নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
অভিযান সমূহ কাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল এবং কেন?(خلاف من سارت البعوث ولم؟)

অভিযানগুলির মধ্যে ১ হ’তে ৭২-এর মধ্যে মোট ২১টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে কুরায়েশদের বিরুদ্ধে। ১১ হ’তে ৫৩-এর মধ্যে মোট ৮টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে ইহূদীদের বিরুদ্ধে। ৪৪ হ’তে ৯০-এর মধ্যে ৬টি অভিযান খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে এবং ১০ হ’তে ৮৩-এর মধ্যে মোট ৫১টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে নাজদ ও অন্যান্য এলাকার বেদুঈন গোত্র ও সন্ত্রাসী ডাকাত দলের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ২৪, ২৫, ৩৬ ও ৬৫ নং সারিইয়া চারটি ছিল স্রেফ তাবলীগী কাফেলা এবং প্রতারণামূলকভাবে যাদের প্রায় সবাইকে হত্যা করা হয়। বদরসহ প্রথম দিকের ৯টি অভিযান ছিল কুরায়েশদের বাণিজ্য কাফেলা দখল করে তাদের আর্থিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ প্রস্ত্ততি ভন্ডুল করার জন্য।

শুরুতে কুরায়েশদের মূল লক্ষ্য ছিল তাদের ভাষায় ছাবেঈ (صَابِئِي) বা ধর্মত্যাগী মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথী মুষ্টিমেয় মুহাজিরদের নির্মূল করা এবং সেখানে আক্রোশটা ছিল প্রধানতঃ ধর্মবিশ্বাসগত। কিন্তু পরে তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় মদীনা হয়ে সিরিয়ায় তাদের ব্যবসায়িক পথ কণ্টকমুক্ত করা। সেই সাথে ছিল তাদের বড়ত্বের অহংকার। কেননা মুহাম্মাদ তাদের বহিষ্কৃত সন্তান হয়ে তাদের চাইতে বড় হবে ও তাদের উপরে প্রাধান্য বিস্তার করবে, এটা ছিল তাদের নিকটে একেবারেই অসহ্য। তাদের এই ক্ষুব্ধ ও বিদ্বেষী মানসিকতাকেই কাজে লাগায় ধূর্ত ইহূদী নেতারা ও অন্যান্যরা। ফলে মক্কা বিজয়ের পূর্বেকার মুসলিম অভিযানগুলির অধিকাংশ ছিল প্রতিরোধ মূলক।

ইহূদীদের বিরুদ্ধে অভিযানগুলি হয় অবিরতভাবে তাদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের কারণে এবং তাদের চুক্তিভঙ্গের কারণে। খ্রিষ্টানদের কোন তৎপরতা মদীনায় ছিল না। সিরিয়ার নিকটবর্তী দূমাতুল জান্দালে প্রথম যে অভিযানটি (ক্রমিক ৪৪) তাদের দিকে প্রেরিত হয়, সেটি ছিল মূলতঃ তাবলীগী সফর এবং তাতে তাদের গোত্রনেতাসহ সকলে মুসলমান হয়ে যায়। অতঃপর মুতার যুদ্ধ (ক্রমিক ৬৯) এবং তাবূক অভিযান (ক্রমিক ৮৬) ছিল আগ্রাসী রোম সম্রাটের বিরুদ্ধে ও তার প্রেরিত বিশাল বাহিনীর মদীনা আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য। অবশেষে রোমকরা ভয়ে পিছু হটে গেলে কোন যুদ্ধ হয়নি।

উল্লেখ্য যে, ৩য় হিজরীতে ওহোদ যুদ্ধে (ক্রমিক ২০) কপটতার জন্য রাসূল (ছাঃ) মুনাফিকদের আর কোন যুদ্ধে যাবার অনুমতি দেননি। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও অন্যান্যদের প্রকাশ্যে তওবা ও বারবার অনুরোধে তিনি তাদেরকে ৫ম হিজরীতে বনু মুছত্বালিক যুদ্ধে (ক্রমিক ৪৩) যাবার অনুমতি দেন। কিন্তু সেখানে তারা যথারীতি মুনাফেকী করে। ফলে তাদেরকে আর কোথাও অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাবূক অভিযানে (ক্রমিক ৮৬) তাদের ১২ জন এজেন্ট গোপনে ঢুকে পড়ে ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।

পরিশেষে বলা চলে যে, ইসলামের দাওয়াত মক্কায় ছিল কেবল প্রচারমূলক। কিন্তু মদীনায় ছিল প্রচার ও প্রতিরোধ মূলক। যুগে যুগে ইসলামী দাওয়াতে উভয় নীতিই প্রযোজ্য হয়েছে এবং হবে। এখানে হারাম মাসে যুদ্ধ করার অনুমতিও পাওয়া গেছে কেবল বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে। যার সূত্রপাত ঘটে নাখলা যুদ্ধে (ক্রমিক ৮)। এ প্রসঙ্গে সূরা বাক্বারাহ ২১৭ আয়াতটি নাযিল হয়।