স্ব উম্মতকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। সে তোমাদের মধ্যে বহির্গত হবে। তার অবস্থা তোমাদের নিকট গোপন থাকবে না। তার ডান চোখ হবে কানা, ফোলা আঙ্গুরের মত’...। অতঃপর তিনি বলেন, (১৪) তোমরা সাবধান থেকো। আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান মেরে যেন পুনরায় কাফের হয়ে যেয়ো না’।[2] এর অর্থ খুনোখুনি মহাপাপে লিপ্ত হয়ো না। যা সবচেয়ে বড় পাপ। এর অর্থ প্রকৃত কাফের নয়। যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়। যেমন অন্য হাদীছে এসেছে,سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেক্বী এবং তাকে হত্যা করা কুফরী’ (বুখারী হা/৪৮)। দুর্ভাগ্য মুসলমানেরা রাসূল (ছাঃ)-এর এ নির্দেশ মানেনি।
৭. আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوا أَبَدًا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ-
(১৫) ‘হে জনগণ! আমি তোমাদের নিকট এমন বস্ত্ত রেখে যাচ্ছি, যা মযবুতভাবে ধারণ করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ’ (হাকেম হা/৩১৮, হাদীছ ছহীহ)।
মালেক বিন আনাস (রহঃ) বলেন, তার নিকটে হাদীছ পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
عَنْ مَالِكٍ أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ- رَواهُ فِي الْمُوَطَّأِ-
‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা তা মযবুতভাবে আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ’।[3]
এভাবে আরাফাতের ময়দানে ৬টি হাদীছে ১৬টি বিষয় এবং কুরবানীর দিন ও মিনার প্রথম দু’দিন সহ তিনদিনে উপরে বর্ণিত ৭টি হাদীছে ১৫টি বিষয় সহ সর্বমোট ১৩টি হাদীছে ৩১টি বিষয় বর্ণিত হয়েছে। যার প্রতিটি মানব জীবনে চিরন্তন দিক নির্দেশনা মূলক। যা মেনে চলা মানব জাতির জন্য একান্ত আবশ্যক।
[2]. আবু ইয়া‘লা হা/৫৫৮৬, সনদ ছহীহ; বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৪৪০২।
[3]. মুওয়াত্ত্বা হা/৩৩৩৮, তাহকীক : মুহাম্মাদ মুছত্বফা আল-আ‘যামী; মিশকাত হা/১৮৬, তাহকীক আলবানী, সনদ হাসান ; যুরক্বানী, শরহ মুওয়াত্ত্বা ক্রমিক ১৬১৪; মির‘আত হা/১৮৬-এর ব্যাখ্যা।