১. সংখ্যাশক্তি নয়, বরং ঈমানী শক্তিই হ’ল ইসলামী বিজয়ের মূল চালিকাশক্তি। হোনায়েন যুদ্ধে বিজয় ছিল তার অন্যতম প্রমাণ।
২. শিরকের প্রতি আকর্ষণ যে মানুষের সহজাত, তার প্রমাণ পাওয়া যায় হোনায়েন যাওয়ার পথে মুশরিকদের পূজিত বৃক্ষ ‘যাতু আনওয়াত্ব’(ذَاتُ أَنْوَاطٍ) দেখে অনুরূপ একটি পূজার বৃক্ষ নিজেদের জন্য নির্ধারণকল্পে কিছু নও মুসলিমের আবদারের মধ্যে।
৩. কেবল তারুণ্যের উচ্ছ্বাস দিয়ে নয় বরং যুদ্ধের জন্য প্রবীণদের দূরদর্শিতার মূল্যায়ন অধিক যরূরী। শত্রুপক্ষের প্রবীণ নেতা দুরাইদ বিন ছিম্মাহর পরামর্শ অগ্রাহ্য করে তরুণ সেনাপতি মালেক বিন ‘আওফের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণেই হোনায়েন যুদ্ধে তাদের মর্মান্তিক পরাজয় ঘটে।
৪. অহংকার পতনের মূল- একথারও প্রমাণ মিলেছে হোনায়েনের যুদ্ধে। সংখ্যাধিক্যের অহংকারে যখন কিছু মুসলিম সৈন্যের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, ‘আজ আমরা কখনোই পরাজিত হব না’। তখন যুদ্ধের শুরুতেই তাদের পলায়ন দশার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের বিপর্যয় এই অহংকার চূর্ণ করে দেন।
৫. নেতার প্রতি কেবল আনুগত্য নয়, তার প্রতি হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা ও আকর্ষণ থাকা প্রয়োজন। নইলে বড় কোন বিজয় লাভ করা সম্ভব নয়। যেমন হোনায়েন বিপর্যয়কালে রাসূল (ছাঃ)-এর ও তাঁর চাচা আববাসের আহবান শুনে ছাহাবীগণ গাভীর ডাকে বাছুরের ছুটে আসার ন্যায় লাববায়েক লাববায়েক বলতে বলতে চৌম্বিক গতিতে ছুটে আসে এবং যুদ্ধের গতি পরিবর্তিত হয়ে যায়।
৬. চূড়ান্ত প্রচেষ্টার পরেই কেবল আল্লাহর সাহায্য নেমে আসে। যেমন ছাহাবীগণ যুদ্ধে ফিরে আসার পরেই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) শত্রুপক্ষের দিকে বালু নিক্ষেপ করেন এবং তখনই তাদের পরাজয়ের ধারা সূচিত হয়।
৭. সর্বাবস্থায় মানবতাকে উচ্চে স্থান দিতে হবে। তাই দেখা যায় যুগের নিয়ম অনুযায়ী বিজিত পক্ষের নারী-শিশু ও বন্দীদের বণ্টন করে দেবার পরেও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ফেরৎ দিলেন। এমনকি ছয়গুণ বিনিময় মূল্য দিয়ে অন্যের নিকট থেকে চেয়ে নিয়ে তাদেরকে স্ব স্ব গোত্রে ফেরৎ পাঠালেন। এ ছিল সেযুগের জন্য এক অচিন্তনীয় ঘটনা। বলা চলে যে, এই উদারতার ফলশ্রুতিতেই বনু হাওয়াযেন ও বনু ছাক্বীফ দ্রুত ইসলাম কবুল করে মদীনায় চলে আসে।
৮. ইসলামে যুদ্ধ বিজয়ের চাইতে হেদায়াত প্রাপ্তিই মুখ্য। সেকারণ আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাক্বীফ গোত্রের জন্য বদদো‘আ না করে হেদায়াতের দো‘আ করেন এবং আল্লাহর রহমতে তারা সবাই পরে মুসলমান হয়ে যায়।
৯. দুনিয়াপূজারীদের অনুগত করার জন্য তাদেরকে অধিকহারে দুনিয়াবী সুযোগ দেওয়া ক্ষেত্র বিশেষে সিদ্ধ- তার প্রমাণ পাওয়া যায় মক্কার নওমুসলিমদের চাহিদামত বিপুল গণীমত দেওয়ার মধ্যে। অথচ আখেরাতপিয়াসী আনছার ও মুহাজিরগণকে নাম মাত্র গণীমত প্রদান করা হয়।
১০. আমীর ও মামূর উভয়কে উভয়ের প্রতি নিশ্চিন্ত বিশ্বাস রাখতে হয়। সে বিশ্বাসে সামান্য ফাটল দেখা দিলেই উভয়কে অগ্রণী হয়ে তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে হয়। যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর গণীমত বণ্টনে আনছারদের অসন্তুষ্টির খবর জানতে পেরেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দ্রুত তাদের কাছে পৌঁছে যান এবং তাদের সন্দেহের নিরসন ঘটান। ফলে অসন্তুষ্টির আগুন মহববতের অশ্রুতে ভিজে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।