(১) কা‘বাগৃহ ও মাসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণকারী কুরায়েশ নেতার গৃহে জন্মগ্রহণকারী বিশ্বনবীকে তার বংশের লোকেরাই নবী হিসাবে মেনে নেননি। কারণ তারা এর মধ্যে তাদের নেতৃত্বের অবসান ও দুনিয়াবী স্বার্থের ক্ষতি বুঝতে পেরেছিলেন। সেকারণ আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয়েও তারা মুমিন হ’তে পারেননি’ (বাক্বারাহ ২/৮)।
(২) নবী বংশের লোক হওয়া, আল্লাহর ঘর তৈরী করা ও তার সেবক হওয়া পরকালীন মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। বরং সার্বিক জীবনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা এবং আল্লাহর বিধান মেনে চলা ও তা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোই হ’ল আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার পূর্বশর্ত’ (তওবাহ ৯/১৯-২০)।
(৩) আক্বীদায় পরিবর্তন না আনা পর্যন্ত সমাজের কোন মৌলিক পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। যেমন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নবী হওয়ার পূর্বে তরুণ বয়সে ‘হিলফুল ফুযূল’ নামক ‘কল্যাণ সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন ও তাঁর সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রমের জন্য সকলের প্রশংসাভাজন হন। তিনি ‘আল-আমীন’ উপাধিতে ভূষিত হন। কিন্তু তাতে সার্বিকভাবে সমাজের ও নেতৃত্বের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি।
(৪) সমাজের সত্যিকারের কল্যাণকামী ব্যক্তি নিজের চিন্তায় ও প্রচেষ্টায় যখন কোন কুল-কিনারা করতে পারেন না, তখন তিনি আল্লাহর নিকটে হেদায়াত প্রার্থনা করেন ও নিজেকে সম্পূর্ণরূপে তাঁর উপরে সমর্পণ করে দেন। অতঃপর আল্লাহর দেখানো পথেই তিনি অগ্রসর হন। হেরা গুহায় দিন-রাত আল্লাহর সাহায্য কামনায় রত মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহর মধ্যে আমরা সেই নিদর্শন দেখতে পাই। বর্তমান যুগে আর ‘অহি’ নাযিল হবে না। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া কুরআন ও সুন্নাহ মুমিনকে সর্বদা জান্নাতের পথ দেখাবে।
(৫) রক্ত, বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল প্রভৃতি জাতি গঠনের অন্যতম উপাদান হ’লেও মূল উপাদান নয়। বরং ধর্মবিশ্বাস হ’ল জাতি গঠনের মূল উপাদান। আর সেকারণেই একই বংশের হওয়া সত্ত্বেও আবু লাহাব ও আবু জাহল হয়েছিল রাসূল (ছাঃ)-এর রক্তপিপাসু দুশমন। অথচ ভিনদেশী ও ভিন রক্ত-বর্ণ ও অঞ্চলের লোক হওয়া সত্ত্বেও ছুহায়েব রূমী ও বেলাল হাবশী হয়েছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর বন্ধু। সেকারণ মযবুত সংগঠনে ও জাতি গঠনে আক্বীদাই হ’ল সবচেয়ে বড় উপাদান।
(৬) আল্লাহর পথের পথিকগণ শত নির্যাতনেও আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হন না। জান্নাতের বিনিময়ে তারা দুনিয়াবী কষ্ট ও দুঃখকে তুচ্ছ জ্ঞান করেন। মক্কার নির্যাতিত অসহায় মুসলমানদের অবস্থা বিশেষ করে বেলাল, খাববাব ও ইয়াসির পরিবারের লোমহর্ষক নির্যাতনের কাহিনী যেকোন মানুষকে তাড়িত করে।
(৭) ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ নেতৃবৃন্দ সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উপর ভরসা করেন এবং ইসলামের স্বার্থে প্রয়োজন বোধ করলে আল্লাহ তাদের রক্ষা করেন। যেমন হিজরতের পথে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে রক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন, মুমিনদের রক্ষা করাই তাঁর কর্তব্য’ (রূম ৩০/৪৭; ইউনুস ১০/১০৩)।
(৮) কায়েমী স্বার্থবাদী নেতৃত্ব কখনোই সংস্কারের বাণীকে সহ্য করতে পারে না। তারা অহংকারে ফেটে পড়ে এবং নিজেদের চালু করা মনগড়া রীতি-নীতির উপরে যিদ ও হঠকারিতা করে’ (বাক্বারাহ ২/২০৬)। যেমন ইতিপূর্বে মূসার বিরুদ্ধে ফেরাঊন তার লোকদের বলেছিল, ‘আমি তোমাদেরকে কেবল কল্যাণের পথই দেখিয়ে থাকি’ (মুমিন/গাফের ৪০/২৯)। অথচ তা ছিল জাহান্নামের পথ এবং মূসার পথ ছিল জান্নাতের পথ।
মাক্কী জীবন সমাপ্ত
تمت الحياة المكية بالخير