নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
বদর যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী (بعض الوقائع فى غزوة بدر)

(১) বদর যুদ্ধে যাত্রা পথে দু’তিন জন করে পালাক্রমে সওয়ার হয়ে চলতে হ’ত। রাসূল (ছাঃ), আলী ও আবু লুবাবা ইবনুল মুনযির এবং পরবর্তীতে তার বদলে মারছাদ বিন আবু মারছাদ গানাভীর জন্য একটি উট বরাদ্দ ছিল। যাতে পায়ে হাঁটার পালা আসলে রাসূল (ছাঃ) নিজেও হাঁটতেন। এসময় সাথীগণ নিজেরা হেঁটে তাঁকে উটে সওয়ার থাকার অনুরোধ করেন। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا أَنْتُمَا بِأَقْوَى مِنِّى وَلاَ أَنَا بِأَغْنَى عَنِ الأَجْرِ مِنْكُمَا ‘তোমরা দু’জন আমার চাইতে শক্তিশালী নও এবং আমিও নেকী পাওয়ার ব্যাপারে তোমাদের চাইতে কম মুখাপেক্ষী নই’।[1]

(২) বেলাল (রাঃ)-কে নির্যাতনকারী মনিব এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সম্মুখে ও পিছনে নিন্দাকারী নরাধম উমাইয়া বিন খালাফ-এর সাথে আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ (রাঃ)-এর জাহেলী যুগে চুক্তি ছিল যে, তিনি মক্কায় তার লোকদের রক্ষা করবেন এবং আব্দুর রহমান মদীনায় উমাইয়ার লোকদের রক্ষা করবেন। সেকারণ যুদ্ধ শেষে তিনি উমাইয়া ও তার ছেলেকে পাহাড়ের একটি গুহায় লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু যেভাবেই হোক সেটি বেলালের নযরে পড়ে যায়। ফলে তিনি একদল আনছারের সামনে গিয়ে চীৎকার দিয়ে বলে উঠেন, ওহে আল্লাহর সাহায্যকারীগণ! শীর্ষ কাফের উমাইয়া এখানে। হয় আমি থাকব, নয় সে থাকবে’। তার ডাকের সাথে সাথে চারদিক থেকে সবাই এসে তাকে ঘিরে ফেলল। আব্দুর রহমান শত চেষ্টা করেও তাকে রক্ষা করতে পারলেন না। ফলে পিতা-পুত্র দু’জনেই সেখানে নিহত হ’ল। এতে আব্দুর রহমান-এর পা যখমী হয়।[2]

(৩) তিনদিন অবস্থানের পর বিদায়কালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কার মৃত নেতাদের উদ্দেশ্যে কূয়ার পাশে দাঁড়িয়ে একে একে পিতা সহ তাদের নাম ধরে ডেকে বলেন,

يَا فُلاَنُ بْنَ فُلاَنٍ، وَيَا فُلاَنُ بْنَ فُلاَنٍ، أَيَسُرُّكُمْ أَنَّكُمْ أَطَعْتُمُ اللهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا، فَهَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا؟ قَالَ فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللهِ، مَا تُكَلِّمُ مِنْ أَجْسَادٍ لاَ أَرْوَاحَ لَهَا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ –صلى الله عليه وسلم – وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ. قَالَ قَتَادَةُ أَحْيَاهُمُ اللهُ حَتَّى أَسْمَعَهُمْ قَوْلَهُ تَوْبِيخًا وَتَصْغِيرًا وَنَقِيمَةً وَحَسْرَةً وَنَدَمًا-

‘হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কি এখন বুঝতে পারছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করলে তোমরা আজ খুশী হ’তে? নিশ্চয়ই আমরা আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে যে (বিজয়ের) ওয়াদা দিয়েছিলেন, আমরা তা সত্যরূপে পেয়েছি। তোমরা কি তা সত্যরূপে পেয়েছ যা তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে (আযাবের) ওয়াদা করেছিলেন? এ সময় ওমর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এমন দেহগুলির সাথে কথা বলছেন, যাদের মধ্যে রূহ নাই। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, যার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা তাদের চাইতে অধিক শ্রবণকারী নও, যা আমি বলছি’।

