মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ১ম হস্তীবর্ষের ৯ই রবীউল আউয়াল[1] সোমবার ছুবহে ছাদিকের পর মক্কায় নিজ পিতৃগৃহে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১১ হিজরী সনের ১লা রবীউল আউয়াল সোমবার সকাল ১০টার দিকে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন।
রাসূল (ছাঃ)-এর জন্ম ও মৃত্যু দু’টিই সোমবারে হয়েছিল’।[2] বিদায় হজ্জ হয়েছিল ৯ই যিলহজ্জ শুক্রবার। তিনি বিদায় হজ্জের পরে ৮০ বা ৮১ দিন বেঁচে ছিলেন। কেউ বলেছেন ৯০ বা ৯১ দিন (এটা ভুল)। আবু মিখনাফ ও কালবী ওফাতের তারিখ ২রা রবীউল আউয়াল বলেছেন। ইবনু হিশামের ভাষ্যকার সুহায়লী সেটাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ইবনু হাজার বলেন,
فَالْمُعْتَمَدُ مَا قَالَ أَبُو مِخْنَفٍ وَكَأَنَّ سَبَبَ غَلَطِ غَيْرِهِ أَنَّهُمْ قَالُوا مَاتَ فِي ثَانِي شَهْرِ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ فَتَغَيَّرَتْ فَصَارَتْ ثَانِي عَشَرَ وَاسْتَمَرَّ الْوَهْمُ بِذَلِكَ يَتْبَعُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا مِنْ غَيْرِ تَأَمُّلٍ
‘আবু মিখনাফ যেটি বলেছেন, সেটিই নির্ভরযোগ্য। অন্যদের ভুলের কারণ সম্ভবতঃ এটাই যে, তারা বলেছিলেন, রাসূল (ছাঃ) ২রা রবীউল আউয়াল মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু পরে সেটি পরিবর্তিত হয়ে ১২ই রবীউল আউয়াল হয়ে গেছে। পরবর্তীতে লোকেরা কোনরূপ চিন্তা-ভাবনা না করেই উক্ত ভুলের অনুসরণ করে গেছেন’।[3] অর্থাৎ ثَانِي شَهْرِ رَبِيعٍ الْأَوَّل পরে ثَانِي عَشَرَ হয়ে গেছে’। তবে এটি মক্কার চাঁদের হিসাবে হ’তে পারে। কেননা মক্কার চাঁদ মদীনার একদিন আগে ওঠে (আল-বিদায়াহ ৫/২২৪-২৫)। অতএব মদীনার হিসাবে ১লা রবীউল আউয়াল ওফাতের দিন হবে। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
সুলায়মান মানছূরপুরীর হিসাব মতে সৌরবর্ষ হিসাবে রাসূল (ছাঃ)-এর জন্ম ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে এপ্রিল সোমবার এবং মৃত্যু ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই জুন সোমবার। চান্দ্রবর্ষ হিসাবে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর ৪দিন এবং সৌরবর্ষ হিসাবে ৬১ বছর ১ মাস ১৪ দিন। তাঁর জন্ম হয়েছিল আবরাহা কর্তৃক কা‘বা আক্রমণের ৫০ দিন পরে (ইবনু হিশাম ১/১৫৮-টীকা ৪)। এটা ছিল ইবরাহীম (আঃ) থেকে ২৫৮৫ বছর ৭ মাস ২০ দিন পরে এবং নূহ (আঃ)-এর প্লাবনের ৩৬৭৫ বছর পরের ঘটনা। রাসূল (ছাঃ) দুনিয়াতে বেঁচে ছিলেন মোট ২২,৩৩০ দিন ৬ ঘণ্টা। তন্মধ্যে তাঁর নবুঅতকাল ছিল ৮১৫৬ দিন।[4] সঠিক হিসাব আল্লাহ জানেন।
