নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
খাদীজা (রাঃ)-এর মৃত্যু (وفاة خديجة রামাযান ১০ম নববী বর্ষ)

স্নেহশীল চাচা আবু ত্বালিবের মৃত্যুর অনধিক তিন মাস পরে দশম নববী বর্ষের রামাযান মাসে প্রাণাধিক প্রিয়া স্ত্রী খাদীজাতুল কুবরা ‘তাহেরা’-র মৃত্যু হয় (আর-রাহীক্ব ১১৬ পৃঃ)। তবে ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, আবু ত্বালিবের মৃত্যুর তিন দিন পরে খাদীজার মৃত্যু হয় (যাদুল মা‘আদ ৩/২৮)। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর এবং রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ছিল ৫০ বছর।

দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ বয়কটকালীন নিদারুণ কষ্ট অবসানের মাত্র ৬ মাসের মাথায় চাচা, অতঃপর স্ত্রীকে হারিয়ে শত্রু পরিবেষ্টিত ও আশ্রয়হারা নবীর অবস্থা কেমন হয়েছিল, তা চিন্তাশীল মাত্রই বুঝতে পারেন। চাচা আবু তালেব ছিলেন সামাজিক জীবনে রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য ঢাল স্বরূপ। অন্যদিকে পারিবারিক ও অর্থনৈতিক জীবনে খাদীজা ছিলেন তাঁর বিশ্বস্ততম নির্ভরকেন্দ্র। দাম্পত্য জীবনের পঁচিশ বছর সেবা ও সাহচর্য দিয়ে, বিপদে শক্তি ও সাহস যুগিয়ে, অভাব-অনটনে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে, হেরা গুহায় নিঃসঙ্গ ধ্যান ও সাধনাকালে অকুণ্ঠ সহমর্মিতা দিয়ে, নতুনের শিহরণে ভীত-চকিত রাসূলকে অনন্য সাধারণ প্রেরণা, উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে, অতুলনীয় প্রেম, ভালবাসা ও সহানুভূতি দিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনে তিনি ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক জীবন্ত নে‘মত স্বরূপ। তিনি ছিলেন শেষ সন্তান ইবরাহীম ব্যতীত রাসূল (ছাঃ)-এর সকল সন্তানের মা। তিনি ছিলেন বিশ্বসেরা চারজন সম্মানিতা মহিলার অন্যতম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَفْضَلُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ خَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَفَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ وَمَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَآسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ ‘জান্নাতী মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হ’লেন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাঊনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুযাহিম’। [1]

খাদীজা (রাঃ) ছিলেন সেই মহীয়সী মহিলা যাকে জিব্রীল নিজের পক্ষ হ’তে ও আল্লাহর পক্ষ হ’তে রাসূল (ছাঃ)-এর মাধ্যমে তাঁকে সালাম দেন এবং জান্নাতে তাঁর জন্য বিশেষভাবে নির্মিত মুক্তাখচিত প্রাসাদের সুসংবাদ দেন।[2]

তিনিই একমাত্র স্ত্রী যার জীবদ্দশায় রাসূল (ছাঃ) অন্য কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি এবং তার মৃত্যুর পরেও আজীবন রাসূল (ছাঃ) তাকে বারবার স্মরণ করেছেন। অন্য স্ত্রীদের সামনে অকুণ্ঠচিত্তে তার প্রশংসা করেছেন। এমনকি তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে খাদীজার বান্ধবীদের কাছে উপঢৌকন পাঠাতেন।[3]

[1]. আহমাদ হা/২৬৬৮, সনদ ছহীহ; তিরমিযী হা/৩৮৭৮; মিশকাত হা/৬১৮১।

[2]. বুখারী হা/১৭৯২, ৩৮২০; মুসলিম হা/২৪৩৩; মিশকাত হা/৬১৭৬।

[3]. বুখারী হা/৩৮১৮; মুসলিম হা/২৪৩৫; মিশকাত হা/৬১৭৭।