এর ব্যাখ্যায় ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তাদেরকে (সাময়িকভাবে) জীবিত করেন, যাতে তারা নবীর ধিক্কারবাণীগুলি শুনতে পায় ও লজ্জিত হয়’ (বুখারী হা/৩৯৭৬)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ওমর (রাঃ) বলেন, يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ يَسْمَعُوا وَأَنَّى يُجِيبُوا وَقَدْ جَيَّفُوا قَالَ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ وَلَكِنَّهُمْ لاَ يَقْدِرُونَ أَنْ يُجِيبُوا ‘ওরা কিভাবে শুনবে এবং ওরা কিভাবে জওয়াব দিবে। অথচ ওরা মরে পচে গেছে’। জওয়াবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, যার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা ওদের চাইতে অধিক শ্রবণকারী নও, যা আমি বলছি’। কিন্তু ওরা জওয়াব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না’।[3] অন্য বর্ণনায় এসেছে, يَا رَسُولَ اللهِ أَتُنَادِيهِمْ بَعْدَ ثَلاَثٍ وَهَلْ يَسْمَعُونَ؟ يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ (إِنَّكَ لاَ تُسْمِعُ الْمَوْتَى). فَقَالَ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ مِنْهُمْ وَلَكِنَّهُمْ لاَ يَسْتَطِيعُونَ أَنْ يُجِيبُوا ‘হে আল্লাহর রাসূল! তিন দিন পরে আপনি ওদের ডাকছেন। ওরা কি শুনতে পাবে? অথচ আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি শুনাতে পারো না কোন মৃতকে’ (নামল ২৭/৮০; রূম ৩০/৫২)। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, যার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা তাদের চাইতে অধিক শ্রবণকারী নও, যা আমি বলছি’। কিন্তু ওরা জওয়াব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না’ (আহমাদ হা/১৪০৯৬, সনদ ছহীহ)

উক্ত বিষয়ে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ক্বাতাদাহ (রাঃ) ঐসব ব্যক্তিগণের প্রতিবাদে উপরোক্ত কথা বলেছেন, যারা বদরে মৃত কাফিরদের রাসূল (ছাঃ)-এর আহবান শুনতে পাওয়াকে অস্বীকার করে’ (ফাৎহুল বারী হা/৩৯৭৬-এর ব্যাখ্যা)। ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, ক্বাতাদাহ (রাঃ)-এর ব্যাখ্যায় বুঝা যায় যে, ঐ সময় তাদেরকে জীবিত করার বিষয়টি রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য ‘খাছ’ ছিল। কিন্তু এটি জমহূর বিদ্বানগণের মতামতের বিরোধী (মিরক্বাত)

উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় আয়েশা (রাঃ) বলেন,وَالنَّاسُ يَقُولُونَ لَقَدْ سَمِعُوا مَا قُلْتَ لَهُمْ وَإِنَّمَا قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَقَدْ عَلِمُوا ‘লোকেরা বলে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তারা অবশ্যই শুনেছে যা তুমি তাদের বলছ। অথচ রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, নিশ্চয়ই তারা জানতে পারবে’ (আহমাদ হা/২৬৪০৪ সনদ হাসান)। তিনি বলেন, مَا قَالَ إِنَّهُمْ لَيَسْمَعُونَ مَا أَقُولُ إِنَّمَا قَالَ إِنَّهُمُ الآنَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّ مَا كُنْتُ أَقُولُ لَهُمْ حَقٌّ. ثُمَّ قَرَأَتْ (إِنَّكَ لاَ تُسْمِعُ الْمَوْتَى)، (وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِى الْقُبُورِ). تَقُولُ: حِينَ تَبَوَّءُوا مَقَاعِدَهُمْ مِنَ النَّارِ ‘রাসূল (ছাঃ) বলেননি, যা আমি বলছি তা অবশ্যই তারা শুনছে। বরং তিনি বলেছিলেন, অবশ্যই তারা এখুনি জানতে পারবে, যা আমি তাদেরকে বলতাম (কবরের আযাব বিষয়ে), তা সত্য। অতঃপর তিনি আয়াত দু’টি পাঠ করেন (নমল ২৭/৮০) এবং (ফাত্বির ৩৫/২২)। তিনি বলেন, (তারা জানবে) যখন তাদেরকে জাহান্নামে তাদের ঠিকানায় পৌছানো হবে’।[4] মূলতঃ জীবিতদের শোনানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য। যাতে যুগ যুগ ধরে কাফির-মুনাফিকরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।

