নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
তৃতীয়বার আবু তালিবের নিকট আগমন (المرة الثالثة ১০ম নববী বর্ষ)

হুমকি, লোভনীয় প্রস্তাব ও বয়কট কোনটাতে কাজ না হওয়ায় এবং ইতিমধ্যে আবু তালিবের স্বাস্থ্যহানির খবর শুনে মক্কার নেতারা তৃতীয়বার তাঁর সাথে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নেন। সেমতে আবু জাহল, আবু সুফিয়ান, উমাইয়া বিন খালাফ, ওৎবা ও শায়বা বিন রাবী‘আহ সহ প্রায় ২৫ জন নেতা আবু তালেবের কাছে আসেন এবং বলেন, হে আবু তালেব! আপনি যে মর্যাদার আসনে আছেন, তা আপনি জানেন। আপনার বর্তমান অবস্থাও আপনি বুঝতে পারছেন। আমরা আপনার জীবনাশংকা করছি। এমতাবস্থায় আপনি ভালভাবে জানেন যা আমাদের ও আপনার ভাতিজার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। এক্ষণে আপনি তাকে ডাকুন এবং উভয় পক্ষে অঙ্গীকার নিন যে, সে আমাদের ও আমাদের দ্বীন থেকে বিরত থাকবে এবং আমরাও তার থেকে বিরত থাকব। তখন আবু তালেব রাসূল (ছাঃ)-কে ডাকালেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাদের সম্মুখে এসে বললেন, نَعَمْ كَلِمَةٌ وَاحِدَةٌ تُعْطُونِيهَا تَمْلِكُونَ بِهَا الْعَرَبَ، وَتَدِينُ لَكُمْ بِهَا الْعَجَمُ ‘হ্যাঁ, একটি কালেমার ওয়াদা আপনারা আমাকে দিন। তাতে আপনারা আরবের বাদশাহী পাবেন এবং অনারবরা আপনাদের অনুগত হবে’। আবু জাহ্ল খুশী হয়ে বলে উঠল, তোমার পিতার কসম, এমন হলে একটা কেন দশটা কালেমা পাঠ করতে রাযী আছি। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, تَقُولُونَ: لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ، وَتَخْلَعُونَ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ- ‘আপনারা বলুন, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’। আর তাঁকে ছাড়া অন্য যাদের পূজা করেন, সব পরিত্যাগ করুন’।

তখন তারা দু’হাতে তালি বাজিয়ে বলে উঠলো أَتُرِيدُ يَا مُحَمَّدُ أَنْ تَجْعَلَ الْآلِهَةَ إلَهًا وَاحِدًا، إنَّ أَمْرَكَ لَعَجَبٌ! ‘হে মুহাম্মাদ! সব উপাস্য বাদ দিয়ে তুমি একজন উপাস্য চাও? নিশ্চয়ই তোমার এ বিষয়টি বড়ই বিস্ময়কর!’ এরপর তারা পরস্পরে বলল, وَاللهِ مَا هَذَا الرَّجُلُ بِمُعْطِيْكُمْ شَيْئًا مِمَّا تُرِيدُوْنَ ‘আল্লাহর কসম! এই ব্যক্তি তোমাদের কিছুই দিবে না, যা তোমরা চাচ্ছ। অতএব فَانْطَلِقُوا وَامْضُوا عَلَى دِينِ آبَائِكُمْ، حَتَّى يَحْكُمَ اللهُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ- ‘চলো! তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার ধর্মের উপরে চলতে থাক, যতক্ষণ না আল্লাহ তোমাদের ও তার মধ্যে একটা ফায়ছালা করে দেন’। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সূরা ছোয়াদের ১ হতে ৭ আয়াতগুলি নাযিল করেন।-

ص، وَالْقُرْآنِ ذِي الذِّكْرِ- بَلِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ عِزَّةٍ وَّشِقَاقٍ- كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِم مِّنْ قَرْنٍ فَنَادَوْا وَلاَتَ حِيْنَ مَنَاصٍ- وَعَجِبُوْا أَنْ جَاءَهُمْ مُّنْذِرٌ مِّنْهُمْ وَقَالَ الْكَافِرُوْنَ هَذَا سَاحِرٌ كَذَّابٌ- أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهاً وَاحِداً إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ- وَانْطَلَقَ الْمَلاَ مِنْهُمْ أَنِ امْشُوْا وَاصْبِرُوْا عَلَى آلِهَتِكُمْ إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ يُرَادُ- مَا سَمِعْنَا بِهَذَا فِيْ الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ إِنْ هَذَا إِلاَّ اخْتِلاَقٌ- (ص 1-7)-

(১) ছোয়াদ- শপথ উপদেশপূর্ণ কুরআনের (২) বরং কাফেররা অহমিকা ও হঠকারিতায় লিপ্ত (৩) তাদের পূর্বেকার কত জনগোষ্ঠীকে আমরা ধ্বংস করেছি। তারা আর্তনাদ করেছে। কিন্তু বাঁচার কোন উপায় তাদের ছিল না (৪) তারা বিস্ময়বোধ করে যে, তাদের কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন সতর্ককারী আগমন করেছেন। আর কাফেররা বলে এতো একজন জাদুকর ও মহা মিথ্যাবাদী (৫) সে কি বহু উপাস্যের বদলে একজন উপাস্যকে সাব্যস্ত করে? নিশ্চয়ই এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার (৬) তাদের নেতারা একথা বলে চলে যায় যে, তোমরা তোমাদের উপাস্যদের পূজায় অবিচল থাকো। নিশ্চয়ই (মুহাম্মাদের) এ বক্তব্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত (৭) আমরা তো পূর্বেকার ধর্মে এরূপ কোন কথা শুনিনি। এটা মনগড়া উক্তি বৈ কিছু নয়’ (ছোয়াদ ৩৮/১-৭)।[1]

[1]. ইবনু হিশাম ১/৪১৭-১৮; তিরমিযী হা/৩২৩২, তাফসীর অধ্যায় সূরা ছোয়াদ; হাকেম হা/৩৬১৭, ২/৪৩২ পৃঃ, সনদ ছহীহ।