নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
হোদায়বিয়ার সন্ধি ও তার দফা সমূহ (صلح الحديبية وبنوده)

১। মুহাম্মাদ এ বছর মক্কায় প্রবেশ না করেই সঙ্গী-সাথীসহ মদীনায় ফিরে যাবেন। আগামী বছর ওমরাহ করবেন এবং মক্কায় তিনদিন অবস্থান করবেন। সঙ্গে সফরের প্রয়োজনীয় অস্ত্র থাকবে এবং তরবারি কোষবদ্ধ থাকবে। কুরায়েশরা তাদের প্রতি কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না’। এই শর্তের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) আপত্তি জানালে সুহায়েল বলেন, যাতে আরবরা একথা বলার সুযোগ না পায় যে, মুসলমানেরা আমাদের উপরে যবরদস্তি প্রবেশ করেছে। বরং ওটা আগামী বছর’। অতঃপর তিনি মেনে নেন’ (বুখারী হা/৩১৮৪; ২৭৩১)

২। কুরায়েশদের কোন লোক পালিয়ে মুহাম্মাদের দলে যোগ দিলে তাকে ফেরৎ দিতে হবে। পক্ষান্তরে মুসলমানদের কেউ কুরায়েশদের নিকটে গেলে তাকে ফেরৎ দেওয়া হবে না’।[1]

৩। দু’পক্ষের মধ্যে আগামী ১০ বছর যাবৎ যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। এই সময় লোকেরা নিরাপদ থাকবে। কেউ কারু উপরে হস্তক্ষেপ করবে না’।[2]

৪। যারা মুহাম্মাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবে, তারা তার দলে এবং যারা কুরায়েশদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবে, তারা তাদের দলে গণ্য হবে। এমতাবস্থায় তাদের কারু উপরে অত্যাচার করা হ’লে সেটা সংশ্লিষ্ট দলের উপরে অত্যাচার বলে ধরে নেয়া হবে’ (আহমাদ হা/১৮৯৩০)

উপরোক্ত দফাগুলিতে একমত হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হযরত আলীকে ডাকলেন। অতঃপর তাকে লেখার নির্দেশ দিয়ে বললেন, লিখ- ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’। সুহায়েল বলল, ‘রহমান’ কি আমরা জানি না। বরং লিখুন- ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আলীকে তাই-ই লিখতে বললেন। অতঃপর লিখতে বললেন-هَذَا مَا قَاضَى عَلَيْهِ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ ‘এগুলি হ’ল সেইসব বিষয় যার উপরে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সন্ধি করেছেন’। সোহায়েল বাধা দিয়ে বলল,لَوْ عَلِمْنَا أَنَّكَ رَسُولُ اللهِ لَمْ نَمْنَعْكَ وَلَبَايَعْنَاكَ ‘যদি আমরা জানতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসূল, তাহ’লে আমরা আপনাকে আল্লাহর ঘর হ’তে বিরত রাখতাম না এবং অবশ্যই আমরা আপনার হাতে বায়‘আত করতাম’। অতএব লিখুন ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ’। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন,أَنَا وَاللهِ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ وَأَنَا وَاللهِ رَسُولُ اللهِ ‘আমি অবশ্যই আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ এবং আমি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল’ (বুখারী হা/৩১৮৪)। অন্য বর্ণনায় এসেছে,وَإِنْ كَذَّبْتُمُونِى ‘যদিও তোমরা আমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে থাক’ (বুখারী হা/২৭৩১)। অতঃপর তিনি আলীকে বললেন ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দ মুছে ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ’ লিখতে। কিন্তু আলী বললেন,وَاللهِ لاَ أَمْحَاهُ أَبَدًا ‘কসম আল্লাহর! কখনোই আমি তা মুছবো না’। রাসূল (ছাঃ) বললেন, فَأَرِنِيْهِ ‘তাহ’লে আমাকে স্থানটি দেখিয়ে দাও’। আলী বলেন, অতঃপর আমি তাঁকে দেখিয়ে দিলাম। তখন তিনি নিজ হাতে ওটা মুছে দিলেন’ (বুখারী হা/৩১৮৪)। অতঃপর তিনি বললেন,اكْتُبْ مِنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ‘লেখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ’।[3] এভাবে চুক্তিনামা লিখন সম্পন্ন হ’ল।

চুক্তি সম্পাদনের পর বনু খোযা‘আহ রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে এবং বনু বকর কুরায়েশদের সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হ’ল’ (আহমাদ হা/১৮৯৩০, সনদ হাসান)। অবশ্য বনু খোযা‘আহ আব্দুল মুত্ত্বালিবের সময় থেকেই বনু হাশেমের মিত্র ছিল, যা বংশ পরম্পরায় চলে আসছিল।

[1]. বুখারী হা/২৭৩১-৩২; আহমাদ হা/১৮৯৩০।

[2]. আহমাদ হা/১৮৯৩০; আবুদাঊদ হা/২৭৬৬; মিশকাত হা/৪০৪৬।

[3]. মুসলিম হা/১৭৮৪; বুখারী হা/২৭৩১।