(৪) আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, হারেছাহ বিন সুরাক্বা আনছারী তরুণ বয়সে বদর যুদ্ধে নিহত হন। তার মা এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে হারেছার অবস্থান সম্পর্কে বলবেন কি? যদি সে জান্নাতে থাকে, তাহ’লে আমি ছবর করব এবং ছবরের বিনিময়ে ছওয়াব কামনা করব। আর যদি অন্য কিছু হয়, তাহ’লে বলুন আমি কি করব? তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, কি বলছ তুমি? জান্নাত কি কেবল একটা? বহু জান্নাত রয়েছে। আর তোমার সন্তান রয়েছে সর্বোচ্চ জান্নাতুল ফেরদৌসে’ (বুখারী হা/২৮০৯, ৩৯৮২)

[1]. আহমাদ হা/৩৯০১; হাকেম হা/৪২৯৯; মিশকাত হা/৩৯১৫, সনদ হাসান।

[2]. বুখারী হা/২৩০১ ‘দায়িত্ব অর্পণ’ (الوكالة) অধ্যায়-৪০ অনুচ্ছেদ-২।

এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, (১) যুদ্ধ শুরুর পূর্বে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, অনেক লোককে আবু জাহল যবরদস্তি করে যুদ্ধে এনেছে। অথচ তারা মোটেই যুদ্ধে ইচ্ছুক ছিল না। অতএব তোমরা বনু হাশেমের কাউকে এবং বিশেষ করে আববাসকে কোনভাবেই আঘাত করবে না। অনুরূপভাবে আবুল বাখতারী বিন হেশামকে যেন হত্যা করো না। পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জানতে পারেন যে, কুরায়েশ নেতা উৎবাহ বিন রাবী‘আহর পুত্র আবু হুযায়ফা, যিনি আগেই মুসলমান হয়ে মদীনায় হিজরত করেন এবং বদরের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তিনি বলেছেন যে, আমরা আমাদের পিতা ও ভাইদের হত্যা করব, আর আববাসকে ছেড়ে দেব? তা হ’তে পারে না। আল্লাহর কসম! আমার সামনে পড়ে গেলে আমি অবশ্যই আববাসকে হত্যা করব’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন ওমর (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, হে আবু হাফ্ছ! রাসূলের চাচার মুখের উপর তরবারির আঘাত করা হবে? জবাবে ওমর (রাঃ) বলেন, আমাকে ছাড়ুন, আমি এখুনি ওর গর্দান উড়িয়ে দিয়ে আসি’। পরে আবু হুযায়ফা এতে অনুতপ্ত হন। তিনি বলতেন যে, ঐদিন মুখ ফসকে যে কথাটি বেরিয়ে গিয়েছিল, সেই থেকে আমি কোনদিন মনে স্বস্তি পাইনি। সর্বদা ভাবতাম, শাহাদাত লাভই এর একমাত্র কাফফারা হ’তে পারে। পরে তিনি আবুবকর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ভন্ডনবী মুসায়লামার বিরুদ্ধে ইয়ামামাহর যুদ্ধে শহীদ হন (আর-রাহীক্ব ২২২ পৃঃ; হাকেম হা/৪৯৮৮; ইবনু হিশাম ১/৬২৯)। বক্তব্যটির সনদ যঈফ। যাহাবী বলেন, ‘সনদ দুর্বল হওয়া ছাড়াও প্রথম দিকের ছাহাবীদের পক্ষে এমনকি পরবর্তীদের পক্ষেও এরূপ আচরণ অতীব দূরতম বিষয়’ (মা শা-‘আ ১১২ পৃঃ)। (২) এই যুদ্ধে আবুবকর (রাঃ) তার পুত্র আব্দুর রহমানকে ‘হে খবীছ! আমার মাল কোথায়? বলে ধমক দেন’ (ইবনু হিশাম ১/৬৩৮; আর-রাহীক্ব ২২৩ পৃঃ)। বর্ণনাটির সনদ মু‘যাল বা যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৭৭২)। (৩) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তার মামু ‘আছ বিন হিশাম বিন মুগীরাহকে হত্যা করেন’ (আর-রাহীক্ব ২২৩ পৃঃ, সূত্র বিহীন)। (৪) মুছ‘আব বিন উমায়ের (রাঃ) তার ভাই আবু আযীয বিন উমায়েরকে উদ্দেশ্য করে তাকে বন্দীকারী আনছার ছাহাবীকে বলেন, ওকে ভালোভাবে বেঁধে নিয়ে যাও। ওর মা বড় একজন ধনী মহিলা। অনেক রক্তমূল্য পাবে। অতঃপর ভাইকে উদ্দেশ্য করে উক্ত ছাহাবীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, إنَّهُ أَخِي دُونَكَ ‘উনিই আমার ভাই, তুমি নও’ (আর-রাহীক্ব ২২৪ পৃঃ; ইবনু হিশাম ১/৬৪৬)। বর্ণনাগুলি বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। বরং ‘মুরসাল’ বা যঈফ (তালীক্ব, আর-রাহীক্ব ১৩৩ পৃঃ; মা শা-‘আ ১১৮ পৃঃ)।

