নবী মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে বারবার বেআদবী ও অবাধ্যতার পরিণামে এবং আল্লাহর আয়াত সমূহকে অস্বীকার ও পরবর্তীতে নবীগণকে অন্যায় ভাবে হত্যার কারণে আল্লাহ তাদের উপরে চিরস্থায়ী গযব ও অভিসম্পাৎ নাযিল করলেন। আল্লাহ বলেন, وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَآؤُوْا بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ ‘আর তাদের উপরে লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা আরোপিত হ’ল এবং তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হ’ল’ (বাক্বারাহ ২/৬১)।
ইবনু কাছীর বলেন, এ লাঞ্ছনা ও অবমাননার প্রকৃতি হ’ল, ইহুদীরা সর্বদা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপরের দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ থাকবে। এ মর্মে সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ বলেন, ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ أَيْنَ مَا ثُقِفُواْ إِلاَّ بِحَبْلٍ مِّنَ اللهِ وَحَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ ‘তাদের উপরে লাঞ্ছনা আরোপিত হ’ল যেখানেই তারা অবস্থান করুক না কেন। তবে আল্লাহ প্রদত্ত ও মানব প্রদত্ত মাধ্যম ব্যতীত’ (আলে ইমরান ৩/১১২)। ‘আল্লাহ প্রদত্ত মাধ্যম’ বলতে বুঝানো হয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ নিজ চিরন্তন বিধান অনুযায়ী আশ্রয় ও অভয় দিয়েছেন। যেমন শিশু ও রমণীকুল এবং এমন সাধক ও উপাসকগণ, যারা যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে দূরে থাকেন। এরা নিরাপদে থাকবে। অতঃপর ‘মানব প্রদত্ত মাধ্যম’ হ’ল, অন্যের সাথে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ করা, যা মুসলমান বা অন্য যেকোন জাতির সাথে হ’তে পারে। যেমন বর্তমানে তারা আমেরিকা ও পাশ্চাত্য শক্তি বলয়ের সাথে গাটছড়া বেঁধে টিকে আছে।
ইহুদীদের উপর চিরস্থায়ী গযব নাযিলের ব্যাপারে সূরা আ‘রাফে আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَن يَّسُوْمُهُمْ سُوْءَ الْعَذَابِ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيْعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ- (الأعراف ১৬৭)-
‘স্মরণ কর সে সময়ের কথা, যখন তোমার প্রভু জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, নিশ্চয়ই তিনি তাদের (ইহুদীদের) উপরে প্রেরণ করতে থাকবেন ক্বিয়ামত পর্যন্ত এমন সব শাসক, যারা তাদের প্রতি পৌঁছাতে থাকবে কঠিন শাস্তিসমূহ। নিশ্চয়ই তোমার প্রভু দ্রুত বদলা গ্রহণকারী এবং নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আ‘রাফ ৭/১৬৭)।
উপরোক্ত আয়াত সমূহের আলোকে আমরা ইহুদীদের উপরে বিগত ও বর্তমান যুগের লাঞ্ছনা ও অবমাননার দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করতে পারি। তবে এখানে এতটুকু বলা আবশ্যক যে, হাযার বছর ধরে বসবাসকারী ফিলিস্তীনের স্থায়ী মুসলিম নাগরিকদের তাড়িয়ে দিয়ে ১৯৪৮ সাল থেকে বৃটেন, আমেরিকা, রাশিয়া প্রমুখ অশুভ শক্তি বলয়ের মাধ্যমে যবরদস্তিমূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত ‘ইস্রাঈল’ নামক রাষ্ট্র মূলতঃ কোন রাষ্ট্রই নয়। বরং মধ্যপ্রাচ্যের তৈলভান্ডার নিজেদের করায়ত্তে রাখার জন্য বৃহৎ শক্তিবর্গের বিশেষ করে আমেরিকা ও বৃটেনের ঘাঁটি বা অস্ত্রগুদাম মাত্র। বৃহৎ শক্তিগুলো হাত গুটিয়ে নিলে তারা একমাসও নিজের শক্তিতে টিকতে পারবে কি-না সন্দেহ। এতেই কুরআনী সত্য حَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ বা ‘মানব প্রদত্ত মাধ্যম’-এর বাস্তব রূপ প্রকাশিত হয়। ইনশাআল্লাহ এ মাধ্যমও তাদের ছিন্ন হবে এবং তাদেরকে এই পবিত্র ভূমি মুসলমানদের হাতে ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে অথবা ইসলাম কবুল করে শান্তিতে বসবাস করতে হবে।