নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
১১. বিভিন্ন অপযুক্তি প্রদর্শন (إظهار الحجج الغير المعقولة)

যেমন- (ক) আল্লাহ প্রেরিত রাসূল হ’লে উনি কখনো মানুষের মত খাওয়া-দাওয়া ও বাজার-ঘাট করতেন না। আল্লাহ বলেন,وَقَالُوا مَالِ هَذَا الرَّسُوْلِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِي فِي الْأَسْوَاقِ لَوْلاَ أُنزِلَ إِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُونَ مَعَهُ نَذِيراً ‘তারা বলে, এ কেমন রাসূল যে খাদ্য ভক্ষণ করে ও হাট-বাজারে চলাফেরা করে? কেন তার নিকটে ফেরেশতা নাযিল হ’ল না যে তার সাথে সর্বদা সতর্ককারী হিসাবে থাকত’ (ফুরক্বান ২৫/৭)।[1] জবাবে আল্লাহ বলেন,وَلَوْ جَعَلْنَاهُ مَلَكاً لَّجَعَلْنَاهُ رَجُلاً وَلَلَبَسْنَا عَلَيْهِم مَّا يَلْبِسُونَ ‘যদি আমরা কোন ফেরেশতাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের আকারেই হ’ত এবং তাকে ঐ ধরনের পোষাক পরাতাম, যা তারা পরিধান করে’ (আন‘আম ৬/৯)। তিনি বলেন,اُنْظُرْ كَيْفَ ضَرَبُوْا لَكَ الْأَمْثَالَ فَضَلُّوْا فَلاَ يَسْتَطِيْعُوْنَ سَبِيْلاً ‘দেখ ওরা কিভাবে তোমার নামে (বাজে) উপমা সমূহ প্রদান করছে। ওরা পথভ্রষ্ট হয়েছে। অতএব ওরা আর পথ পেতে সক্ষম হবে না’ (ইসরা/বনু ইস্রাঈল ১৭/৪৮; ফুরক্বান ২৫/৯)

(খ) তারা বলল, যদি নিতান্তই কোন মানুষকে নবী করার ইচ্ছা ছিল, তাহ’লে মক্কা ও ত্বায়েফের বিত্তবান প্রভাবশালী কোন নেতাকে কেন নবী করা হ’ল না? যেমন আল্লাহ বলেন,وَقَالُوْا لَوْلاَ نُزِّلَ هَذَا الْقُرْآنُ عَلَى رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيْمٍ ‘তারা বলে, কুরআন কেন দুই জনপদের কোন প্রধান ব্যক্তির উপরে অবতীর্ণ হ’ল না? (যুখরুফ ৪৩/৩১)। জবাবে আল্লাহ বলেন,أَهُمْ يَقْسِمُوْنَ رَحْمَةَ رَبِّكَ ‘তারা কি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ বণ্টন করবে? (যুখরুফ ৪৩/৩২)। অর্থাৎ আল্লাহ কাকে অনুগ্রহ করে নবুঅত দান করবেন এটা কেবল তাঁরই এখতিয়ার। এতে অন্যদের কিছুই করার নেই।

(গ) কোন যুক্তিতে কাজ না হওয়ায় অবশেষে তারা অজুহাত দিল, যদি আল্লাহ চাইতেন, তাহ’লে আমরা শিরক করতাম না। যেমন আল্লাহ বলেন,

سَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ أَشْرَكُواْ لَوْ شَآء اللهُ مَا أَشْرَكْنَا وَلاَ آبَاؤُنَا وَلاَ حَرَّمْنَا مِن شَيْءٍ كَذَلِكَ كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِم حَتَّى ذَاقُوا بَأْسَنَا قُلْ هَلْ عِندَكُم مِّنْ عِلْمٍ فَتُخْرِجُوهُ لَنَا إِن تَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ وَإِنْ أَنتُمْ إَلاَّ تَخْرُصُوْنَ- (الأنعام ১৪৮)-

‘সত্বর মুশরিকরা বলবে, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহ’লে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ-দাদারা। আর না আমরা কোন বস্ত্তকে হারাম করতাম। বস্ত্ততঃ এভাবেই তাদের পূর্ব যুগের কাফিররা (রাসূলদের) মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল। অবশেষে তারা আমাদের শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করেছিল। তুমি বল, তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে, যা আমাদের দেখাতে পার? তোমরা কেবল ধারণার অনুসরণ কর এবং কেবল অনুমান ভিত্তিক কথা বলে থাক’ (আন‘আম ৬/১৪৮)। বস্ত্ততঃ এ আয়াতটিই হ’ল অদৃষ্টবাদী ভ্রান্ত ফের্কা জাবরিয়াদের প্রধান দলীল। অথচ বান্দা শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হউক, এটা কখনোই আল্লাহ চান না। যেমন তিনি বলেন,وَلاَ يَرْضَى لِعَبِادِهِ الْكُفْرَ ‘তিনি তার বান্দাদের কুফরীতে সন্তুষ্ট হন না’ (যুমার ৩৯/৭)

[1]. কাফের নেতাদের ধন্যবাদ দিতে হয় যে, তাদের মাথায় রাসূল (ছাঃ)-কে ‘নূর’ বলার যুক্তিটির উদয় হয়নি। কেননা ‘নূর’ হ’লে তার খাওয়া-পরা ও বাজার-ঘাট কিছুই লাগে না। যেমন একদল পীর ও মুফতী তাঁকে ‘নূর’ বানিয়েছেন এবং ‘তিনি মরেননি’ বলে প্রচার করেন। সেই সাথে ‘আওলিয়ারা মরেন না’ বলে চুটিয়ে কবরপূজার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে স্বাধীন মানুষকে তারা মৃত মানুষের গোলামে পরিণত করেছেন। আর ভক্তদের পকেট ছাফ করছেন।