[3]. বুখারী হা/৩৯৭৬; মুসলিম হা/২৮৭৪; মিশকাত হা/৩৯৬৭, ‘জিহাদ’ অধ্যায়-১৯, ‘বন্দীদের হুকুম’ অনুচ্ছেদ-৫।

[4]. বুখারী হা/৩৯৭৯; মুসলিম হা/৯৩২।

(১) এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীছটি প্রসিদ্ধ আছে, যা ছহীহ নয়।-

يَا أَهْلَ الْقَلِيبِ بِئْسَ عَشِيرَةُ النَّبِيِّ كُنْتُمْ لِنَبِيِّكُمْ كَذَّبْتُمُونِي وَصَدَّقَنِي النَّاسُ وَأَخْرَجْتُمُونِي وَآوَانِي النَّاسُ وَقَاتَلْتُمُونِي وَنَصَرَنِي النَّاسُ ثُمَّ قَالَ: هَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَكُمْ رَبُّكُمْ حَقًّا؟ ‘হে কূয়ার অধিবাসীরা! কতইনা মন্দ আত্মীয় ছিলে তোমরা তোমাদের নবীর জন্য। তোমরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছিলে, আর লোকেরা আমাকে সত্যবাদী বলেছিল। তোমরা আমাকে বের করে দিয়েছিলে, আর লোকেরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল। তোমরা আমার সাথে লড়াই করেছ, অথচ লোকেরা আমাকে সাহায্য করেছে’। অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন, তা কি তোমরা সত্যরূপে পেয়েছ?

