নবীদের কাহিনী ১১. হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ভাইদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শনের তাৎপর্য

ইউসুফ ভাইদের উপরে কোনরূপ প্রতিশোধ নিতে চাননি। বরং তিনি চেয়েছিলেন তাদের তওবা ও অনুতাপ। সেটা তিনি যথাযথভাবেই পেয়েছিলেন। কেননা এই দশ ভাইও নবীপুত্র এবং তাদেরই একজন ‘লাভী’ (لاوى) -এর বংশের অধঃস্তন চতুর্থ পুরুষ হয়ে জন্ম নেন অন্যতম যুগশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মূসা (আঃ)।

বস্ত্ততঃ ইয়াকূব (আঃ)-এর উক্ত বারোজন পুত্রের বংশধারা হিসাবে বনু ইস্রাঈলের বারোটি গোত্র সৃষ্টি হয় এবং তাদের থেকেই যুগে যুগে জন্ম গ্রহণ করেন লক্ষাধিক নবী ও রাসূল। যাঁদের মধ্যে ছিলেন দাঊদ ও সুলায়মানের মত শক্তিধর রাষ্ট্রনায়ক, রাসূল ও নবী এবং বনু ইস্রাঈলের সর্বশেষ রাসূল হযরত ঈসা (আঃ)। অতএব বৈমাত্রেয় হিংসায় পদস্খলিত হ’লেও নবী রক্তের অন্যান্য গুণাবলী তাদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। ইউসুফ (আঃ) তাই তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে নিঃসন্দেহে বিরাট মহত্ত্ব ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে অর্থাৎ এই ঘটনার প্রায় আড়াই হাযার বছর পরে বনু ইসমাঈলের একমাত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর জানী দুশমন মক্কার কাফেরদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তিনিও সেদিন ইউসুফের ন্যায় একই ভাষায় বলেছিলেন, لاتثريبَ عليكمُ اليوم فاذهبوا وأَنتمُ الطُّلَقاءُ ‘তোমাদের প্রতি আজ কোন অভিযোগ নেই। যাও! তোমরা মুক্ত’। শুধু তাই নয়, কাফের নেতা আবু সুফিয়ানের গৃহে যে ব্যক্তি আশ্রয় নিবে, তাকেও তিনি ক্ষমা ঘোষণা করে বলেন, مَنْ دَخَلَ دَارَ أَبى سُفيانَ فهو آمِنٌ ‘যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়ীতে আশ্রয় নিবে, সে নিরাপদ থাকবে’।[30] তাতে ফল হয়েছিল এই যে, যারা ছিল এতদিন তাঁর রক্ত পিয়াসী, তারাই হ’ল এখন তাঁর দেহরক্ষী। মক্কা বিজয়ের মাত্র ১৯ দিন পরে হুনায়েন যুদ্ধে নওমুসলিম কুরায়েশদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং দু’বছর পরে আবুবকরের খেলাফতকালে ইয়ারমূকের যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের ও তার পুত্র ইয়াযীদের এবং আবু জাহ্ল-পুত্র ইকরিমার কালজয়ী ভূমিকা ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তাই বিদ্বেষী সৎ ভাইদের ক্ষমা করে দিয়ে ইউসুফ (আঃ) নবীসুলভ মহানুভবতা এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

ঘটনাটির কুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ:

اذْهَبُوا بِقَمِيصِي هَـذَا فَأَلْقُوهُ عَلَى وَجْهِ أَبِي يَأْتِ بَصِيراً وَأْتُونِي بِأَهْلِكُمْ أَجْمَعِينَ- وَلَمَّا فَصَلَتِ الْعِيرُ قَالَ أَبُوهُمْ إِنِّي لَأَجِدُ رِيحَ يُوسُفَ لَوْلاَ أَن تُفَنِّدُونِ- قَالُوا تَاللهِ إِنَّكَ لَفِي ضَلاَلِكَ الْقَدِيمِ- (يوسف ৯৩-৯৫)-

ইউসুফ তার ভাইদের বললেন, ‘তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও। এটি আমার পিতার চেহারার উপরে রেখো। এতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসবে। আর তোমাদের পরিবারবর্গের সবাইকে আমার কাছে নিয়ে আস’। ‘অতঃপর কাফেলা যখন রওয়ানা হ’ল, তখন (কেন‘আনে) তাদের পিতা বললেন, যদি তোমরা আমাকে অপ্রকৃতিস্থ না ভাবো, তবে বলি যে, আমি নিশ্চিতভাবেই ইউসুফের গন্ধ পাচ্ছি’। ‘লোকেরা বলল, আল্লাহর কসম! আপনি তো আপনার সেই পুরানো ভ্রান্তিতেই পড়ে আছেন’ (ইউসুফ ১২/৯৩-৯৫)

[30]. আর-রাহীকুল মাখতূম (কুয়েতঃ ১৪১৪/১৯৯৪), পৃঃ ৪০৫, ৪০১।