এদিন অর্থাৎ জুম‘আর দিন সন্ধ্যায় আল্লাহর পক্ষ হ’তে নাযিল হয় এক অনন্য দলীল, ইসলামের পরিপূর্ণতার সনদ, যা ইতিপূর্বে কোন এলাহী ধর্মের জন্য নাযিল হয়নি। এ সময় ‘অহি’ নাযিলের গুরুভার বহনে অপারগ হয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর বাহন ‘আযবা’ (الْعَضْبَاءُ) আস্তে করে বসে পড়ে। অতঃপর ‘অহি’ নাযিল হ’ল-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِيْناً-
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপরে আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’।[1] একারণে বিদায় হজ্জকে ‘হাজ্জাতুল ইসলাম’(حَجَّةُ الْإِسْلاَمِ) বা ‘ইসলামের হজ্জ’ বলা হয় (আল-বিদায়াহ ৫/১০৯)।
উক্ত আয়াত নাযিলের বিষয়ে পরবর্তীতে ইহূদীরা ওমর ফারূক (রাঃ)-কে বলেন, ‘হে আমীরুল মুমিনীন! যদি উক্ত আয়াত আমাদের উপর নাযিল হ’ত, তাহ’লে আমরা ঐদিনটিকে ঈদের দিন হিসাবে গ্রহণ করতাম। তখন ওমর (রাঃ) বললেন,
وَاللهِ إِنِّى لأَعْلَمُ الْيَوْمَ الَّذِى نَزَلَتْ فِيهِ عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالسَّاعَةَ الَّتِى نَزَلَتْ فِيهَِا، نَزَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَشِيَّةَ عَرَفَةَ فِى يَوْمِ الْجُمُعَةِ ‘আল্লাহর কসম! আমি জানি যেদিন এটি রাসূল (ছাঃ)-এর উপর নাযিল হয়েছিল এবং কখন এটি নাযিল হয়েছিল। এটি রাসূল (ছাঃ)-এর উপর নাযিল হয়েছিল জুম‘আ ও আরাফার দিন সন্ধ্যায়’ (আহমাদ হা/১৮৮, সনদ ছহীহ)। মুসলিমের বর্ণনায় জুম‘আর রাতের(لَيْلَةَ جَمْعٍ) কথা বলা হয়েছে যার অর্থ ইমাম নববী বলেন, জুম‘আর দিন (শরহ মুসলিম হা/৩০১৭)। বুখারীর বর্ণনায় স্পষ্টভাবে জুম‘আর দিনের(فِى يَوْمِ جُمُعَةٍ) কথা বলা হয়েছে (বুখারী হা/৭২৬৮)।[2] অর্থাৎ জুম‘আর দিন মাগরিবের পূর্বে। কেননা মাওয়ার্দী বলেন, عَشِيَّةٌ অর্থ অপরাহ্ন। যখন সূর্য অস্ত যাওয়ার জন্য ঢলে পড়ে। مَسَاءٌ অর্থ সূর্যাস্তের পর অন্ধকার প্রকাশিত হওয়া’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা রূম ১৮ আয়াত)।
নববী বলেন, এর দ্বারা ওমর (রাঃ) বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, আমরা ঐদিনটিকে ঈদ হিসাবেই গ্রহণ করেছি। কেননা ঐদিন ছিল জুম‘আ এবং আরাফার দিন। আর দু’টিই হ’ল মুসলমানদের নিকট ঈদের দিন’ (শরহ মুসলিম হা/৩০১৭)। একই প্রশ্ন ইবনু আববাস (রাঃ)-কে করা হ’লে তিনি বলেন,فَإِنَّهَا نَزَلَتْ فِى يَوْمِ عِيدٍ فِى يَوْمِ جُمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ ‘কেননা আয়াতটি নাযিল হয়েছিল ‘জুম‘আ ও আরাফাহর দুই ঈদের দিন’ (তিরমিযী হা/৩০৪৪, সনদ ছহীহ)।
ইবনু জুরাইজ ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, এই আয়াত নাযিলের পর আল্লাহর নবী (ছাঃ) আর মাত্র ৮১ দিন ধরাধামে বেঁচে ছিলেন।[3]
এই সময় একজন মুহরিম ব্যক্তি সওয়ারী থেকে পড়ে মারা গেলে রাসূল (ছাঃ) তাকে কোনরূপ সুগন্ধি ছাড়াই পানি ও কুলপাতা দিয়ে গোসল দিয়ে ইহরামের দু’টি কাপড়েই কাফন দিতে বলেন। অতঃপর বলেন যেন তার মাথা ও চেহারা ঢাকা না হয় এবং খবর দেন যে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন’।[4]
[2]. প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর মুখে এই আয়াত শ্রবণ করে ওমর ফারূক (রাঃ) কেঁদে উঠলেন। অতঃপর লোকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, إِنَّهُ لَيْسَ بَعْدَ الْكَمَالِ إِلاَّ النُّقْصَانُ ‘পূর্ণতার পরে তো আর কিছুই থাকেনা ঘাটতি ব্যতীত’ (আল-বিদায়াহ ৫/২১৫; কুরতুবী হা/২৫৬৩; ত্বাবারী হা/১১০৮৭, সনদ যঈফ)। মুবারকপুরী এটি ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বুখারীর সূত্রে বর্ণিত বলেছেন, যা ঠিক নয় (আর-রাহীক্ব পৃঃ ৪৬০ টীকা-৫ সহ)। তিনি রহমাতুল্লিল ‘আলামীন (১/২৬৫ পৃঃ) থেকে গৃহীত বলেছেন। কিন্তু সেখানে ওমর (রাঃ)-এর উক্ত বক্তব্য নেই (ঐ, দিল্লী সংস্করণ ১৯৮০ খৃঃ ১/২৩৫ পৃঃ)।
[3]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা মায়েদাহ ৩ আয়াত; তাফসীর ত্বাবারী হা/১১০৮২।
[4]. বুখারী হা/১৮৫১; মুসলিম হা/১২০৬ (৯৮); মিশকাত হা/১৬৩৭।