আর-রাহীক্ব ২২৪-২৫; ইবনু হিশাম ১/৬৩৯; আলবানী বলেন, এর সনদ মু‘যাল (যঈফ); মুসনাদে আহমাদ-এর বর্ণনায় এসেছে, جَزَاكُمُ اللهُ شَرًّا مِنْ قَوْمِ نَبِىٍّ ‘আল্লাহ তোমাদের মত নবীর কওমকে মন্দ প্রতিফল দিন!’ (আহমাদ হা/২৫৪১১ সনদ মুনক্বাতি‘ বা ছিন্ন সূত্র; মা শা-‘আ ১১৫ পৃঃ)।

(২) আরও প্রসিদ্ধ আছে যে, মুশরিক নেতাদের মৃতদেহগুলি কূয়ায় নিক্ষেপকালে উৎবা বিন রাবী‘আহর লাশ টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে তার পুত্র আবু হুযায়ফা-কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘হে আবু হুযায়ফা! তোমার পিতার এ অবস্থা দেখে নিশ্চয়ই তোমার অন্তরে খারাব লাগছে’? জবাবে আবু হুযায়ফা বললেন, ‘আল্লাহর কসম তা নয় হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা ও তার নিহত হওয়ার ব্যাপারে আমার মনে কোন ভাবান্তর নেই। তবে আমি জানতাম যে, আমার পিতার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, দূরদর্শিতা ও কল্যাণময়তা রয়েছে। আমি আশা করতাম এগুলি তাঁকে ইসলামের দিকে পথ দেখাবে। কিন্তু এখন তার কুফরী হালতে মৃত্যু দেখে দুঃখিত হয়েছি’। এ জবাব শুনে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তার জন্য কল্যাণের দো‘আ করলেন এবং তার সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করলেন (আর-রাহীক্ব ২২৪ পৃঃ; হাদীছ যঈফ, ঐ, তালীক্ব ১৩৩ পৃঃ)।

(৩) এদিন উক্কাশা বিন মিহছান তার ভাঙ্গা তরবারি নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আসেন। তখন তিনি তাকে একটি কাঠের টুকরা দিয়ে বলেন, তুমি এটা দিয়ে যুদ্ধ কর। অতঃপর যখন তিনি সেটি হাতে নিয়ে নড়াচড়া করেন তখন সেটি লম্বা, শক্ত ও ধবধবে সাদা তরবারিতে পরিণত হয়ে যায়। অতঃপর সেটি নিয়ে তিনি যুদ্ধ করেন। যতক্ষণ না আল্লাহ মুসলমানদের বিজয় দান করেন। সেদিন থেকে উক্ত তরবারিটির নাম হয় আল-‘আওন (العَوْن) বা সাহায্যকারী। এরপর থেকে তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সকল যুদ্ধে উক্ত তরবারি নিয়ে যোগদান করেন। এমনকি আবুবকর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে রিদ্দার যুদ্ধে উক্ত তরবারি নিয়েই তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং শহীদ হন। তুলায়হা বিন খুওয়াইলিদ আল-আসাদী তাঁকে হত্যা করেন’ (আর-রাহীক্ব ২২৪ পৃঃ; ইবনু হিশাম ১/৬৩৭)। ইবনু ইসহাক এটি বিনা সনদে উল্লেখ করেছেন। সেকারণ এটি যঈফ (তালীক্ব, আর-রাহীক্ব ১৩২ পৃঃ; মা শা-‘আ ১১৬ পৃঃ)।

ইবনু হাজার বলেন, উক্কাশা ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী। তাঁকে হত্যাকারী তুলায়হা ‘মুরতাদ’ ছিল। পরে সে ইসলামে ফিরে আসে। রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম (আল-ইছাবাহ ক্রমিক ৫৬৪৮)।

(৪) এছাড়াও একটি মু‘জেযা প্রসিদ্ধ আছে যে, রেফা‘আহ বিন রাফে‘ বিন মালেক বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন আমি তীরের আঘাতপ্রাপ্ত হই। ফলে আমার চোখ বেরিয়ে যায়। তখন রাসূল (ছাঃ) সেখানে থুথু লাগিয়ে দেন এবং আমার জন্য দো‘আ করেন। ফলে আমি পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাই’ (হাকেম হা/৫০২৪; বায়হাক্বী দালায়েল ৩/১০০)। বর্ণনাটি যঈফ (মা শা-‘আ ১২২ পৃঃ)।