তার স্ত্রী ছিলেন আবু সুফিয়ানের বোন আরওয়া (أروى) অথবা ‘আওরা’ (العوراء) ওরফে উম্মে জামীল বা ‘সুন্দরের উৎস’। তবে একচক্ষু দৃষ্টিহীন হওয়ায় ইবনুল ‘আরাবী উক্ত মহিলাকে ‘আওরা উম্মে ক্বাবীহ’(عوراء ام قبيح) ‘এক চক্ষু সকল নষ্টের মূল’ বলেন’ (কুরতুবী)। তিনিও স্বামীর অকপট সহযোগী ছিলেন এবং সর্বদা রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে গীবত-তোহমত ও নিন্দাবাদে মুখর থাকতেন। চোগলখুরী ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে সংসারে বা সমাজে অশান্তির আগুন ধরিয়ে দেওয়া ব্যক্তিকে আরবদের পরিভাষায়حَمَّالَةُ الْحَطَبِ ইন্ধন বহনকারী বা ‘খড়িবাহক’ বলা হ’ত। অর্থাৎ ঐ শুষ্ককাঠ যাতে আগুন লাগালে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আবু লাহাবের স্ত্রী একাজটিই করতেন পিছনে থেকে। সেকারণ আল্লাহ তাকেও স্বামীর সাথে জাহান্নামে প্রেরণ করবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে হেন অপপ্রচার নেই, যা আবু লাহাব ও তার স্ত্রী করতেন না।
তার স্ত্রী উম্মে জামীল রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে নানাবিধ দুষ্কর্মে পটু ছিলেন। তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর যাতায়াতের পথে বা তাঁর বাড়ীর দরজার মুখে কাঁটা বিছিয়ে বা পুঁতে রাখতেন। যাতে রাসূল (ছাঃ) কষ্ট পান। তিনি ছিলেন কবি। ফলে নানা ব্যঙ্গ কবিতা পাঠ করে তিনি লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলতেন। সূরা লাহাব নাযিল হ’লে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উক্ত মহিলা হাতে প্রস্তরখন্ড নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে মারার উদ্দেশ্যে কা‘বা চত্বরে গমন করেন। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় রাসূল (ছাঃ) সামনে থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁকে দেখতে পাননি’।[1] তাই পাশে দাঁড়ানো আবুবকরের কাছে তার মনের ঝাল মিটিয়ে কুৎসাপূর্ণ কবিতা বলে ফিরে আসেন। উক্ত কবিতায় তিনি ‘মুহাম্মাদ’ (প্রশংসিত) নামকে বিকৃত করে ‘মুযাম্মাম’ (নিন্দিত) বলেন। যেমন-مُذَمَّمًا عَصَيْنَا + وَأَمْرَهُ أَبَيْنَا + وَدِيْنَهُ قَلَيْنَا ‘নিন্দিতের আমরা অবাধ্যতা করি’। ‘তার নির্দেশ আমরা অমান্য করি’। ‘তার দ্বীনকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি’।[2]
[2]. ইবনু হিশাম ১/৩৫৬; হাকেম হা/৩৩৭৬, ২/৩৬১ সনদ ছহীহ; আলবানী, ছহীহ সীরাহ নববিইয়াহ ১৩৭ পৃঃ; তাফসীর কুরতুবী, ইবনু কাছীর; সীরাহ ছহীহাহ ১/১৪৭।