নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ওমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা (خروج إلى العمرة)

৬ষ্ঠ হিজরীর ১লা যুলক্বা‘দাহ সোমবার তিনি ১৪০০ (মতান্তরে ১৫০০) সাথী নিয়ে মদীনা হ’তে রওয়ানা হন (বুখারী হা/৪১৫৩)। লটারিতে এবার তাঁর সফরসঙ্গী হন উম্মুল মুমেনীন হযরত উম্মে সালামাহ (রাঃ)। ওমরাহর সফরে নিয়মানুযায়ী কোষবদ্ধ তরবারি এবং মুসাফিরের হালকা অস্ত্র ব্যতীত অন্য কোন অস্ত্র তাঁদের নিকটে রইল না। অতঃপর মদীনা থেকে অনতিদূরে যুল-হুলায়ফা পৌঁছে তাঁরা ওমরাহর ইহরাম বাঁধেন। অতঃপর ৭০টি উটের গলায় হার পরালেন এবং উটের পিঠের কুঁজের উপরে সামান্য কেটে রক্তপাত করে কুরবানীর জন্য চিহ্নিত করলেন। আবু ক্বাতাদাহ আনছারী (রাঃ)-সহ অনেক ছাহাবী মুহরিম ছিলেন না। মুসলমানদের মিত্র বনু খোযা‘আ গোত্রের বিশর বিন সুফিয়ান আল-কা‘বী(بِشْرُ بْنُ سُفْيَانَ الْكَعْبِيُّ) কে গোয়েন্দা হিসাবে রাসূল (ছাঃ) আগেই মক্কায় পাঠিয়েছিলেন কুরায়েশদের গতিবিধি জানার জন্য। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) মক্কা থেকে ৮০ কি. মি. দূরে ‘ওসফান’ (عُسفان) পৌঁছলে উক্ত গোয়েন্দা এসে রাসূল (ছাঃ)-কে খবর দেন যে, কুরায়েশরা ওমরাহতে বাধা দেওয়ার জন্য যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নিয়েছে। এজন্য তারা তাদের মিত্র বেদুঈন গোত্র সমূহকে সংঘবদ্ধ করেছে। তারা আপনার সফরের কথা শুনেছে এবং যুদ্ধ সাজে সজ্জিত অবস্থায় যু-তুওয়া(ذو طُوَي)তে পৌঁছে গেছে। তারা আল্লাহর নামে কসম করেছে যে, আপনি কখনোই মক্কায় প্রবেশ করতে পারবেন না। অন্যদিকে খালেদ বিন অলীদ তার অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে মক্কা থেকে ৬৪ কি. মি. দূরে কুরাউল গামীমে পৌঁছে গেছে। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,

يَا وَيْحَ قُرَيْشٍ لَقَدْ أَكَلَتْهُمُ الْحَرْبُ مَاذَا عَلَيْهِمْ لَوْ خَلَّوْا بَيْنِى وَبَيْنَ سَائِرِ النَّاسِ فَإِنْ أَصَابُونِى كَانَ الَّذِى أَرَادُوا وَإِنْ أَظْهَرَنِى اللهُ عَلَيْهِمْ دَخَلُوا فِى الإِسْلاَمِ وَهُمْ وَافِرُونَ وَإِنْ لَمْ يَفْعَلُوا قَاتَلُوا وَبِهِمْ قُوَّةٌ فَمَاذَا تَظُنُّ قُرَيْشٌ وَاللهِ لاَ أَزَالُ أُجَاهِدُهُمْ عَلَى الَّذِى بَعَثَنِى اللهُ لَهُ حَتَّى يُظْهِرَهُ اللهُ أَوْ تَنْفَرِدَ هَذِهِ السَّالِفَةُ- رواه احمد-

‘হায় দুর্ভোগ কুরায়েশদের জন্য! যুদ্ধ তাদের খেয়ে ফেলেছে। যদি তারা আমার ও অন্যদের মধ্য থেকে সরে দাঁড়াত, তাহ’লে তাদের কি সমস্যা ছিল? যদি তারা আমার ক্ষতি সাধন করতে পারে, তবে সেটি তাদের আশানুরূপ হবে। আর যদি আল্লাহ আমাকে তাদের উপর বিজয়ী করেন, তাহ’লে তারা ইসলামে প্রবেশ করবে পুরোপুরি লাভবান অবস্থায়। আর যদি ইসলাম কবুল না করে, তাহ’লে তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যতক্ষণ তাদের শক্তি থাকবে। সুতরাং কুরায়েশরা কী ধারণা করে? আল্লাহর কসম! আমি তাদের বিরুদ্ধে সেই দ্বীনের উপর যুদ্ধ চালিয়ে যাব, যার জন্য আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে বিজয়ী করেন অথবা এই ক্ষুদ্র দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়’।[1] রাসূল (ছাঃ)-এর উক্ত বক্তব্যে তাঁর শান্তিবাদী নীতি ফুটে উঠে।

[1]. আহমাদ হা/১৮৯৩০; আলবানী, ফিক্বহুস সীরাহ ৩১৮ পৃঃ, সনদ ছহীহ।