নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

খায়বর বিজয় সম্পন্ন করার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পার্শ্ববর্তী ইহূদী জনপদ ওয়াদিল ক্বোরা(وَادِي الْقُرَى) এবং তায়মা (تَيْمَاء)-এর দিকে মনোনিবেশ করলেন, যাতে এরা পরবর্তীতে মাথা চাড়া না দেয়। এদের সাথে আরবদের একটি দল গিয়ে মিলিত হয়েছিল।

(১) ওয়াদিল ক্বোরা জয়(فتح وادى القرى) : মুসলিম বাহিনী ওয়াদিল ক্বোরা উপস্থিত হ’লে ইহূদীরা তীর নিক্ষেপ শুরু করল। তাতে মিদ‘আম (مِدْعَم) নামক রাসূল (ছাঃ)-এর জনৈক গোলাম মৃত্যুবরণ করে। সাথীরা তাকে সম্ভাষণ জানিয়ে বলে ওঠেন, الْجَنَّةُ ‘তার জন্য জান্নাত’। তখন রাসূল (ছাঃ) রাগতঃস্বরে বললেন,كَلاَّ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ إِنَّ الشَّمْلَةَ الَّتِى أَخَذَهَا يَوْمَ خَيْبَرَ مِنَ الْمَغَانِمِ، لَمْ تُصِبْهَا الْمَقَاسِمُ، لَتَشْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا ‘কখনোই না। সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার জীবন, এই ব্যক্তি খায়বরের দিন গণীমত বণ্টনের পূর্বেই তা থেকে একটা চাদর নিয়েছিল। সে চাদর এখন তার উপরে অবশ্যই আগুন হয়ে জ্বলবে’। একথা শুনে কেউ জুতার একটি ফিতা বা দু’টি ফিতা যা গোপনে নিয়েছিল, সব এনে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে জমা দিল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, এ ফিতা ছিল আগুনের’(شِرَاكٌ أَوْ شِرَاكَانِ مِنْ نَارٍ)।[1]

এরপর ইহূদীদের নিকটে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তারা যথারীতি দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল। তাদের মধ্য হ’তে একজন এসে দ্বৈতযুদ্ধে আহবান করল। তখন রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষে যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম গিয়ে তাকে খতম করে দেন। এইভাবে তাদের ১১ জন পরপর নিহত হয়। প্রতিবারে দ্বৈতযুদ্ধের পূর্বে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ইসলাম কবুলের আহবান জানাতেন। কিন্তু তারা অহংকার বশে বারবার তা প্রত্যাখ্যান করত। এভাবে একদিন গত হ’ল। পরদিন রাসূল (ছাঃ) আবার গিয়ে তাদের দাওয়াত দিলেন। তখন তারা আত্মসমর্পণ করে এবং বহু গণীমত হস্তগত হয়। যা ছাহাবীগণের মধ্যে বণ্টিত হয়। তবে জমি-জমা ও খেজুর বাগান ইহূদীদের নিকটে অর্ধাংশের বিনিময়ে রেখে দেওয়া হয়, যেমন খায়বরবাসীদের সাথে চুক্তি করা হয়েছিল।[2]

(২) তায়মা বিজয়(فتح تيماء) : খায়বর ও ওয়াদিল ক্বোরার ইহূদীদের শোচনীয় পরাজয়ের খবর জানতে পেরে তায়মার ইহূদীরা শক্তি প্রদর্শনের চিন্তা বাদ দিয়ে সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সন্ধিচুক্তি করে।[3] যার ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ-هَذَا كِتَابٌ مِنْ مُحمدٍ رَسولِ اللهِ لِبَنِي غَادِيَا أنَّ لَهُمُ الذِّمَّةَ وَعَلَيْهِمُ الْجِزْيَةَ وَلا عَدَاءَ وَلا جَلاءَ اللَّيْلُ مَدٌّ وَالنَّهَارُ شَدٌّ ‘এ দলীল লিখিত হ’ল আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে বনু গাদিয়ার জন্য। তাদের জন্য রইল (আমাদের) যিম্মাদারী এবং তাদের উপরে রইল জিযিয়া। কোন শত্রুতা নয়, কোন বিতাড়ন নয়। তাদের রাত্রি ও দিন হবে নিরাপদ’। চুক্তিনামাটি লিপিবদ্ধ করেন খালেদ ইবনু সাঈদ (রাঃ)।[4] চুক্তির ভাষা ও বক্তব্য অতীব চমৎকার ও সারগর্ভ, যা অনন্য ও অভূতপূর্ব।

খালেদ বিন সা‘ঈদ ইবনুল ‘আছ উমুভী ছিলেন ৪র্থ অথবা ৫ম মুসলিম। যিনি স্বপ্নে দেখেন যে, তাঁর পিতা তাঁকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করছেন এবং রাসূল (ছাঃ) তাঁকে দু’হাত ধরে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। এ স্বপ্ন দেখে পরদিন তিনি আবুবকরের নিকটে চলে আসেন এবং বলেন, মুহাম্মাদ অবশ্যই আল্লাহর রাসূল। অতঃপর তিনি ইসলাম কবুল করেন। এ খবর জানতে পেরে তাঁর পিতা তাঁর খানা-পিনা বন্ধ করে দেন এবং তাঁর ভাইদেরকে তাঁর সাথে কথাবার্তা নিষিদ্ধ করে দেন। ফলে তিনি স্ত্রীসহ হাবশায় হিজরত করেন। সেখান থেকে জা‘ফর বিন আবু ত্বালিবের সাথে খায়বরে এসে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে মিলিত হন। আবুবকর (রাঃ)-এর খেলাফতের শেষ দিকে আজনাদায়েন-এর যুদ্ধে তিনি শহীদ হন (আল-ইছাবাহ, খালেদ বিন সা‘ঈদ ক্রমিক ২১৬৯)

[1]. বুখারী হা/৪২৩৪; মুসলিম হা/১১৫; মিশকাত হা/৩৯৯৭, জিহাদ অধ্যায়-১৯, অনুচ্ছেদ-৭।

[2]. যাদুল মা‘আদ ৩/৩১৪; আল-বিদায়াহ ৪/২১৮; আর-রাহীক্ব ৩৭৮ পৃঃ।

[3]. যাদুল মা‘আদ ৩/৩৭৪; আল-বিদায়াহ ৪/২১৮।

[4]. ইবনু সা‘দ ১/২১৩; তিনি চুক্তিনামাটি বিনা সনদে বর্ণনা করেছেন; আর-রাহীক্ব ৩৭৮-৭৯ পৃঃ।