(১) আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়া কর্তৃক নিযুক্ত মদীনার গবর্ণর ‘আমর বিন সাঈদ ইবনুল ‘আছ যখন মক্কায় অভিযানের জন্য সৈন্য প্রেরণ করেন, তখন তাকে উদ্দেশ্য করে বিখ্যাত ছাহাবী আবু শুরাইহ (রাঃ) বলেন, ‘হে আমীর! আপনি কি আমাকে সেই ভাষণটি বলার অনুমতি দিবেন, যা আমি নিজ কানে শুনেছি ও নিজ অন্তরে উপলব্ধি করেছি এবং নিজ দুই চোখে দেখেছি, যখন তিনি কথাগুলি বলছিলেন মক্কা বিজয়ের দ্বিতীয় দিনে?
حَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ : إِنَّ مَكَّةَ حَرَّمَهَا اللهُ وَلَمْ يُحَرِّمْهَا النَّاسُ، فَلاَ يَحِلُّ لاِمْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ يَسْفِكَ بِهَا دَمًا، وَلاَ يَعْضِدَ بِهَا شَجَرَةً، فَإِنْ أَحَدٌ تَرَخَّصَ لِقِتَالِ رَسُولِ اللهِ- صلى الله عليه وسلم : فِيهَا فَقُولُوا إِنَّ اللهَ قَدْ أَذِنَ لِرَسُولِهِ، وَلَمْ يَأْذَنْ لَكُمْ. وَإِنَّمَا أَذِنَ لِى فِيهَا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ، ثُمَّ عَادَتْ حُرْمَتُهَا الْيَوْمَ كَحُرْمَتِهَا بِالأَمْسِ، وَلْيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ- رواه البخارىُّ-
হামদ ও ছানার পরে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই মক্কাকে আললাহ হারাম করেছেন। অথচ লোকেরা এটিকে হারাম করেনি। অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করে তার জন্য এখানে রক্তপাত ও বৃক্ষ কর্তন হালাল নয়। যদি কেউ আল্লাহর রাসূলের রক্তপাতের দোহাই দিয়ে এটাকে হালাল করতে চায়, তাহ’লে তোমরা বলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তোমাদেরকে তিনি অনুমতি দেননি। আর তিনি তো আমাকে অনুমতি দিয়েছিলেন কেবল দিনের কিছু সময়ের জন্য। অতঃপর আজ তার সম্মান ফিরে এসেছে, যে সম্মান ছিল গতকাল। সুতরাং তোমাদের উপস্থিতগণ যেন অনুপস্থিতগণের নিকট পৌঁছে দেয়’ (বুখারী হা/১০৪)। উল্লেখ্য যে, উক্ত যুদ্ধে কা‘বাগৃহে রক্তপাত হয় এবং আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ) ৭৩ বছর বয়সে মর্মান্তিকভাবে শহীদ হন (ঐ, ফাৎহুল বারী)।
(২) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
لَمَّا فَتَحَ اللهُ عَلَى رَسُولِهِ- صلى الله عليه وسلم- مَكَّةَ قَامَ فِى النَّاسِ، فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ : إِنَّ اللهَ حَبَسَ عَنْ مَكَّةَ الْفِيلَ وَسَلَّطَ عَلَيْهَا رَسُولَهُ وَالْمُؤْمِنِينَ، فَإِنَّهَا لاَ تَحِلُّ لأَحَدٍ كَانَ قَبْلِى، وَإِنَّهَا أُحِلَّتْ لِى سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ وَإِنَّهَا لاَ تَحِلُّ لأَحَدٍ بَعْدِى، فَلاَ يُنَفَّرُ صَيْدُهَا وَلاَ يُخْتَلَى شَوْكُهَا وَلاَ تَحِلُّ سَاقِطَتُهَا إِلاَّ لِمُنْشِدٍ، وَمَنْ قُتِلَ لَهُ قَتِيلٌ فَهْوَ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ، إِمَّا أَنْ يُفْدَى وَإِمَّا أَنْ يُقِيدَ. فَقَالَ الْعَبَّاسُ إِلاَّ الإِذْخِرَ، فَإِنَّا نَجْعَلُهُ لِقُبُورِنَا وَبُيُوتِنَا. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ- صلى الله عليه وسلم : إِلاَّ الإِذْخِرَ، فَقَامَ أَبُو شَاهٍ- رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْيَمَنِ- فَقَالَ اكْتُبُوا لِى يَا رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ- صلى الله عليه وسلم : اكْتُبُوا لأَبِى شَاهٍ- رواه البخارىُّ-
