নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

যেকোন সংস্কার আন্দোলনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন আক্বীদার মযবুতী। আর এই মযবুতীর জন্য চাই নিয়মিত আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ। যা সর্বদা সংস্কারককে তার আদর্শমূলে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে। সেকারণ অধ্যাত্ম সাধনার প্রাথমিক কাজ হিসাবে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে নবুঅতের শুরু থেকেই সকাল ও সন্ধ্যায় দু’বার ছালাত আদায়ের নির্দেশনা দান করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ ‘তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা জ্ঞাপন কর সন্ধ্যায় ও সকালে’ (মুমিন/গাফের ৪০/৫৫)

প্রথম কুরআন নাযিলের পর জিব্রীলের মাধ্যমে তিনি ওযূ ও ছালাত শিখেন।[1] হিজরতের স্বল্পকাল পূর্বে মে‘রাজ সংঘটিত হবার আগ পর্যন্ত ফজরের দু’রাক‘আত ও আছরের দু’রাক‘আত করে ছালাত আদায়ের নিয়ম জারী থাকে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, শুরুতে ছালাত বাড়ীতে ও সফরে ছিল দু’ দু’ রাক‘আত করে।[2] এছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য ‘অতিরিক্ত’ (نَافِلَةً) ছিল তাহাজ্জুদের ছালাত (ইসরা/বনু ইস্রাঈল ১৭/৭৯)। সেই সাথে ছাহাবীগণও নিয়মিতভাবে রাত্রির নফল ছালাত আদায় করতেন।[3] অতঃপর মি‘রাজের রাত্রিতে নিয়মিতভাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করা হয়।[4] উল্লেখ্য যে, পূর্বেকার সকল নবীর সময়ে ছালাত, ছিয়াম ও যাকাত ফরয ছিল। তবে সেসবের ধরন ও পদ্ধতি ছিল কিছুটা পৃথক।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর সাথীগণ প্রথম দিকে গোপনে এই ছালাত আদায় করতেন এবং লোকদেরকে গাছ, পাথর, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদির উপাসনা পরিত্যাগ করে আল্লাহর ইবাদত শিক্ষা দিতেন। তিনি কখনো কখনো সাথীদের নিয়ে পাহাড়ের গুহাতে গোপনে ছালাত আদায় করতেন। একদিন আবু ত্বালিব স্বীয় পুত্র আলী ও ভাতিজা মুহাম্মাদকে এটা আদায় করতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করেন। সবকিছু শুনে বিষয়টির আধ্যাত্মিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে তিনি তাদেরকে উৎসাহিত করেন।[5]

উর্দূ কবি বলেন,

ہوا كو پهرانا دشور ، موج كو الٹانا دشور

ليكن اتنا نہ جتنا، بهٹكى ہوئى قوم كو راه پر لانا دشور

‘বায়ু প্রবাহ ফিরানো কঠিন, স্রোতকে উল্টানো কঠিন’। ‘কিন্তু অত কঠিন নয়, যত না কঠিন একটা পথভ্রষ্ট জাতিকে সুপথে ফিরিয়ে আনা’।

[1]. আহমাদ হা/১৭৫১৫, দারাকুৎনী হা/৩৯৯, মিশকাত হা/৩৬৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায় ৩ অনুচ্ছেদ; ছহীহাহ হা/৮৪১।

[2]. মুসলিম হা/৬৮৫; আবুদাঊদ হা/১১৯৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১১।

[3]. মুযযাম্মিল ৭৩/২০; তাফসীরে কুরতুবী।

[4]. বুখারী হা/৩২০৭; মুসলিম হা/১৬২; মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ-৬।

[5]. ইবনু হিশাম ১/২৪৬-৪৭। তবে বর্ণনাটির সূত্র যঈফ; মাজদী ফাৎহী সাইয়িদ, তাহকীক ইবনু হিশাম (দারুছ ছাহাবা লিত তুরাছ, তান্তা, কায়রো, ১ম সংস্করণ ১৪১৬ হিঃ/১৯৯৫ খৃঃ) ক্রমিক ২৪৫।