(১) প্রসিদ্ধ আছে যে, ওহোদ যুদ্ধের দিন হযরত ক্বাতাদাহ বিন নু‘মানের একটি চোখ যখমী হওয়ায় তা বেরিয়ে ঝুলে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ হাতে ওটাকে যথাস্থানে ঢুকিয়ে দেন। তাতে চোখ ঠিক হয়ে যায় এবং তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় ও দৃষ্টি শক্তি আগের চেয়ে তীক্ষ্ণ হয়।[1]
(২) ঘাঁটিতে পৌঁছে রাসূল (ছাঃ)-কে হামলাকারী উবাই বিন খালাফকে মারার জন্য রাসূল (ছাঃ) হারেছ ইবনুছ ছিম্মাহর কাছ থেকে নিয়ে যে বর্শাটি নিক্ষেপ করেছিলেন, তাতে তার গলায় কেবল অাঁচড় কেটে গিয়েছিল। যাতে রক্তপাত পর্যন্ত হয়নি। অথচ তাতেই সে ওহোদ থেকে ফেরার পথে কয়েকদিন পর মক্কায় পৌঁছার আগেই ‘সারিফ’ নামক স্থানে মারা পড়ল।[2]
(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঘাঁটিতে অবস্থানকালে আবু সুফিয়ান ও খালেদ বিন অলীদের নেতৃত্বে যে দলটি তাঁকে হামলা করার জন্য পাহাড়ে উঠে যায়, তারা যাতে নিকটে পৌঁছতে না পারে, সেজন্য রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেন, اللَّهُمَّ إنَّهُ لاَ يَنْبَغِي لَهُمْ أَنْ يَعْلُونَا ‘হে আল্লাহ! তাদের জন্য এটা উচিৎ হবে না যে, তারা আমাদের নিকট উপরে উঠে আসে’। অতঃপর ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ও একদল মুহাজির তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাহাড় থেকে নামিয়ে দিলেন’।[3] ইবনু ইসহাক এটি সনদবিহীনভাবে বর্ণনা করেছেন। তবে হাদীছে এটিاللَّهُمَّ إِنَّهُ لَيْسَ لَهُمْ أَنْ يَعْلُونَا মর্মে এসেছে।[4] কিন্তু সেখানে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব ও মুহাজিরদের একটি দল তাদের নামিয়ে দেন, এ মর্মে কিছুই বলা হয়নি। বরং ঐ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশক্রমে আবু সুফিয়ানের সঙ্গে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাবের কথোপকথন প্রমাণিত আছে।
(৪) একই সময়ে রাসূল (ছাঃ) সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছকে বলেন,اُجْنُبْهُمْ او يَقُولُ اُرْدُدْهُمْ ‘ওদেরকে দুর্বল করে দাও। অথবা বললেন, ওদেরকে ফিরিয়ে দাও’। তখন সা‘দ বললেন,كَيْفَ أَجْنُبُهُمْ وَحْدِي ‘কিভাবে আমি একা ওদের দুর্বল করে দেব’? অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাকে তিনবার একই নির্দেশ দিলে তিনি নিজের তূণ থেকে একটা তীর বের করে নিক্ষেপ করেন। তাতে শত্রুপক্ষের একজন নিহত হয়। তিনি বলেন, অতঃপর আমি ঐ তীর নিয়ে নিলাম এবং দ্বিতীয় আরেক শত্রুকে মারলাম। সেও নিহত হ’ল। আমি আবার ঐ তীর নিয়ে নিলাম ও তৃতীয় আরেক শত্রুকে মারলাম। তাতে সেও মারা পড়ে। এর ফলে শত্রুরা ভয়ে নীচে নামতে লাগল। আমি ঐ তীর এনে আমার তূণের মধ্যে রেখে দিলাম। আমি বললাম,هَذَا سَهْمٌ مُبَارَكٌ ‘এটা বরকতপূর্ণ তীর’। এই তীরটি সা‘দের নিকটে আমৃত্যু ছিল এবং তাঁর পরে তাঁর সন্তানদের কাছে ছিল (যাদুল মা‘আদ ৩/১৮৪)। অতঃপর হযরত ওমর ও মুহাজিরগণের একটি দল ধাওয়া করে তাদেরকে পাহাড়ের উপর থেকে নীচে নামিয়ে দেয় (আর-রাহীক্ব ২৭৬ পৃঃ)।[5]
আরও প্রসিদ্ধ আছে যে, ওহোদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় ধনুক দ্বারা এত অধিক তীর চালিয়েছিলেন যে, ধনুকের প্রান্তদেশ ভেঙ্গে যায়’। পরে ঐ ধনুকটি ক্বাতাদাহ নিয়ে নেন এবং তার কাছেই রেখে দেন’ (ইবনু হিশাম ২/৮২)। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম, ক্রমিক ১১২৮)।
[2]. আর-রাহীক্ব ২৭৫ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/১৭৮; ইবনু হিশাম ২/৮৪। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ (তাহকীক ইবনু হিশাম, ক্রমিক ১১৩৪)। আকরাম যিয়া উমারী বলেন, ঘটনাটি সীরাতের কিতাব সমূহে ব্যাপকভাবে বর্ণিত। তাছাড়া সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব-এর ‘মুরসাল’ বর্ণনা সমূহ শক্তিশালী (সীরাহ ছহীহাহ ২/৩৯২ টীকা-১)। উক্ত মর্মে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ (হাকেম হা/৩২৬৩; হাকেম বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী ছহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তা সমর্থন করেছেন)।
উল্লেখ্য যে, যে সকল বিদ্বান এই ঘটনা মেনে নিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হ’লেন শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)। তিনি বলেন,وَلَمْ يَقْتُلْ بِيَدِهِ إِلاَّ أُبَيَّ بْنَ خَلَفٍ، قَتَلَهُ يَوْمَ أُحُدٍ، وَلَمْ يَقْتُلْ بِيَدِهِ أَحَدًا لاَ قَبْلَهَا وَلاَ بَعْدَهَا ‘রাসূল (ছাঃ) নিজ হাতে কাউকে হত্যা করেননি ওহোদের দিন উবাই বিন খালাফকে ব্যতীত। তার পূর্বে বা পরে তিনি আর কখনোই কাউকে হত্যা করেননি’ (মিনহাজুস সুন্নাহ (রিয়াদ : জামে‘আতুল ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ আল-ইসলামিইয়াহ, ১ম সংস্করণ১৪০৬/১৯৮৬ খৃ.) ৮/৭৮)।
[3]. ইবনু হিশাম ২/৮৬; আর-রাহীক্ব ২৭৬ পৃঃ।
[4]. আহমাদ হা/২৬০৯; হাকেম হা/৩১৬৩, সনদ হাসান।
[5]. বর্ণনাটি ‘যঈফ’। কেননা ইবনু আবিদ্দুনিয়া এটি সনদসহ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সেখানে অজ্ঞাত (مجهول) রাবী আছেন (ইবনু আবিদ্দুনিয়া, ‘মাকারিমুল আখলাক্ব’ হা/১৮১)।
প্রসিদ্ধ আছে যে, ওহোদ যুদ্ধ শেষে ঘাঁটিতে যোহরের ছালাতের সময় হ’লে যখমের কারণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বসে ছালাত আদায় করেন। ছাহাবায়ে কেরামও তাঁর পিছনে বসে ছালাত আদায় করেন (ইবনু হিশাম ২/৮৭; আর-রাহীক্ব ২৭৮ পৃঃ)। বর্ণনাটির সনদ ‘যঈফ’ (তাহকীক ইবনু হিশাম, ক্রমিক ১১৪৪)।