নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
বায়‘আতের কথা শয়তান ফাঁস করে দিল (الشيطان يكتشف تقرير البيعة)

ইবলীস শয়তান এই বায়‘আতের সুদূরপ্রসারী ফলাফল বুঝতে পেরে দ্রুত পাহাড়ের উপরে উঠে তার স্বরে আওয়ায দিল। يَا أَهْلَ الْجُبَاجِبِ هَلْ لَكُمْ فِي مُذَمَّمٍ وَالصُّبَاةُ مَعَهُ، قَدْ أَجْمَعُوا عَلَى حَرْبِكُمْ ‘হে বড় বড় তাঁবুওয়ালারা! মুযাম্মাম ও তার সাথী ধর্মত্যাগীদের ব্যাপারে তোমাদের কিছু করার আছে কি? তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়েছে’। রাবী কা‘ব বিন মালেক (রাঃ) বলেন, এরূপ দূরবর্তী আওয়ায আমরা ইতিপূর্বে কখনো শুনিনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, هَذَا أَزَبُّ الْعَقَبَةِ عَدُوَّ اللهِ، أَمَا وَاللهِ لَأَفْرُغَنَّ لَكَ ‘এটা সুড়ঙ্গের শয়তান। হে আল্লাহর দুশমন। অতি সত্বর আমি তোর জন্য বেরিয়ে পড়ছি’। একথা শুনে আববাস বিন উবাদাহ বিন নাযালাহ (রাঃ) বলে উঠলেন, وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ إِنْ شِئْتَ لَنَمِيلَنَّ عَلَى أَهْلِ مِنًى غَدًا بِأَسْيَافِنَا ‘হে আল্লাহর রাসূল! সেই সত্তার কসম করে বলছি যিনি আপনাকে সত্য সহ প্রেরণ করেছেন, আপনি চাইলে আগামীকালই আমরা মিনাবাসীদের উপরে তরবারি নিয়ে হামলা চালাব’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, لَمْ أُؤْمَرْ بِذَلِكَ ‘আমি সেজন্য আদিষ্ট হইনি’। তোমরা স্ব স্ব তাঁবুতে ফিরে যাও।[1] অতঃপর সকলে স্ব স্ব তাঁবুতে ফিরে গেল।

শয়তানের এই তির্যক কণ্ঠ কুরায়েশ নেতাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করার সাথে সাথে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে গেল। ফলে সকালে উঠেই তাদের একদল নেতা এসে ইয়াছরেবী কাফেলার লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল। তারা বলল, হে খাযরাজের লোকেরা! তোমরা নাকি আমাদের লোকটাকে বের করে নিয়ে যেতে চাচ্ছ এবং আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সংকল্প করেছ? আল্লাহর কসম! আমাদের সাথে তার যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের নিকট তোমাদের চাইতে বড় বিদ্বেষী আর কেউ নেই’। কা‘ব বলেন, একথা শুনে আমাদের কওমের মুশরিক নেতারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং আল্লাহর নামে কসম করে বলেন যে, এরূপ কিছুই এখানে ঘটেনি এবং আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানিনা’। কেননা আমরা যা করেছিলাম, তা তারা জানতেন না। ফলে আমরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলাম। তারা খাযরাজ নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কাছেও গেলেন। কিন্তু তিনিও একইরূপ জবাব দিলেন।[2] ইবনু ইসহাকের অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, কুরায়েশ নেতারা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হ’তে না পেরে পুনরায় এলেন। তখন কাফেলা মদীনার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সা‘দ বিন ওবাদাহ ও মুনযির বিন ‘আমর পিছনে পড়ে যান। তারা উভয়ে নক্বীব (আনছার নেতা) ছিলেন। পরে মুনযির দ্রুত এগিয়ে গেলে সা‘দ ধরা পড়ে যান। কুরায়েশরা তাকে পিছনে শক্ত করে দু’হাত বেঁধে মক্কায় নিয়ে আসে। কিন্তু মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী ও হারেছ বিন হারব বিন উমাইয়া এসে তাঁকে ছাড়িয়ে নেন। কেননা তাদের বাণিজ্য কাফেলা মদীনার পথে সা‘দের আশ্রয়ে থেকে যাতায়াত করত। এদিকে যখন ইয়াছরেবী কাফেলা তাঁর মুক্তির ব্যাপারে পরামর্শ বৈঠক করছিল, ওদিকে তখন সা‘দ নিরাপদে তাদের নিকটে পৌঁছে গেলেন। অতঃপর তারা সকলে নির্বিঘ্নে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলেন।[3] এরপর থেকে তারা শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর হিজরতের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে থাকেন।

[1]. আহমাদ হা/১৫৮৩৬, সনদ হাসান; ইবনু হিশাম ১/৪৪৭।

[2]. আহমাদ হা/১৫৮৩৬; ইবনু হিশাম ১/৪৪৮।

[3]. ইবনু হিশাম ১/৪৪৯-৫০; সীরাহ ছহীহাহ ১/১৯৮-২০১।