নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

মক্কা থেকে আগত মুহাজিরগণ মদীনায় এসে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতেন। অতঃপর মসজিদে নববী নির্মাণ শেষে তার পিছনে একটি ছাপড়া দেওয়া হয়। যেখানে নিরাশ্রয় মুহাজিরগণ এসে বসবাস করতেন। ‘ছুফফাহ’ অর্থ ছাপড়া। যা দিয়ে ছায়া করা হয়। এভাবে মুহাজিরগণই ছিলেন আহলে ছুফফার প্রথম দল। যাঁদেরকেصُفَّةُ الْمُهَاجِرِينَ বলা হ’ত (আবুদাঊদ হা/৪০০৩)। এছাড়া অন্যান্য স্থান হ’তেও অসহায় মুসলমানরা এসে এখানে সাময়িকভাবে আশ্রয় নিতেন (আহমাদ হা/১৬০৩১)। পরবর্তীতে কোন ব্যবস্থা হয়ে গেলে তারা সেখানে চলে যেতেন। এখানে সাময়িক আশ্রয় গ্রহণকারীগণ ইতিহাসে ‘আহলে ছুফফাহ’ বা ’আছহাবে ছুফফাহ’ নামে খ্যাতি লাভ করেন। বিখ্যাত হাদীছবেত্তা ছাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এখানকার অন্যতম সদস্য ও দায়িত্বশীল ছিলেন। যিনি ওমর (রাঃ)-এর যুগে বাহরায়েন এবং মু‘আবিয়া (রাঃ) ও মারওয়ানের সময় একাধিকবার মদীনার গবর্ণর নিযুক্ত হন। তিনি ৫৭ হিজরীতে ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[1]

অনেক সময় মদীনার ছাহাবীগণও ‘যুহ্দ’ ও দুনিয়াত্যাগী জীবন যাপনের জন্য তাদের মধ্যে এসে বসবাস করতেন। যেমন কা‘ব বিন মালেক আনছারী, হানযালা বিন আবু ‘আমের ‘গাসীলুল মালায়েকাহ’, হারেছাহ বিন নু‘মান আনছারী প্রমুখ। চাতালটি যথেষ্ট বড় ছিল। কেননা এখানে যয়নব বিনতে জাহশের সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর বিবাহের ওয়ালীমা খানায় প্রায় তিনশ’র মত মানুষ(كَانُوا زُهَاءَ ثَلاثِمِائَةٍ) জমা হয়েছিলেন।[2] তাদের সংখ্যা কম-বেশী হ’ত। তবে সাধারণতঃ সর্বদা ৭০ জনের মত থাকতেন। কখনো অনেক বেড়ে যেত। খাযরাজ নেতা সা‘দ বিন ওবাদাহ (রাঃ) একবার তাদের মধ্যে থেকে একাই আশি জনকে মেহমানদারী করেছিলেন।

[1]. তাহযীবুত তাহযীব, ক্রমিক সংখ্যা ১২১৬, ১২/২৮৮ পৃঃ; মুসলিম হা/৮৭৭; মিশকাত হা/৮৩৯। যে সকল বিদ্বান আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে ‘গায়ের ফক্বীহ’ বলেন, তারা বিষয়টি লক্ষ্য করুন। কেননা ঐরূপ কোন ব্যক্তি গবর্ণরের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসীন হ’তে পারেন না। যেমন হানাফী উছূলে ফিক্বহ বা ব্যবহারিক আইন সূত্রে বলা হয়েছে, الرَّاوِى إن عُرِفَ بالفقه والةَّقَدُّم فى الإجةهاد كالخلفاء الراشدين والعَبَادِلَة كان حديثُهُ حُجَّةً يُةْرَكُ به القياسُ... وإن عُرِفَ بالعَدَالَةِ والضَّبْطِ دُون الفقه كأنس وأبى هريرة، إِنْ وَافَقَ حديثُهُ القياسَ عُمِلَ به وإن خالفه لم يُةْرَكْ الا بالضَّرُورة- ‘রাবী যদি ফিক্বহ ও ইজতিহাদে অগ্রগামী হওয়ার ব্যাপারে প্রসিদ্ধ হন, যেমন চার খলীফা ও চার আব্দুল্লাহ, তাহ’লে তাঁর হাদীছ দলীল হিসাবে গণ্য হবে এবং সে অবস্থায় ক্বিয়াস পরিত্যক্ত হবে।... আর যদি ফিক্বহ ব্যতীত কেবল ন্যায়নিষ্ঠা ও তীক্ষ্ণ স্মৃতির ব্যাপারে প্রসিদ্ধ হন, যেমন আনাস ও আবু হুরায়রা; যদি তাঁর হাদীছ ক্বিয়াসের অনুকূলে হয়, তাহ’লে তার উপরে আমল করা যাবে। আর যদি তার বিপরীত হয়, তাহ’লে তা পরিত্যাগ করা যাবে না বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত’ (আহমাদ মোল্লা জিয়ূন (মৃ. ১১৩০ হি.), নূরুল আনওয়ার (দেউবন্দ মাকতাবা থানবী, ইউপি, ভারত : এপ্রিল ১৯৮৩) ‘রাবীদের প্রকারভেদ’ অধ্যায়, ‘রাবীর অবস্থা সমূহ’ অনুচ্ছেদ ১৮২-৮৩ পৃঃ)। এ কথার প্রতিবাদ করেন হেদায়ার ভাষ্যকার প্রখ্যাত হানাফী ফক্বীহ কামাল ইবনুল হুমাম (৭৯০-৮৬১ হি.)। তিনি বলেন, كَيْفَ؟ وهو لا يَعْمَلُ بِفَتْوَى غيره وكان يُفْتِى فى زمان الصحابة رضوان الله تعالى عليهم وكان يُعَارِضُ أَجِلَّةَ الصحابة كإبن عباس... ‘এটা কিভাবে হ’তে পারে? অথচ তিনি অন্যের ফাৎওয়ার উপর আমল করতেন না। তিনি ছাহাবায়ে কেরামের যামানায় ফাৎওয়া দিতেন এবং তিনি ইবনু আববাসের ন্যায় বড় বড় ছাহাবীর ফাৎওয়ার বিরোধিতা করতেন... (ঐ, পৃঃ ১৮৩ টীকা -৪)।

উল্লেখ্য যে, আবু হুরায়রা (রাঃ) ছিলেন সর্বাধিক হাদীছবেত্তা ছাহাবী। অতএব ফাৎওয়া দেওয়ার অধিকার তাঁরই সবচেয়ে বেশী হওয়া উচিত। তিনি ছিলেন হাদীছ মুখস্থ করা বিষয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর বিশেষ দো‘আ প্রাপ্ত ছাহাবী (বুখারী হা/১১৯)। যাঁর মুখস্থকৃত হাদীছের সংখ্যা ছিল ৫৩৭৪। তিনি সহ ৭জন শ্রেষ্ঠ হাদীছ বর্ণনাকারী ছাহাবী হ’লেন যথাক্রমে আব্দুল্লাহ বিন ওমর ২৬৩০, আনাস বিন মালিক ২২৮৬, আয়েশা (রাঃ) ২২১০, আব্দুল্লাহ বিন আববাস ১৬৬০, জাবের বিন আব্দুল্লাহ ১৫৪০ এবং আবু সাঈদ খুদরী ১১৭০। বাকী ছাহাবীগণ এরপরের।

[2]. ইবনু আবী হাতেম হা/১৭৭৫৯, তাফসীর সূরা আহযাব ৫৩-৫৪ আয়াত; ইবনু কাছীর, তাফসীর ঐ।