মুহাজির ও আনছার নেতৃবৃন্দের উক্ত পরামর্শ বৈঠকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রথমে নিজের দেখা একটি স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেন। জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন,
رَأَيْتُ كَأَنِّى فِى دِرْعٍ حَصِينَةٍ وَرَأَيْتُ بَقَراً مُنَحَّرَةً فَأَوَّلْتُ أَنَّ الدِّرْعَ الْحَصِينَةَ الْمَدِينَةُ وَأَنَّ الْبَقَرَ هُوَ وَاللهِ خَيْرٌ. قَالَ فَقَالَ لأَصْحَابِهِ لَوْ أَنَّا أَقَمْنَا بِالْمَدِينَةِ فَإِنْ دَخَلُوا عَلَيْنَا فِيهَا قَاتَلْنَاهُمْ. فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَاللهِ مَا دُخِلَ عَلَيْنَا فِيهَا فِى الْجَاهِلِيَّةِ فَكَيْفَ يُدْخَلُ عَلَيْنَا فِيهَا فِى الإِسْلاَمِ قَالَ عَفَّانُ فِى حَدِيثِهِ فَقَالَ شَأْنَكُمْ إِذاً. قَالَ فَلَبِسَ لأْمَتَهُ قَالَ فَقَالَتِ الأَنْصَارُ َرَدَدْنَا عَلَى رَسُولِ اللهِ –صلى الله عليه وسلم- رَأْيَهُ فَجَاءُوا فَقَالُوا يَا نَبِىَّ اللهِ شَأْنَكَ إِذاً. فَقَالَ إِنَّهُ لَيْسَ لِنَبِىٍّ إِذَا لَبِسَ لأْمَتَهُ أَنْ يَضَعَهَا حَتَّى يُقَاتِلَ-
‘আমি নিজেকে দেখলাম একটি সুরক্ষিত বর্মের মধ্যে এবং একটি গাভীকে দেখলাম যবহকৃত অবস্থায়। আমি এর ব্যাখ্যা করছি, বর্ম হ’ল ‘সুরক্ষিত মদীনা’। আর গাভী আল্লাহর কসম! এটি মঙ্গল (অর্থ ‘কিছু ছাহাবী নিহত হবে’ -ফাৎহুল বারী)। অতঃপর তিনি বললেন, যদি আমরা মদীনায় থেকেই যুদ্ধ করতাম! তাহ’লে যদি তারা আমাদের উপর হামলা করে, তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে এখান থেকেই যুদ্ধ করতে পারতাম’। তখন ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! জাহেলী যুগে এখানে কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। তাহ’লে ইসলামী যুগে কিভাবে তারা আমাদের উপর প্রবেশ করবে? রাবী ‘আফফান বলেন, তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এখন তোমাদের ইচ্ছা। তিনি বলেন, অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বর্ম ও অস্ত্র সজ্জিত হ’লেন। তিনি বলেন, তখন আনছারগণ বললেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছি। অতঃপর তারা এসে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি যেটা বললেন সেটাই হৌক। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, কোন নবীর জন্য এটা সঙ্গত নয় যে, যুদ্ধের পোষাক পরিধানের পর তিনি তা খুলে ফেলেন, যুদ্ধ না করা পর্যন্ত’।[1] ইবনু আববাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূল (ছাঃ) তাঁর ‘যুলফিক্বার’ তরবারির মাথা স্বপ্নে ভাঙ্গা দেখতে পান। তিনি বলেন, আমি এর ব্যাখ্যা করছি এই যে, তোমাদের মধ্যে (অর্থাৎ আমার পরিবারের মধ্যে) কেউ নিহত হবে। আমি দেখলাম যে, আমি একটি দুম্বার পিছনে আছি। আমি দুম্বার ব্যাখ্যা করছি ‘মুসলিম সেনাবাহিনী’...।[2] আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, رَأَيْتُ فِى رُؤْيَاىَ أَنِّى هَزَزْتُ سَيْفًا فَانْقَطَعَ صَدْرُهُ، فَإِذَا هُوَ مَا أُصِيبَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ أُحُدٍ ، ثُمَّ هَزَزْتُهُ أُخْرَى فَعَادَ أَحْسَنَ مَا كَانَ، فَإِذَا هُوَ مَا جَاءَ بِهِ اللهُ مِنَ الْفَتْحِ وَاجْتِمَاعِ الْمُؤْمِنِينَ ، وَرَأَيْتُ فِيهَا بَقَرًا وَاللهُ خَيْرٌ، فَإِذَا هُمُ الْمُؤْمِنُونَ يَوْمَ أُحُدٍ ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একটি তরবারি ঝাঁকুনি দিচ্ছি। তাতে তার মাথা ভেঙ্গে গেল। আর সেটি হ’ল, মুসলমানরা ওহোদের দিন যে বিপদগ্রস্ত হয়েছিল সেটা। অতঃপর আমি পুনরায় ঝাঁকুনি দিলাম। তখন তরবারিটি সুন্দর অবস্থায় ফিরে এল। সেটি হ’ল আল্লাহ যে বিজয় দান করেছেন এবং মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন সেটা। আমি সেখানে দেখলাম একটি গাভীকে। আল্লাহর কসম! সেটি মঙ্গল। আর সেটি হ’ল ওহোদের দিনের (বিপদগ্রস্ত) মুসলমানেরা’।[3]
উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবার থেকে তাঁর চাচা হামযাহ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব উক্ত যুদ্ধে শহীদ হন।
উপরোক্ত ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, বৈষয়িক ব্যাপারে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ ও তা মেনে নেওয়া আমীরের জন্য সঙ্গত। কিন্তু তাঁকে বাধ্য করা যাবে না। বরং তাঁর সিদ্ধান্ত সকলকে নির্দ্বিধায় মেনে নিতে হবে। তবে বিধানগত বিষয়ে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশের বাইরে অধিকাংশের রায় মেনে নেওয়া বৈধ নয়’ (আন‘আম ৬/১১৫-১১৬)।
[2]. আহমাদ হা/২৪৪৫, সনদ হাসান; হাকেম হা/২৫৮৮; ছহীহাহ হা/১১০০।
এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ও তার সাথীরা এবং একদল ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-কে মদীনায় থেকে যুদ্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। অন্যেরা বিশেষ করে হামযা (রাঃ) সহ যারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি, তারা বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করতে চাপ সৃষ্টি করেন’ (সীরাহ হালাবিইয়াহ ২/২৯৮; ইবনু হিশাম ২/৬৩; আর-রাহীক্ব ২৫১-৫২ পৃঃ)। কথাগুলি বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়। ইবনু ইসহাক এগুলি বিনা সনদে বর্ণনা করেছেন। সনদ ‘মুরসাল’ (তাহকীক ইবনু হিশাম, ক্রমিক ১০৮৪)।
[3]. বুখারী হা/৪০৮১; মুসলিম হা/২২৭২ (২০)।