তাঁর জন্মের কাহিনীতে প্রসিদ্ধ আছে যে, (১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খাৎনাকৃত ও নাড়ী কাটা অবস্থায় ভূমিষ্ট হন। (২) কেউ তার লজ্জাস্থান দেখেনি। (৩) শৈশবে বক্ষবিদারণের দিন জিব্রীল তাঁর খাৎনা করেন (যঈফাহ হা/৬২৭০)। (৪) জান্নাত থেকে আসিয়া ও মারিয়াম নেমে এসে ধাত্রীর কাজ করেন। (৫) আবু লাহাব মৃত্যুর পরে তার পরিবারের কোন একজনকে (বলা হয়ে থাকে, আববাসকে) স্বপ্ন দেখান। তাকে বলা হয় আপনার অবস্থা কি? তিনি বলেন, আমি জাহান্নামে। তবে প্রতি সোমবার আমার আযাব হালকা করা হয় এবং আমার এই দুই আঙ্গুল থেকে পানি চুষে পান করি। আর এটা এ কারণে যে, নবী (ছাঃ)-এর জন্মের সুসংবাদ দানের ফলে আমি আমার দাসী ছুয়াইবাহকে মুক্ত করে দেই এবং সে নবীকে দুধ পান করায়।
উল্লেখ্য যে, আবু লাহাব ২য় হিজরীতে সংঘটিত বদর যুদ্ধের সপ্তাহকাল পরে মারা যান। আববাস তখন কাফের ছিলেন এবং ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হন।
(৬) রাসূল প্রসবের সময় তার মা বলছেন যে, আমার গুপ্তাঙ্গ দিয়ে ‘নূর’ অর্থাৎ জ্যোতি বিকশিত হয়। যা শামে প্রাসাদ সমূহকে আলোকিত করেছিল। উম্মাহাতুল মুমিনীন যা স্বচক্ষে দেখেছিলেন। এটি ছিল ভবিষ্যতে শাম এলাকা ইসলামের আলোকে আলোকিত হওয়ার আগাম সুসংবাদ (৭) পারস্যের কিসরা রাজপ্রাসাদ কেঁপে উঠেছিল এবং তার ১৪টি চূড়া ভেঙ্গে পড়েছিল। আর এটি ছিল তাঁর ভবিষ্যৎ নবী হওয়ার অগ্রিম সুসংবাদ (৮) এ সময় মজূসীদের পূজার আগুন নিভে গিয়েছিল (৯) ইরাকের সাওয়া হ্রদের পানি শুকিয়ে গিয়েছিল এবং তার পার্শ্ববর্তী গীর্জাসমূহ ধ্বসে পড়েছিল ইত্যাদি (আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নাজদী, মুখতাছার সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) (রিয়াদ: ১ম সংস্করণ ১৪১৪/১৯৯৪ খৃঃ ১৮-২০ পৃঃ; মুবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম, কুয়েত : ২য় সংস্করণ ১৪১৬/১৯৯৬ খৃঃ ৫৪ পৃঃ)।
উল্লেখ্য যে, আর-রাহীক্বের বাংলা অনুবাদক ও সম্পাদকগণ তাঁদের অগণিত ভুল অনুবাদের মধ্যে ঐ সাথে এটাও যোগ করেছেন যে, (১০) ঐ সময় কা‘বাগৃহের ৩৬০টি মূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে’ (বঙ্গানুবাদ, আগস্ট ১৯৯৫, ১০১ পৃঃ; সেপ্টেম্বর ২০০৯, ৭৬ পৃঃ)। যেকথা মূল আরবী, পৃঃ ৫৪ এবং লেখক কর্তৃক অনূদিত উর্দূ সংস্করণ, লাহোর : নভেম্বর ১৯৮৮, পৃঃ ১০১-এ নেই)। বলা বাহুল্য, উপরে বর্ণিত সকল বর্ণনাই ভিত্তিহীন কল্পকথা মাত্র।
[2]. মুসলিম হা/১১৬২; মিশকাত হা/২০৪৫; বুখারী হা/১৩৮৭।
[3]. বিস্তারিত দ্রঃ ফাৎহুল বারী হা/৪৪২৬-এর পরে ‘রাসূল (ছাঃ)-এর অসুখ ও মৃত্যু’ অনুচ্ছেদ; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৫/২২৪-২৫; মোস্তফা চরিত ৮৬৭-৬৮ পৃঃ।
[4]. কাযী সুলায়মান বিন সালমান মানছূরপুরী (মৃ. ১৩৪৯/১৯৩০ খৃ:), রহমাতুল্লিল ‘আলামীন (দিল্লী : ১ম সংস্করণ ১৯৮০ খৃঃ) ২/১৬, ৩৬৮ পৃঃ; ১/৪০, ২৫১ পৃঃ।