‘যখন আল্লাহ তাঁর রাসূলকে মক্কা বিজয় দান করলেন, তখন তিনি লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর হাম্দ ও ছানা শেষে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মক্কা থেকে হস্তীওয়ালাদের প্রতিরোধ করেছিলেন এবং তার উপরে তিনি তাঁর রাসূল ও মুমিনদের বিজয়ী করেছেন। আমার পূর্বে কারু জন্য এখানে রক্তপাত হালাল ছিল না। দিনের কিছু সময়ের জন্য কেবল আমার জন্য হালাল করা হয়। আর তা আমার পরে কারু জন্য হালাল হবে না। অতএব এখানকার কোন শিকার কেউ তাড়াবে না। এখানকার কোন কাঁটা কেউ উঠাবে না। কোন হারানো বস্ত্ত কেউ কুড়াবে না। তবে উক্ত বিষয়ে প্রচারকারী ব্যতীত। যদি কেউ হত্যা করে, তবে তার উত্তরাধিকারীদের জন্য দু’টি এখতিয়ার থাকবে। তারা চাইলে হত্যার বদলে হত্যা করবে অথবা রক্তমূল্য গ্রহণ করবে। এ সময় আববাস (রাঃ) বললেন, ‘ইযখির’ (الْإِذْخِر) ঘাস ব্যতীত। কেননা এটি আমরা ব্যবহার করে থাকি আমাদের বাড়ী-ঘরের জন্য এবং কবরের জন্য। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘ইযখির’ ব্যতীত। এসময় ‘আবু শাহ’ নামক জনৈক ইয়ামনবাসী উঠে দাঁড়িয়ে বলল, اُكْتُبْ لِى يَا رَسُوْلَ اللهِ ‘হে আল্লাহর রাসূল’! কথাগুলি আমাকে লিখে দিন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,اُكْتُبُوْا لِأَبِىْ شَاهٍ ‘তোমরা আবু শাহকে কথাগুলি লিখে দাও’।[1] রাসূল (ছাঃ)-এর এই নির্দেশের মধ্যে তাঁর জীবদ্দশায় হাদীছ সংকলনের দলীল পাওয়া যায়।
একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এই দিন রাসূল (ছাঃ)-এর মিত্র বনু খোযা‘আহ গোত্রের লোকেরা বনু লাইছ(بَنُو لَيْث) গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করে জাহেলিয়াতের সময় তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যার বদলা নেয়। একথা জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনগণের উদ্দেশ্যে উক্ত কথা বলেন (বুখারী হা/১১২)।
আবু হুরায়রা ও আবু শুরাইহ উভয় রাবী কর্তৃক আরও বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَا مَعْشَرَ خُزَاعَةَ وَارْفَعُو أَيْدِيَكُمْ عَنِ الْقَتْلِ فَقَدْ كَثُرَ إِنْ يَّقَعَ ‘হে বনু খোযা‘আহ! হত্যা করা থেকে নিবৃত্ত হও। কেননা হত্যাকান্ড সংঘটিত হ’লে এর সংখ্যা বেড়ে যাবে’ (বুখারী হা/১১২; আহমাদ হা/১৬৪২৪)। তিনি বলেন,فَمَنْقُتِلَ بَعْدَ مَقَامِيْ هَذَا فَأَهْلُهُ بِخَيْرِ النَّظَرَيْنِ إِنْ شَاءُوْا فَدَمُ قَاتِلِهِ وَإِنْ شَاءُوْا فَعَقْلُهُ ‘অতএব এর পরে যদি কেউ হত্যা করে, তবে তার উত্তরাধিকারীদের জন্য দু’টি এখতিয়ার থাকবে। তারা চাইলে হত্যার বদলে হত্যা করবে অথবা রক্তমূল্য গ্রহণ করবে’ (আহমাদ হা/১৬৪২৪)।
(৩) এদিনের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিকাহে মুৎ‘আহ চিরকালের জন্য হারাম করে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى قَدْ كُنْتُ أَذِنْتُ لَكُمْ فِى الاِسْتِمْتَاعِ مِنَ النِّسَاءِ وَإِنَّ اللهَ قَدْ حَرَّمَ ذَلِكَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَمَنْ كَانَ عِنْدَهُ مِنْهُنَّ شَىْءٌ فَلْيُخَلِّ سَبِيلَهُ وَلاَ تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا ‘হে জনগণ! আমি তোমাদের জন্য নিকাহে মুৎ‘আহ বা সাময়িকভাবে ঠিকা বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলাম। এক্ষণে আল্লাহ এটি ক্বিয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তির নিকট এই ধরনের কোন মহিলা আছে, তাকে ছেড়ে দাও। তাকে যা কিছু সম্পদ তোমরা দিয়েছ, সেখান থেকে কিছুই নিয়োনা’ (মুসলিম হা/১৪০৬ (২১)।
ভাষ্যকার ইমাম নববী বলেন, অত্র হাদীছ দ্বারা বিগত সাময়িক হুকুম সমূহ রহিত করা হয়েছে। যেমন কবর যিয়ারত প্রথমে নারীদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরে তা রহিত করা হয় এবং যিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়। অত্র হাদীছের মাধ্যমে নিকাহে মুৎ‘আহকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে’ (ঐ, শরহ নববী)।