নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

মদীনায় এ মর্মে খবর পৌঁছে যে, বনু মুছত্বালিক্ব গোত্রের সর্দার হারেছ বিন আবু যিরার(الحارث بنُ أبي ضِرَار) রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নিজ গোত্র এবং সমমনা অন্যান্য আরব বেদুঈনদের সাথে নিয়ে মদীনা অভিমুখে যাত্রা করেছেন। বুরাইদা আসলামীকে পাঠিয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) উক্ত খবরের সত্যতা যাচাই করলেন। তিনি সরাসরি গোত্রনেতা হারেছ-এর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে উক্ত বিষয়ে অবহিত করেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ৩রা শা‘বান তারিখে মদীনা হ’তে সসৈন্যে রওয়ানা হন। সৈন্যসংখ্যা সম্পর্কে কোন তথ্য জানা যায়নি। তবে ওহোদ যুদ্ধ থেকে পিছু হটার পর এ যুদ্ধেই প্রথম মুনাফিকদের একটি দল রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে যুদ্ধে গমন করে। এ সময় মদীনার দায়িত্ব যায়েদ বিন হারেছাহ অথবা আবু যার গেফারী অথবা নামীলাহ বিন আব্দুল্লাহ লায়ছীর উপরে অর্পণ করা হয়।

যাত্রা পথে গোত্রনেতা হারেছ প্রেরিত একজন গুপ্তচর আটক হয় ও নিহত হয়। এ খবর জানতে পেরে হারেছ বাহিনীতে আতংক ছড়িয়ে পড়ে এবং তার সঙ্গে থাকা আরব বেদুঈনরা সব পালিয়ে যায়। ফলে বনু মুছত্বালিকের সাথে কুদাইদ(قُدَيْد) এর সন্নিকটে সাগর তীরবর্তী মুরাইসী‘ নামক ঝর্ণার পার্শ্বে মুকাবিলা হয় এবং তাতে সহজ বিজয় অর্জিত হয়।

উক্ত যুদ্ধ সম্পর্কে জীবনীকারগণের বক্তব্য উক্ত রূপ। তবে হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন যে, উক্ত বর্ণনা ভ্রমাত্মক (وَهْمٌ)। কেননা প্রকৃত প্রস্তাবে বনু মুছত্বালিকের সাথে মুসলিম বাহিনীর কোন যুদ্ধই হয়নি। বরং মুসলিম বাহিনী তাদের উপরে আকস্মিক হামলা চালালে তারা সব পালিয়ে যায় ও তাদের নারী-শিশুসহ বহু লোক বন্দী হয়।[1]

বনদীদের মধ্যে গোত্রনেতা হারেছ বিন যিরারের কন্যা জুওয়াইরিয়া (جُوَيْرِيَةُ) ছিলেন। যিনি ছাবেত বিন ক্বায়েস-এর ভাগে পড়েন। ছাবেত তাকে ‘মুকাতিব’ হিসাবে চুক্তিবদ্ধ করেন। মুকাতিব ঐ দাস বা দাসীকে বলা হ’ত, যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ স্বীয় মনিবকে দেয়ার শর্তে চুক্তি সম্পাদন করে এবং উক্ত অর্থ পরিশোধ করার পর সে স্বাধীন হয়ে যায়। নবী করীম (ছাঃ) তার পক্ষ থেকে চুক্তি পরিমাণ অর্থ প্রদান পূর্বক তাকে মুক্ত করেন এবং গোত্র নেতার কন্যা হিসাবে তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেন। এই বিবাহের ফলশ্রুতিতে মুসলমানগণ বনু মুছত্বালিক গোত্রের বন্দী একশত পরিবারের সবাইকে মুক্ত করে দেন এবং তারা সবাই মুসলমান হয়ে যায়। এর ফলে তারা ‘রাসূল (ছাঃ)-এর শ্বশুর গোত্রের লোক’(أَصْهَارُ رَسُولِ اللهِ) বলে পরিচিতি পায়’ (আবুদাঊদ হা/৩৯৩১, সনদ হাসান)

[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/২৩০-৩১; বুখারী হা/২৫৪১; ফাৎহুল বারী ‘ইফকের ঘটনা’ (بَابُ حَدِيثِ الْإِفْكِ)-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ, ৭/৪৩১ পৃঃ।