ইয়ামনের কিন্দা গোত্রের তুজীব শাখার লোকেরা আগেই মুসলমান হয়েছিল। তাদের ১৩ জনের এই প্রতিনিধি দল নিজ গোত্রের মাল-সম্পদ ও গবাদিপশুর যাকাতসমূহ সাথে করে এনেছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা এগুলি ফেরৎ নিয়ে যাও এবং নিজ কওমের ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দাও। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তাদেরকে বণ্টন করার পর উদ্বৃত্তগুলিই কেবল এখানে এনেছি’।
আবুবকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এদের চেয়ে উত্তম কোন প্রতিনিধিদল এযাবত আসেনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,إنّ الْهُدَى بِيَدِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فَمَنْ أَرَادَ بِهِ خَيْرًا شَرَحَ صَدْرَهُ لِلْإِيمَانِ ‘হেদায়াত আল্লাহর হাতেই নিহিত। তিনি যার কল্যাণ চান, তার বক্ষকে ঈমানের জন্য উন্মুক্ত করে দেন’।
তারা দ্বীনের বিধি-বিধান শেখার জন্য খুবই উদগ্রীব ছিল। সেকারণ রাসূল (ছাঃ) তাদের তা‘লীমের জন্য বেলাল (রাঃ)-কে নিযুক্ত করেন। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করে। তিনি সেগুলির জওয়াব তাদেরকে লিখিয়ে দেন। তারা ফিরে যাবার জন্য ব্যস্ত হ’লে ছাহাবায়ে কেরাম তাদের বললেন, এত তাড়া কিসের? তারা বলল, রাসূল (ছাঃ)-এর দরবার থেকে আমরা যেসব কল্যাণ লাভ করেছি, দ্রুত ফিরে গিয়ে আমরা সেগুলি আমাদের সম্প্রদায়কে জানাতে চাই।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে বহুমূল্য উপঢৌকনাদি প্রদান করেন। অতঃপর বিদায়ের সময় জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের দলের কেউ বাকী আছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ একজন নওজোয়ান বাকী আছে। যাকে আমরা আমাদের মাল-সামানের পাহারায় রেখে এসেছি। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা গিয়ে তাকে পাঠিয়ে দাও। তারপর নওজোয়ানটি এসে রাসূল (ছাঃ)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি বনু আবযার সন্তান(يَا رَسُولَ اللهِ إنّي امْرُؤٌ مِنْ بَنِي أَبْذَى)। ইতিপূর্বে যারা আপনার কাছে এসেছিল, আমি তাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা আপনার নিকট থেকে তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে গেছে। এক্ষণে আপনি আমার প্রয়োজন মিটিয়ে দিন। আমি আপনার নিকটে কেবল একটা উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছি যে, আপনি আমার জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করবেন যেন তিনি আমাকে ক্ষমা করেন ও আমার উপরে রহম করেন এবং আমার অন্তরকে মুখাপেক্ষীহীন করেন’। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তার জন্য অনুরূপ দো‘আ করেন।
অতঃপর ১০ম হিজরীতে রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জে গেলে উক্ত গোত্রের লোকেরাও হজ্জে গমন করে ও রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে মিনায় সাক্ষাৎ করে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, বনু আবযার ঐ নওজোয়ানের খবর কি? তারা বলল, ছেলেটির অবস্থা এমন হয়েছে যে, দুনিয়ার সম্পদ তার সামনে ঢেলে দিলেও সে চোখ তুলে সেদিকে তাকায় না’। সে সর্বদা অল্পে তুষ্ট থাকে। রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে যখন লোকদের মধ্যে ধর্মত্যাগের হিড়িক পড়ে, তখন উক্ত যুবক তার কওমকে নছীহত করে। যার ফলে তারা ইসলামের উপরে দৃঢ় থাকে’ (যাদুল মা‘আদ ৩/৫৬৮-৬৯)।
[শিক্ষণীয় : (ক) প্রত্যেক জনপদে যাকাত ঠিকমত আদায় ও বণ্টন করা হ’লে মুসলিম সমাজে গরীবের অস্তিত্ব থাকবে না। (খ) অল্পে তুষ্ট থাকাই সচ্ছলতার মাপকাঠি। (গ) অত্র ঘটনায় রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় হাদীছ লিখনের দলীল পাওয়া যায়।]