প্রায় দু’বছর পূর্বে ৬ষ্ঠ হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসে সম্পাদিত হোদায়বিয়ার চার দফা সন্ধিচুক্তির তৃতীয় দফায় বর্ণিত ছিল যে, ‘যে সকল গোত্র মুসলমান বা কুরায়েশ পক্ষের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবে, তারা তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে এবং তাদের কারু উপরে অত্যাচার করা হ’লে সংশ্লিষ্ট দলের উপরে অত্যাচার বলে ধরে নেওয়া হবে’। উক্ত শর্তের আওতায় মক্কার নিকটবর্তী গোত্র বনু খোযা‘আহ(بَنُو خُزَاعَة) মুসলমানদের সাথে এবং বনু বকর(بَنُو بَكْرٍ) কুরায়েশদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সংশ্লিষ্ট দলের মিত্রপক্ষ হিসাবে গণ্য হয়। কিন্তু দু’বছর পুরা না হ’তেই বনু বকর উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করল এবং ৮ম হিজরীর শা‘বান মাসে রাত্রির অন্ধকারে বনু খোযা‘আহর উপরে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে বহু লোককে হতাহত করল। ঐসময় বনু খোযা‘আহ গোত্র ‘ওয়াতীর’ (الْوَتِيرُ) নামক প্রস্রবণের ধারে বসবাস করত, যা ছিল মক্কার নিম্নভূমিতে অবস্থিত (মু‘জামুল বুলদান)।
বনু বকরের এই অন্যায় আক্রমণে কুরায়েশদের ইন্ধন ছিল। তারা অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করেছিল। এমনকি কুরায়েশ নেতা ইকরিমা বিন আবু জাহ্ল, ছাফওয়ান বিন উমাইয়া এবং খোদ হোদায়বিয়া সন্ধিচুক্তিতে কুরায়েশ পক্ষের আলোচক ও স্বাক্ষর দানকারী সোহায়েল বিন ‘আমর সশরীরে উক্ত হামলায় অংশগ্রহণ করেন।[1]
বনু খোযা‘আহ গোত্রের এই হৃদয়বিদারক দুঃসংবাদ নিয়ে ‘আমের বিন সালেম আল-খোযাঈ ৪০ জনের একটি দল সহ দ্রুত মদীনায় আসেন। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তখন মসজিদে নববীতে ছাহাবায়ে কেরাম সহ অবস্থান করছিলেন। এমন সময় ‘আমের কবিতা পাঠ করতে করতে রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে এসে মর্মস্পর্শী ভাষায় তাদের নির্মম হত্যাকান্ড এবং কুরায়েশদের চুক্তি ভঙ্গের কথা বিবৃত করেন। সাড়ে আট লাইনের সেই কবিতার শেষের সাড়ে চার লাইন ছিল নিম্নরূপ:
إنَّ قُرَيْشًا أَخْـلَفُوْكَ الْمَوْعِدَا * وَنَقَضُوْا مِيْثَـاقَكَ الْمُؤَكَّدَا
وَجَعَلُوْا لِيْ فِيْ كَدَاءٍ رُصَّدَا * وَزَعَمُوْا أَنْ لَسْتُ أَدْعُوْ أَحَدَا
وَهُـمْ أَذَلُّ وَأَقَـلُّ عَـدَدَا * هُمْ بَيَّتُـوْنَا بِالْوَتِيْـرِ هُجَّدًا
وَقَتَلُـوْنَا رُكَّـعًا وَّسُجَّدَا * فَانْصُرْ هَدَاك اللهُ نَصْرًا أَيِّدَا
نَحْنُ وَلَدْنَاك فَكُنْتَ وَلَدًا -
(১) ‘নিশ্চয়ই কুরায়েশগণ আপনার সাথে কৃত ওয়াদা খেলাফ করেছে এবং আপনাকে দেওয়া পাক্কা অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে’। (২) ‘তারা ‘কাদা’ নামক স্থানে আমার জন্য ওঁৎ পেতে আছে। তারা ধারণা করেছে যে আমি সাহায্যের জন্য কাউকে আহবান করবো না’। (৩) ‘তারা নিকৃষ্ট ও সংখ্যায় অল্প। তারা ‘ওয়াতীর’ নামক স্থানে রাত্রি বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় আমাদের উপরে হামলা চালিয়েছে’। (৪) ‘তারা রুকূ ও সিজদারত অবস্থায় আমাদেরকে হত্যা করেছে। অতএব আপনি আমাদেরকে দৃঢ় হস্তে সাহায্য করুন। ‘আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন’। (৫) ‘আমরা আপনাকে প্রসব করেছি। অতএব আপনি আমাদের সন্তান’ (ইবনু হিশাম ২/৩৯৪-৯৫)।
কবিতার শেষের চরণ দ্বারা বুঝা যায় যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তখন মুসলমান হয়েছিলেন। যদিও জীবনীকারগণ এ বিষয়ে একমত যে, ঐ সময় পর্যন্ত তারা মুসলমান হয়নি’ (যাদুল মা‘আদ ৩/৩৪৯)।